ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্লাস্টিক-পলিথিনে বিপর্যস্ত হচ্ছে পদ্মার পরিবেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্লাস্টিক-পলিথিনে বিপর্যস্ত হচ্ছে পদ্মার পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগরী ঘেঁষা পদ্মাপাড় এলাকা বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকেলে সাজানো এই পদ্মাপাড়ে ঘুরতে আসেন হাজারো মানুষ। আর তাদের কেন্দ্র করে পদ্মাপাড়ে গড়ে উঠেছে অনেক ছোট-বড় মুখরোচক খাবারের দোকান। পড়ন্ত বিকেলে খোলামেলা পরিবেশে এসব দোকানের মুখরোচক খাবার, সঙ্গে পদ্মার শীতল বাতাসের টানে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে পদ্মাপাড়। কিন্তু পদ্মার এই সুন্দর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। মুখরোচক খাবার দোকানগুলোর ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক-পলিথিনে মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে পদ্মার নির্মল পরিবেশ। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্লাস্টিক বা পলিথিন ডিগ্রেডেবল নয়। যার কারণে মাছসহ নদীর অন্য জীবের অস্তিত্ব সঙ্কটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজশাহীর পদ্মা গার্ডেন থেকে শুরু করে আই-বাঁধ পর্যন্ত রয়েছে শত শত মুখরোচক খাবারের দোকান। নদীর পাড় দিয়ে স্তূপাকারে পড়ে আছে এসব দোকানের ফেলে দেয়া পলিথিন, কাগজ, প্লাস্টিক। সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ার স্বপ্নকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যত্রতত্র প্লাস্টিক, পলিথিন, কাগজ, বোতল ইত্যাদি ফেলছে তারা। এসব আবর্জনা পরিবেশ ও নদীর পানির দূষণ ঘটাচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য বিপর্যস্ত হচ্ছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুখরোচক খাবারের দোকানগুলোর পাশে উচ্ছিষ্ট রাখার জন্য নির্দিষ্ট ডাস্টবিন বা ঝুড়ি নেই। এতে করে তারা ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলে রাখছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে নদীর পাড়। বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। আবর্জনা মিশে দূষিত হচ্ছে পদ্মার পানিও। পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল হাকিম ও বদরুদ্দোজার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, একটু নির্মল বাতাসের জন্য সবাই পদ্মার পাড়ে ছুটে আসেন। বন্ধুরা মিলে আমরা প্রায়ই ঘুরতে আসি। কিন্তু বর্তমানে পদ্মার পরিবেশ নষ্ট হতে বসেছে। পদ্মার বাতাসের সঙ্গে এখন দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগে। মুখরোচক খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্টগুলো যত্রতত্র ফেলার জন্যই এমন দুর্গন্ধ। পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশের কথা না ভেবে প্রতিদিন এভাবেই যেখানে-সেখানে এই দোকানিরা ময়লা ফেলেন বলে অভিযোগ এই শিক্ষার্থীদের। স্থানীয়রা জানায়, নগরের পদ্মা গার্ডেন থেকে শুরু করে আই-বাঁধ পর্যন্ত নদীর তীরবর্তী এলাকার ব্যবসায়ীরা লাগাম ছাড়া ব্যবসা করে। সবাই মিলে পরিচ্ছন্নতার নিয়ম করলেও তা মানেন না কেউই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, আমিও মাঝেমধ্যে সেখানে গিয়ে বিব্রত হই। দোকানিরা তাদের দোকানের উচ্ছিষ্ট, ময়লাগুলো যত্রতত্র ফেলে রাখেন। এতে করে আমাদের পরিবেশটা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পদ্মা একটা সর্পিল বা সাইনাস রিভার। বিশেষ করে নগরীর বুলনপুর থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত ভাঙ্গন উন্মুখ বলা হয়। বর্ষাকালে লোক চলাচল বা এসব দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ ১৮৫৬ সালের দিকে বৃটিশরা যে বাঁধ দিয়েছিল তা রাজশাহী রক্ষা বাঁধ নামে পরিচিত। পদ্মা এবং রাজশাহীবাসীর জন্য এটা ভয়ানক ও হুমকিদায়ক। ফেলে রাখা পলিথিনগুলো নদীর পানিতে মিশে শুকিয়ে গেলে চাষাবাদের জন্য ক্ষতিকর বলে জানান এই পরিবেশবিদ। তিনি বলেন, এগুলো মিশে গেলে চাষাবাদের ক্ষতি তো হবেই। প্লাস্টিক বা পলিথিন ডিগ্রেডেবল নয়। আর এ কারণেই নদীতে মাছসহ যেসব জীবন আছে তাদের জন্য পলিথিন বড় হুমকি। এ বিষয়ে রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা বিষয়টি আগে সিটি কর্পোরেশনকে জানাব। তারপরে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
×