ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হার্ভার্ডে সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হার্ভার্ডে সেমিনারে বাংলাদেশের  উন্নয়নের গল্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন সংবাদ-বিশ্লেষণের সমালোচনা করে একে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার বড় অন্তরায় বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সেমিনারের আলোচকরা। সোমবার বস্টনে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে গুতম্যান কনফারেন্স সেন্টারে দিনব্যাপী এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিডিনিউজের। সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র ফেলো ইকবাল কাদির তার আলোচনায় গত দশকের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগে আগ্রহীদের জন্য অপূর্ব পরিবেশ বিরাজ করছে।’ তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়- এমন সংবাদ-বিশ্লেষণের সমালোচনা করে কাদির বলেন, চলমান উন্নয়ন-অভিযাত্রায় এ এক বড় অন্তরায়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বিভিন্ন পথ-পরিক্রমায় বাংলাদেশ যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেছি, সে সময় আমি আমেরিকার বেশ কটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য। সকলেই নাকচ করেছেন আমার অনুরোধ। এক পর্যায়ে নরওয়ের টেলিফোন কোম্পানি আমার অনুরোধে সাড়া দেয়। সেই কোম্পানির বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ ৭ বিলিয়ন ডলার। আমি সর্বান্তকরণে আশা করছি, পশ্চিমাদেশসমূহে বিরাজিত নেতিবাচক মনোভাব অবসানে এ আলোচনা বড় ধরনের একটি প্রভাব ফেলবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বে দুই শতাধিক দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০-এ। এবং জনসংখ্যাগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। ইকবাল কাদির অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে উল্লেখ করেন, বর্তমানের ধারা অব্যাহত থাকলে তিন দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ভিতওয়ালা দেশের মধ্যে ২০তম স্থান দখলে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, ‘গত তিন দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকার প্রশংসাও উচ্চারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।’ কনফারেন্স সেন্টারে দিনব্যাপী এ কনফারেন্সে অংশ নেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ এমআইটি, ব্রাউন, কর্নেল, ক্যানসাস, প্রিন্সটনের স্কলার, বিশ্বব্যাংকের সাবেক চীফ ইকোনমিস্ট, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমানে কর্নেল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক কৌশিক বসু ২০১৫ সালে ঢাকা সফরের আলোকে বলেন, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে পেছনে ফেলে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি মানুষের জীবন-মানের উন্নয়নেও উদাহরণ তৈরি করেছে দেশটি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ভারতের চেয়েও বেশি। এসব সম্ভব হচ্ছে উন্নয়ন-অভিযাত্রায় সমগ্র জনগোষ্ঠীকে একীভূত করায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ আলোচনা করেন এমডিজির পথ ধরে বাংলাদেশ কিভাবে এসডিজিতেও অগ্রগতি সাধন করছে সে বিষয়ে। ‘কাউকে পিছিয়ে থাকতে দেয়া হবে না : ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে’ শীর্ষক আলোচনাটি ছিল মধ্যাহ্নভোজের পর। আজাদ বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জীবনে অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশের কোন গ্রামেই এখন খালি পায়ে কাউকে হাঁটতে দেখা যায় না। স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীদের কটি পোশাক রয়েছে, সে কথাও সরাসরি জানা সম্ভব হয় না। অথচ এক সময়ে একজন ছাত্রের একটির বেশি শার্ট অথবা প্যান্ট ছিল না। বাজার-ঘাটে জুতা-স্যান্ডেল পায়ে খুব কম মানুষকেই দেখা যেত। এসব সম্ভব হয়েছে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নে উদ্বুদ্ধ করায়। বাহরাইনের আসমা ক্যাপিটল পার্টনার নামক একটি কোম্পানির অধিকর্তা আবু বকর হানিপ বলেন, বিদেশী বিনিয়োগকারী হিসেবে আমি (বাংলাদেশে) সকলের সহায়তা পাচ্ছি। সুতরাং ঢালাওভাবে অভিযোগ করা সমীচীন নয়। এ পর্বে অর্থ সচিব আব্দুর রৌফ তালুকদার বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাদর আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। আগের অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। সেজন্যই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে সর্বক্ষেত্রে। উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
×