ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধরা পড়ল জালিয়াত চক্রের আরেক সদস্য ফারুক

ইসির গায়েব হওয়া আরও ল্যাপটপ ও মডেম উদ্ধার

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 ইসির গায়েব হওয়া  আরও ল্যাপটপ ও  মডেম উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রোহিঙ্গাদের ভোটার করার মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামির বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২টি ল্যাপটপ, মডেম, পেনড্রাইভ এবং আইডি কার্ড লেমিনেটিং সরঞ্জাম। এর মধ্যে ১টি নির্বাচন কমিশনের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ। এ নিয়ে হারানো ৭টি ল্যাপটপের মধ্যে ২টি উদ্ধার হলো। শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ পুলিশ কমিশনার মোঃ শহীদুল্লাহ। বৃহস্পতিবার রাতে মোস্তফা ফারুক (৩৬) নামের এ আসামিকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি টিম। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা একটি মামলায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে তার অপরাধের কথা স্বীকার করে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় ২টি ল্যাপটপ, ১টি মডেম, ১টি পেনড্রাইভ, ৩টি সিগনেচার প্যাড এবং আইডি কার্ড লেমিটেনিং সরঞ্জাম। নগরীর হামজারবাগের মোমিনবাগ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে এগুলো উদ্ধার হয়। গ্রেফতার মোস্তফা ফারুক নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম প্রকল্পের আউটসোসিং কর্মচারী ছিল। নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রাম জেলা অফিস থেকে ল্যাপটপ ও সরঞ্জাম চুরি এবং অনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চক্রের অন্যতম সদস্য এই ফারুক। সে সর্বশেষ বোয়ালখালী উপজেলা ইসি কার্যালয়ের অধীনে টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তার বাড়ি ফেনীর দমদমা লস্কারহাট এলাকায়। সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ শহীদুল্লাহ জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক জানিয়েছে, সে ২০১৪ সাল থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত ছিল। এটা ছিল ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম প্রকল্প। অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করার সুবাদে কমিশনের বিভিন্ন অফিস কক্ষে তার যাওয়ার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে অসাধু চক্রের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয় রোহিঙ্গাদের। বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ধাপে ধাপে আনা হত রোহিঙ্গাদের। কমিশনে দায়িত্বরত অস্থায়ী কর্মচারীদের এ কাজে ব্যবহার করা হত। উপ-কমিশনার মোঃ শহীদুল্লাহ আরও জানান, তার কাছ থেকে উদ্ধার করা ল্যাপটপটি যে নির্বাচন কমিশনেরই তা শনাক্ত করেছেন ইসির টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট। তবে নিজকে বাঁচাতে সে ল্যাপটপের তথ্য মুছে ফেলেছে। কিন্তু প্যানড্রাইভে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সে সকল তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ইতোপূর্বে গ্রেফতার নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মী জয়নালসহ তিন আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ফারুকের নাম। এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকেও রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হবে। ইসি চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৭-২০০৮ সালে ব্যবহৃত কিছু অকেজো ল্যাপটপ নিলামে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় আরও পাঁচটি ল্যাপটপ হারিয়ে যায়। যার দুটি জালিয়াতচক্রের হাতে পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এক রোহিঙ্গা নারী ভুয়া আইডি সংগ্রহ করে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ধরা পড়ার পরই টনক নড়ে প্রশাসনের। এরপর শুরু হয় তদন্ত। পরে রোহিঙ্গা সন্দেহে প্রায় অর্ধশত জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ স্থগিত করে কমিশন। এরপর শুরু হয় চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ধরতে অভিযান। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগে আটক করা হয় ২ দালালকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে কর্মরত অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনের নাম। পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয় দুই সহযোগী বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশকে। উদ্ধার করা হয় একটি ল্যাপটপ। সিএমপির কোতোয়ালি থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করেন ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা। এতে এ তিনজন মোট ৫ জনকে আসামি করা হয়। তন্মধ্যে সাগর এবং সত্য সুন্দর নামের দু’জন এখনও পলাতক রয়েছে। তারাও ছিল আউট সোসিং কর্মচারী। নির্বাচন কমিশনের তদন্ত দলের কাছে জয়নাল স্বীকার করেছে যে, সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে সে আঞ্চলিক অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট, স্ক্যানার ও সিগনেচার প্যাড গোপনে তার বাসায় নিয়ে যেত। বাসায় বসেই এসব সরঞ্জাম দিয়ে তথ্য তৈরি করে সাগরের কাছে পাঠাত ই-মেইলের মাধ্যমে। আর সাগর ইসি সার্ভারে অবৈধভাবে ঢুকে তথ্য আপলোড এবং যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্টকপি এসএ পরিবহনের মাধ্যমে পাঠাত জয়নালের কাছে। এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকেই চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে জানিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
×