ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাইবান্ধার ১২ স্কুল নদী ভাঙ্গনে বিলীন

প্রকাশিত: ১১:৩১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

গাইবান্ধার ১২ স্কুল নদী ভাঙ্গনে বিলীন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ১৬ সেপ্টেম্বর ॥ জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলায় বিগত দু’দফা বন্যায় নদী ভাঙ্গনে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে এ সব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোথাও খোলা আকাশের নিচে গাছতলা, টিনের ছাপড়া ঘর তুলে অথবা পরিত্যক্ত কোন ভবনে এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখাপড়া চালানো হচ্ছে। এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো না থাকায় সঙ্গত কারণেই ওইসব এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে। তদুপরি দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা নানা শিশু শ্রমেও জড়িয়ে পড়ছে। উল্লেখ্য, এরমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলাতে ৫টি, সুন্দরগঞ্জে ২টি এবং সদর উপজেলায় ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ফুলছড়ির হারুডাঙ্গা, ধলিপাটাধোয়া, কেতকিরহাট, জামিরা ও আঙ্গারীদহ, সদর উপজেলার চিথুলিয়ার চর, চিথুলিয়া দিগর নতুনপাড়া, বাজে চিথুলিয়া, মৌলভীর চর ও কেবলাগঞ্জ এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উজানবুড়াইল ও পূর্ব লাল চামার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন কেতকির হাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে দ্বিতল ভবন ছিল। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সে ভবনের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা এখন টিনের ছাপড়ায় নিচে মাটিতে বসে এখন লেখাপড়া করছে। ফলে লেখাপড়ার পরিবেশ না পাওয়ায় ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি কমে গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ১২টি স্কুল ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। ভাঙ্গনের মুখে রাঙ্গাবালীর চার গ্রাম স্টাফ রিপোর্টার গলাচিপা থেকে জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রামের মানুষ এখন আগুনমুখা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। উত্তাল আগুনমুখার ছোবলে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ। ভেঙ্গে যাচ্ছে ফসলি জমি। ভাঙ্গন কেড়ে নিচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালাসহ যাবতীয় সহায় সম্পদ। এমনকি ভাঙ্গনের একেবারে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইউনিয়নের একমাত্র ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রটি। বর্তমানে অবস্থা এতটাই ভয়াল হয়ে উঠেছে, নদীর তীব্র স্র্রোত আর ঢেউয়ের শব্দ শুনেই নদীপাড়ের মানুষ কখনও কখনও আঁতকে ওঠে-এই বুঝি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল মাথা গোজার একমাত্র ঠাঁইটুকু। সরেজমিনে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিদিন আগুনমুখা নদীতে জোয়ার হলেই বিধ্বস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ফসলি জমি প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে চার গ্রামের মানুষ। ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে আগুনমুখার লোনা পানিতে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নদীর পাড় সংলগ্ন ইউনিয়নের একমাত্র ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রটি নদীর মাঝে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কোন সময় এটি নদী গর্ভে চলে যাবে। স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের নয় গ্রামের মধ্যে চারটি গ্রাম চালিতাবুনিয়া, গরুভাঙ্গা, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়া গ্রাম সবচেয়ে বেশি আগুনমুখা নদীর ভাঙ্গনের শিকার। চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা, গলাচিপা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার কামরুল জানান, এ চার গ্রামে ৬ হাজারের মতো মানুষের বাস। ভাঙ্গনে এরইমধ্যে হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বসতঘর হারিয়ে অনেকে এখন নতুন করে বাঁধের ঢালে বসতি করেছে। কেউ কেউ নিঃস্ব হয়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। মধ্য চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহসিন হাওলাদার (৬০) জানান, স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে চালিতাবুনিয়া গ্রামে তার বসতঘর ছিল। নদীতে মাছ ধরা জীবিকার একমাত্র উৎস। বছরখানেক আগে তার বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন বাঁধের পাশে ঘর করে বাস করছেন। তিনি বলেন, আবারও ভাঙ্গন এগিয়ে আসছে, কিন্তু ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থায় নদীর পাড়ের মানুষজন তার মতোই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গরুভাঙ্গা গ্রামের গনি গাজী (৫০) নামের আরেক জেলে বলেন, নদীতে মাছ ধরি। তাই নদীর পাড়ে বসতি গড়ি। কিন্তু এ পর্যন্ত দুইবার বসত ঘর আগুনমুখা গিলে খেয়েছে। চালিতাবুনিয়া গ্রামের ইয়াকুব আলী হাফিজিয়া মাদ্রাসাটি গতবছর বর্ষা মৌসুমে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মাদ্রাসার হাফেজ মোহাম্মদ ইব্রহিম বলেন, নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর মাদ্রাসাটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু হুমকি যায়নি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নে ৪৯ নম্বর পোল্ডারের আওতায় মোট ২৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর আগে ঢেউয়ের ঝাপটায় বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তা নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল।
×