ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারা বছরই ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সারা বছরই ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টি সেন্টারগুলোতে আগত মাত্র গড়ে ১৫ শতাংশ রোগীর শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেন, জ্বর হলেই ডেঙ্গু টেস্ট করানোর হিড়িক রয়ে গেছে। চিকিৎসকরাও জ্বর হলেই টেস্ট করানোর জন্য রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। আর জ্বরে আক্রান্ত যে কোন মানুষই ডেঙ্গু টেস্ট না করিয়ে যেন মনে শান্তি পাচ্ছেন না। কিন্তু টেস্ট করাতে আগতদের খুব কম সংখ্যক রোগীর শরীরেই ডেঙ্গুর জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। এখন নির্দিষ্ট কোন মৌসুম অনুযায়ী ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতন থাকার বিষয়টি চিন্তা করলে হবে না। গত কয়েক বছর ধরে সারা বছরই কম বেশি ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই সারা বছরই ডেঙ্গু সচেতনতা নিয়ে কাজ করতে হবে। রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচপালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখনও ১০১ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। নতুন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নতুন ২১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসা মানুষের ভিড় লেগেই আছে। জ্বরে আক্রান্ত হলেই মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসছেন বলে জানান ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া। একই সুরে কথা বলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ সফি আহমেদ। তিনি বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেকটা কমেছে। বর্তমানে হাসপাতালে ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে নতুন ৬ জন ডেঙ্গু রোগী। কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসা মানুষের ভিড় রয়ে গেছে বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ সফি আহমেদ। এভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে নতুন রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪৬ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪৪ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২১ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন, কুয়েট বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ১ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু ডেঙ্গু টেস্ট করাতে আসা মানুষে ভিড় লেগেই আছে। মানুষের মনে ডেঙ্গু আতঙ্ক রয়ে গেছে। তবে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু সচেতনতা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৬১৫। এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি ১৯৮ এবং ঢাকার বাইরে ৪১৭। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ২৪৮৫ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৯৩ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৪৯২ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮২ হাজার ৪৫৪ জন ও ৭৯ হাজার ৭৬৬ জন। সারাদেশে এ পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৭ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩ মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে । তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১১৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৬৮টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ৩০২ জন, চট্টগ্রামের ১১ জেলায় ১৮২ জন, খুলনা বিভাগে ৫৯৩ জন, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৩২ জন, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ১১১ জন, বরিশালের ৬টি জেলায় ১৯৬ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ১৯ জন ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তামানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৩৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৬৮ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১০১ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১৪ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯৪ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৯ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭১ জন এবং কুয়েট বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হলেই বড় অংকের চিকিৎসাব্যয় বহন করতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। এই চিকিৎসা ব্যয় সরকারী হাসপাতালে সহনীয় হলেও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে যেন গড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ডেঙ্গু রোগীদের অভিযোগ, সরকারী হাসপাতালেও দামী ওষুধ ও ইনজেকশন এবং বিভিন্ন টেস্ট বাইরে করাতে হয়। আর বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয়ের যেন শেষ নেই। রক্তের প্লাটিলেট কমে গেলে রক্ত দিতে হয়। তার ওপর প্রতিদিন নানা রকম পরীক্ষা চলছে। ইনজেকশন লাগলেই প্রতিটির পেছনে গুনতে হয় ৭ হাজার টাকা। আর রোগীশয্যার দৈনিক খরচ তো রয়ে গেছে।
×