ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি রয়ে গেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হওয়া ডেঙ্গু রোগীর অধিকাংশই আক্রান্ত হয়েছে ঢাকার বাইরে। শনিবারও মাদারীপুর ও রাজশাহীতে দুই ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। সরকারী হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৬০ জন হলে বেসরকারী পরিসংখ্যানে ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশেষ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নতুন কোন উপায় বের করতে পারেনি ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্মসূচীর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ ও কর্তা ব্যক্তিরা। ঢাকার বাইরে এডিস মশার উপস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরেই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নগামী রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫২৭। এদের মধ্যে ঢাকায় নতুন ভর্তি রোগী ১৫৬ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন ভর্তি রোগী ৩৭১ জন। সারাদেশে শনিবার পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৬ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তবে ঢাকার বাইরে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি রয়েগেছে। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ২৯৯৬ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২৮৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৭১১ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮০,৫৬৭ জন ও ৭৭,৩৬৮ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩ মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১০১ মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৬০ মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম আরও জানায়, বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ৩৬২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ৬৬ জন, চট্টগ্রামের বিভাগের ১১ জেলায় ২১৪ জন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬৫১ জন, রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় ১৫১ জন, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৩৮ জন, বরিশালের বিভাগের ৬ জেলায় ১৯৪ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৩৫ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকা শহরে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তামানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬৮ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২০২ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৪০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২৯ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫২ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫০ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৪৮ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১০৮ জন, কুয়েট বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৩ জন ও পঙ্গু হাসপাতালে ২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। মাদারীপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোঃ সেলিম মাদবর (৩৫) এর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের রামরায়েরকান্দি গ্রামের লালমিয়া মাদবরের ছেলে। এ নিয়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মাদারীপুর জেলার ১০ জনের মৃত্যু হলো। জানা গেছে, জেলার শিবচর উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক মোঃ সেলিম মাদবর গত ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শিবচরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হন। পরদিন বুধবার উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে তাকে ভর্তি করান। অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় তাকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়। শিবচর উপজেলা যুবলীগের দফতর সম্পাদক আজিজুল হক জানান, শুক্রবার রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোঃ সেলিম মাদবরের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের দফতর সম্পাদক ছিলেন। রাজশাহী ॥ স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) রওশন আরা (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে গত ১০ সেপ্টেম্বর তাকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তার স্বামীর নাম মোসলেম উদ্দিন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম ফেরদৌস বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর রওশন আরা নামের ওই নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর তাকে কুষ্টিয়া হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটায় ১২ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। বর্তমানে তার মরদেহ হাসপাতালেই রয়েছে। এই নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হলো। এর আগে গত ১২ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রামেক হাসপাতালে স্থানান্তর হয়ে আসার পর আবদুল মালেক নামের একজন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি রাজধানী ঢাকায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর শাপলা বেগম নামের এক নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তিনিও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
×