ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার আফগানদের বিরুদ্ধে টি২০ পরীক্ষা সাকিবদের

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এবার আফগানদের বিরুদ্ধে টি২০ পরীক্ষা সাকিবদের

মিথুন আশরাফ ॥ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল মেরেছে বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের সামনে আরেক আফগান পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। এবার টি২০তে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় হবে ম্যাচটি। খেলা টি২০। এই স্বল্পওভারের খেলায় আসলে কোন দলই ফেবারিট নয়। দিনটিতে যে দল ভাল করতে পারে তারাই জিতে। যত দুর্বল দলই হোক, একটা বড় ইনিংস বা ভাল বোলিংয়ে জিতে যেতে পারে। তবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে যদি পার্থক্য খোঁজা হয় তাহলে এ মুহূর্তে আফগানিস্তানকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। আফগানরা যে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এর আগে গত বছর তিনটি টি২০ খেলেছে, সবকটিতে জিতেছে। শুধু তাই নয়, ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশও করেছে তারা। যে ম্যাচটিতে হেরেছিল আফগানরা সেটিও ২০১৪ সালে। পাঁচ বছর আগে। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানরা টি২০তে অনেক শক্তিশালী দল। সেই তুলনায় বাংলাদেশ আসলে টি২০তে আফগানদের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে। সেই প্রমাণ তো র‌্যাঙ্কিংয়েও মিলে যায়। আফগানরা যেখানে ৭ নম্বরে আছে। সেখানে বাংলাদেশ আছে ১০ নম্বরে। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপরে আছে আফগানিস্তান। টি২০তে আফগানরা যে কি দুর্দান্ত দল তাতেই বোঝা যায়। আফগানরা আবার ২০১০ সাল থেকে টি২০ খেলা শুরু করে শনিবারের আগ পর্যন্ত ৭১ ম্যাচ খেলে ৪৯টিতে জিতেছে, হেরেছে ২২টিতে। সেখানে বাংলাদেশ ২০০৬ সাল থেকে টি২০ খেলে ৮৫ ম্যাচের মধ্যে ২৬টিতে জিততে পেরেছে। হেরেছে ৫৭টি ম্যাচে। দুটি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। বাংলাদেশের চেয়ে আফগানদের জয়ের সংখ্যাই বেশি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চার ম্যাচের তিনটিতে হার তো আফগানদেরই ফেবারিট তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে। টি২০ ক্রিকেট ইতিহাসে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি তিন ম্যাচের সিরিজ খেলে, একটিতেই বাংলাদেশের হার হয়েছে। বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৬টি টি২০ সিরিজ খেলেছে। তবে দুইয়ের অধিক দল নিয়ে কোন সিরিজ বা টুর্নামেন্টে এখনও জিততে পারেনি। ২০০৭ সালে চার দল নিয়ে, ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফি, ২০০৭ সাল থেকে ছয়টি টি২০ বিশ্বকাপ, একবার টি২০ এশিয়া কাপ; কোনটিতেই শিরোপা নিজেদের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে চার দল নিয়ে হওয়া সিরিজে যদিও শিরোপা জেতা বা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রস্তুতিমূলক সিরিজ হয়েছিল। এরপরও পাকিস্তান, কেনিয়া ও উগান্ডাকে নিয়ে হওয়া সিরিজে সেরা দল হতে পারেনি বাংলাদেশ। সেরার মুকুট এখনও পরা হয়নি। আফগানিস্তান তো দুইয়ের অধিক দলের মধ্যে হওয়া কোন সিরিজে এই প্রথম খেলছে। টি২০ বিশ্বকাপ কিংবা বাছাইপর্ব খেলা হয়েছে। কিন্তু তিন দলের সিরিজে এই প্রথমবার খেলছে। তবে দলটি যে শনিবারের আগ পর্যন্ত টানা ১০টি টি২০ জিতেছে, তাতেই আফগানিস্তানের শক্তি বোঝা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য আফগানদের হারানো যে সহজ হবে না তা সবারই বোধ হয়ে গেছে। টেস্ট ম্যাচটিতে বাংলাদেশকে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান, তাতে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে