ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়াণ দিবসে ‘নিসর্গসখা’ দ্বিজেন শর্মাকে স্মরণ

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  প্রয়াণ দিবসে ‘নিসর্গসখা’ দ্বিজেন শর্মাকে স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃক্ষাচার্য, জীববিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, অনুবাদক ও উদ্ভিদ গবেষক, নিসর্গসখা অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের কোলে জন্মেছিলেন এই বিস্ময়কর খোকা নিসর্গবন্ধু। প্রকৃতি ও গাছগাছালির প্রতি ভালবাসা এবং লেখালেখির কারণে যিনি উপমহাদেশের প্রকৃতিপ্রেমী তিনি প্রতিটি মানুষের কাছে এক বিস্ময়। প্রকৃতি নিয়ে তার আজীবনের ভালবাসা থেকেই তাকে ‘নিসর্গসখা’ বলা হয়। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষটির রবিবার ছিল দ্বিতীয় মৃত্যবার্ষিকী। প্রয়াণ দিবসে প্রকৃতিপ্রেমী ও সাহিত্যিক দ্বিজেন শর্মাকে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় স্মরণ করা হয়। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সন্ধ্যায় তরুপল্লব আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তার নামে প্রবর্তিত দ্বিজেন শর্মা নিসর্গ পুরস্কার দেয়া হয়। এবার এ পুরস্কার পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক। অনুষ্ঠানে পরস্কারপ্রাপ্ত মনোয়ার হোসেনকে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার, ক্রেস্ট, সনদপত্র তুলে দেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। শংসা বচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম। হারিয়ে যাওয়া বিপন্ন প্রজাপতিকে খুঁজে বের করে তার পুনরুজ্জীবনে গবেষণার অবদান হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন পেয়েছেন এ পুরস্কার। পুরস্কার পেয়ে মনোয়ার হোসেন বলেন, দ্বিজেন শর্মা যে কাজ করে গেছেন, আমাদের কাজ হচ্ছে তার সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। মানুষের মাঝে প্রকৃতিপ্রেম বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবেই পৃথিবী সুন্দর আবাসভূমি হয়ে উঠবে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বৃক্ষসখা হিসেবে উদ্দীপনামূলক পুরস্কার দেয়া হয় শাহানা চৌধুরী ও লায়লা আহমেদকে। মানুষকে গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করতে এই পুরস্কার এ বছর থেকে প্রবর্তন করে তরুপল্লব। দ্বিজেন শর্মাকে স্মরণ করে অতিথিরা বলেন, দ্বিজেন শর্মা কয়েক প্রজন্মের মাঝে প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে গেছেন। তার আদর্শে উজ্জীবিত তরুণরাই প্রকৃতি সংরক্ষণ আন্দোলনে আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। দ্বিজেন শর্মা যেন একই সঙ্গে কবি ও বিজ্ঞানী। তার লেখায় অনন্য কাব্যময়তা রয়েছে। তিনি লেখায় সাহিত্য ও বিজ্ঞানের সুন্দর সম্মিলন ঘটিয়েছেন। উল্লেখ্য, প্রকৃতি ও নিসর্গবিষয়ক লেখালেখিরও পথিকৃৎ দ্বিজেন শর্মা। উদ্ভিদ ও প্রকৃতি নিয়ে লেখা তার আকরগ্রন্থ ‘শ্যামলী নিসর্গ’। গাছ, ফুল বা ফলের বর্ণনায় ফিরে ফিরে লিখেছেন ময়মনসিংহ গীতিকা, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীনের কাব্য থেকে শুরু করে সিলেটের লোকগীতি কিংবা মধ্যযুগের কাব্যগাথার উদ্ধৃতি। তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস’, ‘ফুলগুলি যেন কথা’, ‘গাছের কথা ফুলের কথা’, ‘এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি’, ‘নিসর্গ নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা’, ‘সমাজতন্ত্রে বসবাস’, ‘জীবনের শেষ নেই’, ‘বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ’, ‘ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি’, ‘বিগল যাত্রীর ভ্রমণ কথা’, ‘গহন কোন বনের ধারে’, ‘হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ডালটন হুকার’, ‘বাংলার বৃক্ষ’ ইত্যাদি।
×