ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগকারীদের মরণফাঁদ মুন্নু সিরামিকের শেয়ার

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 বিনিয়োগকারীদের মরণফাঁদ  মুন্নু সিরামিকের শেয়ার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তিন বছর ধরে শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের পছন্দের শেয়ার মুন্নু সিরামিক। কারও কারও টাকা বানানোর যন্ত্র হিসেবে কোম্পানিটি ব্যবহৃত হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর বার বার মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি কারসাজির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর আগ্রহ হারানোর তালিকায় শীর্ষ স্থানটি দখল করে নেয় মুন্নু সিরামিক। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় সপ্তাহজুড়েই দাম কমে। এতে কোম্পানিটির শেয়ার দামে বড় ধরনের পতন হয়। দর কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির শেয়ার এখন ফোর্সড সেলের আওতায় চলেছে। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এদিকে দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দেয়। এতে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয় ৩৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন হয় ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। অপরদিকে শেয়ারের দাম কমেছে ৩০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৬৪ টাকা ৩০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৪৪ টাকা ৯০ পয়সায়, যা তার আগের সপ্তাহ শেষে ছিল ২০৯ টাকা ২০ পয়সা। এদিকে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার প্রমাণ পেয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির তদন্তে বেরিয়ে আসে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার লেনদেন ও আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম এবং কর্পোরেট ডিক্লারেশনের ক্ষেত্রে অনিয়ম করা হয়েছে। এ জন্য মুন্নু সিরামিকসের কর্পোরেট উদ্যোক্তা মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক শেয়ার বিক্রি সংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন ও ডিএসইর দাখিল করা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মুন্নু সিরামিকস, মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এনফোর্সমেন্ট বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একই সঙ্গে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার পাবলিক মার্কেট থেকে স্পট মার্কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মুন্নু সিরামিকসের শেয়ারের দাম ছিল ৪০ টাকার নিচে। চলতি বছরের ৩ মার্চ এর সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৪৪১ টাকা। সর্বোচ্চ দামে লেনদেনের সময় কোম্পানিটির কিছু মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ পায়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ভবিষ্যত স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে। আর কারসাজিকারীরা এবং মুন্নু সিরামিকস কর্তৃপক্ষ চড়া দামে তাদের শেয়ার বিক্রি করতে থাকে। তারপর চলে পতনের মহড়া। একপর্যায়ে চলতি বছরের ২১ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার দাম ১১৮ টাকায় নেমে আসে। যদিও ওইদিন ক্লোজিং দাম ছিল ১২৮ টাকা ৮০ পয়সা। কিছুদিন কোম্পানিটির শেয়ার দাম নিম্নদরে লেনদেনের পর আবারও শুরু হয় নতুন কারসাজি। দেড় মাসের কম সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২ সেপ্টেম্বর শেয়ার দাম ২৪৫ টাকার উপরে তোলা হয়। তবে বিএসইসির তদন্তের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমতে থাকে। দফায় দফায় চড়া দামে কেনা কোম্পানিটির শেয়ার এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুন্নু সিরামিকসের পরেই গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর তালিকায় ছিল আলহাজ টেক্সটাইল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২৫ দশমিক ১১ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জ। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- মুন্নু জুট স্টাফলার্সের ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, সায়হাম কটনের ১৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, কে এ্যান্ড কিউ’র ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ, জেমিনি সি ফুডের ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, স্টাইল ক্রাফটের ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওয়াটা কেমিক্যালের ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং সায়হাম টেক্সটাইলের ১৫ দশমিক ২৪ শতাংশ দাম কমেছে।
×