ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ভিডিও প্রকাশ, রক্তাক্ত রিফাতকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন মিন্নি

প্রকাশিত: ১৩:২২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নতুন ভিডিও প্রকাশ, রক্তাক্ত রিফাতকে হাসপাতালে নিয়েছিলেন মিন্নি

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি ভিডিও ভাইরাল এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে একাই রক্তাক্ত স্বামীকে হাসপাতালে নিতে দেখা গেছে। রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর মামলায় সাক্ষীর তালিকায় মিন্নির নাম থাকলেও পরে খুনের ঘটনায় তাকেই আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। খবর বিডিনিউজের। রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বিভিন্ন সময় দাবি করেছিলেন, গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারী কলেজের সামনে তার ছেলের ওপর হামলার পর পুত্রবধূ মিন্নি আর কোন খবর নেননি। তবে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনের একটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা সদ্য প্রকাশিত ভিডিওতে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলায় রক্তাক্ত রিফাতকে নিয়ে সকাল ১০টা ২১ মিনিটের সময় মিন্নি একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিক্সায় করে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে নিয়ে আসেন। এ সময় সেখানে দাঁড়ানো মামুন নামের একজন রিক্সার দিকে দৌড়ে আসেন। এরপর তিনি দৌড়ে হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিক্সার পাশে আসেন। তখন উপস্থিত অনেকেই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। এরপর রিক্সা থেকে নামিয়ে রিফাতকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর মিন্নি হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কার সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের ভেতরে যান। এর কিছু সময় পর মিন্নির বাবা মোয়াজ্জেম হোসেন কিশোরকে হাসপাতালে দেখা যায়। কিছু সময় পর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সটি সামনে আনা হয়। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও দুটি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাতকে স্ট্রেচারে করে ওই এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। এ্যাম্বুলেন্সটি ১০টা ৪৯ মিনিটের সময় বরগুনা হাসপাতাল প্রাঙ্গণ ছেড়ে যায়। রিফাতকে সেদিন বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনা হাসপাতালের সামনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একটি এবং বরগুনা জেলা পুলিশের একটি সিসি ক্যামেরা আছে। তবে এই ভিডিওটি কোন ক্যামেরায় ধারণ করা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বামী খুনের আসামি মিন্নি জামিনে কারামুক্ত হয়ে বরগুনার মাইঠা এলাকার নয়াকাটা বাবার বাসায় রয়েছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ বিষয়ে মিন্নির কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল সাংবাদিকদের বলেন, নতুন ভিডিওটি তিনি সংগ্রহ করেছেন। তার দাবি, মিন্নি যে সেদিন স্বামী রিফাততে বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন, তা এখন ‘সুস্পষ্টভাবে’ প্রমাণিত। ‘আমার মেয়ে রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমার মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেই কলেজের সামনের ভিডিওটি এডিট করে কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালের সামনের এই ভিডিওটি গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা পারেনি।’ মোজাম্মেল বলেন, এরকম আরও একটি ভিডিও আমার সন্ধানে আছে। আমি সেই ভিডিওটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি। রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন বরগুনার সিভিল সার্জন অফিসের জ্যেষ্ঠ টেকনিশিয়ান সুভাষ চন্দ্র। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিফাত শরীফকে যখন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসা হয় তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে রিফাতের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বিশেষ করে তার বাম পাশের ফুসফুস ধারাল অস্ত্রের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সব ব্যবস্থা করেও তার জীবন সংশয় হতে পারে ভেবে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে রক্ত দেয়া হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রিফাতকে দ্রুত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।’ গত ২৬ জুন বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাতকে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় নামে। ওই ভিডিওতে স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নিকে চেষ্টা চালাতে দেখা গিয়েছিল। এরপর ২ জুলাই এ হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মামলায় ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়। কিন্তু মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। এরপর ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে সেদিন রাতে তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। হাইকোর্ট থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন নিয়ে এখন বাবার বাড়িতে রয়েছেন তিনি।
×