তারাই ফেবারিট দল হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশ যতই বিশ্বকাপের পর টানা ছয়টি ম্যাচ হারুক একটি জয়েই সব বদলে যেতে পেরে। সেই জয়টি জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মিলেও গেছে। জয়ের খোঁজে ছিল সাকিবের দল। সেই জয় মিলে গেছে। এখন সামনে যে দলই আসুক, তাদের হারানোর আত্মবিশ্বাস নিয়েই খেলতে পারবে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের মনোবলও চাঙ্গা হয়ে গেছে। তাতে করে যে মানসিক চাপ ছিল তাও খানিক দূর হয়ে যেতে পারে। যদিও টেস্ট হারের পর টি২০তে যখন আফগানিস্তান প্রতিপক্ষ চাপ থাকছেই। সেই চাপ জয় করার সাহসও আছে। আট নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে যখন আফিফ হোসেন ধ্রুব ম্যাচ জেতান তখন ওপরের পজিশনের ব্যাটসম্যানদেরও দায়িত্ব বেড়ে যায়। সেই দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা আছে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের। আফগান চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুতও বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। টেস্টে বাংলাদেশ দল যে রকমই করুক টি২০তে যতই বাজে খেলা খেলুক বাংলাদেশ, জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে জয়টির আগে কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে। আবার নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও খেলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের দেশে সিরিজে হারিয়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে লঙ্কানদের পেছনে ফেলে ফাইনালে খেলেছে। দেশের মাটিতে খেলা বলেই আশা আছে। প্রথমবারের মতো সিরিজের শিরোপা জেতার স্বপ্নও আছে। বাধা সামনে শুধু আফগানিস্তানই। প্রস্তুতি ম্যাচে জিম্বাবুইয়ের কাছে হারের পর যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা জিম্বাবুইয়েকে হারিয়েই দূর করেছে বাংলাদেশ। এখন যদি আফগান পরীক্ষাতে পাস মার্ক তুলে নেয়া যায় তাহলে ফাইনালে খেলা অনেকটা নিশ্চিত করে নেবে বাংলাদেশ। তখন ফেবারিট দল বাংলাদেশই হয়ে যাবে। আর ফাইনাল জিতলেই তো প্রথমবারের মতো দেশের মাটিতে দুইয়ের অধিক দলের সমন্বয়ে হওয়া কোন সিরিজের শিরোপা নিজেদের হয়ে যাবে। তা সম্ভব? সেই প্রশ্ন থাকতেই পারে। অসম্ভবও নয়। সেই সম্ভবের ভিত আজ আফগানদের হারিয়ে দিতে পারলেই গড়ে যেতে পারে। যতই রশীদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবীরা স্পিন জাদু দেখানোর চেষ্টা করে যান। যতই সুযোগ বুঝে নবিন উল হক, গুলবাদিন নাইব, দৌলত জাদরানরা গতির ঝড় তোলার প্রচেষ্টা চালান। আর হযরতুল্লাহ জাজাই, নজিব তারাকাই, মোহাম্মদ নবী, আসগর আফগান, নজিবুল্লাহ জাদরানরা ব্যাটিং ক্যারিশমা দেখানোর চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, আফিফ হোসেন ধ্রুব, তাইজুল ইসলাম, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরাও কিন্তু স্পিন বিষ ছড়িয়ে দিতে কম পটু নন। মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের সঙ্গে ইয়াসিন আরাফাত মিশুও গতির ঝড় তুলতে প্রস্তুত। আর ব্যাটিংয়ে তো সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাসের হাতে যে শট আছে তা যদি দেখাতে পারেন তাহলে আফগানিস্তানের বারোটা বেজে যাবে। এরপর সাকিব, মুশফিকুর রহীম, আফিফ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক ও সাইফউদ্দিন তো আছেনই। আফগানিস্তান দলটি ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজেও বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তা যতই ভাবা হোক। তাদের নিয়ে যতই ভাবনা থাকুক, শেষ পর্যন্ত সাকিবরা ঝলকানি দেখিয়ে দিতে সক্ষম। সেই ঝলকানি দেখিয়ে আফগান পরীক্ষায় আজ বাংলাদেশ পাস করুক। সেই প্রত্যাশাই করা হচ্ছে।
×