ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্ধিরগঞ্জের মা ও দুই মেয়েকে হত্যার আসামি আব্বাসের স্বীকারোক্তি

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সিদ্ধিরগঞ্জের মা ও দুই  মেয়েকে হত্যার আসামি  আব্বাসের স্বীকারোক্তি

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী সিআইখোলা এলাকায় মা নাজমিন বেগম (২৬) এবং দুই মেয়ে নুসরাত (৮) ও সুনাইনা ওরফে সায়মাকে (২) গলা কেটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতে হত্যা করার ঘটনার একমাত্র আসামি নিহত নাজমিন বেগমের বড় বোনের স্বামী ঘাতক আব্বাসউদ্দিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে আব্বাস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মিল্টন হোসেনের আদালতে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ আসাদুজ্জামান। এদিকে নিহত মা ও দুই মেয়ের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে লাশের জানাজা শেষে আদমজী করবস্থান দাফন করা হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে সিআইখোলা এলাকার আনোয়ার হোসেন সাততলার বাড়ির ষষ্ঠ তলার পূর্বদিকের ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার দিকে নাজমিন বেগমের বড় বোন ইয়াছমিন বেগমের স্বামী আব্বাস উদ্দিন ফ্ল্যাটে ঢুকে নাজমিন বেগম ও তার দুই মেয়ে নুসরাত এবং সায়মাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং গলা কেটে হত্যা করে। হত্যার বিষয়টি দেখে ফেলায় আব্বাস উদ্দিন নিজের প্রতিবন্ধী মেয়ে সুমাইয়াকে (১৫) কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় নিহত নাজমিন বেগমের স্বামী সুমন মিয়া বাদী হয়ে ভায়রা আব্বাস উদ্দিনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বৃহস্পতিবার রাতেই মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ শুক্রবার দুপুরে আব্বাস উদ্দিন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দিতে রাজি হয়। পরিদর্শক আজিজুল হক আরও বলেন, শুক্রবার দুপুর একটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মিল্টন হোসেনের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়। পরে ঘাতক আব্বাস উদ্দিনকে আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মা ও দুই মেয়ের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন ॥ পাইনাদী সিআইখোলা এলাকায় আপন ভগ্নিপতির হাতে খুন হওয়ার পর মা নাজমিন বেগম ও দুই মেয়ে নুসরাত ও সুনাইনা ওরফে সায়মার লাশের ময়নাতদন্ত শুক্রবার দুপুরে নগরীর নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়েছে। পরে বিকেল ৩টায় তিন জনের লাশ নিহত নাজমিনের আদমজীর সুমিলপাড়ার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসলে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। এ সময় নিহত নাজমিনের স্বামী সুমন মিয়া ও নাজমিনের ছোট ভাই হাসান বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। এ সময় শত শত নারী-পুরুষ নিহত তিন জনের লাশ দেখতে ছুটে আসেন। বাদ আছর সুমিলপাড়া ঈদগাহ মাঠে তাদের জানাজা শেষে আদমজী কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়। ঘাতক আব্বাস উদ্দিনের ফাঁসির দাবি নিহত নুসরাত ও সায়মার দাদা নিজাম মিয়া ও দাদি লুৎফা বেগম বলেন, আমাদের নিষ্পাপ দুই নাতি ও ছেলের স্ত্রীর হত্যাকারী আব্বাস উদ্দিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। আমরা চাই দ্রুত আব্বাস উদ্দিনের ফাঁসি হোক। তিন খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের ॥ বৃহস্পতিবার রাতে মা ও দুই মেয়ে হত্যার ঘটনায় নিহত গৃহবধূর স্বামী সুমন মিয়া বাদী আব্বাস উদ্দিনকে একমাত্র আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী সুমন মিয়া উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীর বড় বোন ইয়াছমিনের সঙ্গে স্বামী আব্বাসের দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। বিভিন্ন সময় এই কলহের কারণে তার স্ত্রী নাজমিনের বড় বোন ইয়াছমিনের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় আব্বাসের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে আব্বাস ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনের ঝগড়া হলে বাদী সুমনের শ্যালক হাসান বড় বোনের স্বামী আব্বাসকে চড়-থাপ্পড়সহ মারধর করে এবং পরদিন সকালে হাসান তার বড় বোন ইয়াছমিন ও তার মেয়ে সুমাইয়াসহ সুমনের বাসায় বোন নাজমিনের কাছে চলে আসে। কে এই ঘাতক আব্বাস উদ্দিন ॥ মা ও দুই মেয়ে হত্যা ঘটনার ঘাতক হচ্ছেন আব্বাস উদ্দিন। আব্বাস উদ্দিন নিহত গৃহবধূ নাজমিন বেগমের বড় বোন ইয়াছমিন বেগমের স্বামী। নিহত নাজমিনের ছোট ভাই হাসান জানান, ২২ বছর আগে আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে তার বড় বোন ইয়াছমিনের বিয়ে হয়। আব্বাস উদ্দিন একজন মাদকাসক্ত। সে কোন কাজকর্ম করে না। তারা সিদ্ধিরগঞ্জের বাতানপাড়ার সাহাবুদ্দিন মিয়ার বাড়িতে হাসান ও তার বোন ইয়াছমিন এবং ভগ্নিপতি আব্বাস উদ্দিন ভাড়া থাকে। হাসান ও ইয়াছমিন চাকরি করে তাদের সংসার চালাত। এ নিয়ে সংসারে প্রায় সময় আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে তাদের ঝগড়া হতো। কয়েকদিন আগে হাসান ও ভগ্নিপতি আব্বাস উদ্দিনের ঝগড়া হয়।
×