ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজহারুলের আপীলের রায় সুপ্রীমকোর্ট খোলার পর

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আজহারুলের আপীলের রায় সুপ্রীমকোর্ট খোলার পর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও আলবদর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে আপীলের রায় অবকাশের পর ঘোষণা করা হতে পারে। রাষ্ট্রপক্ষ এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে আরও ২৬টি মামলার আপীল শুনানি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলাটি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১০ জুলাই সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জনকণ্ঠকে বলেন, আশা করছি সুপ্রীমকোর্টের অবকাশের পর এ মামলাটির রায় ঘোষণা হতে পারে। অবকাশ শেষে ১৩ অক্টোবর সুপ্রীমকোর্ট খুলবে। খোলার পর হয়তো আমরা এ রায়টি পাব বলে আশা করছি। এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার রঞ্জু মিয়াসহ পাঁচ রাজাকারের রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে। রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখেছে ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২১ জুলাই চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছে। এটি হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪০তম রায়। অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদ- প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ৫টি অভিযোগই প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ৩টি অভিযোগে ফাঁসি, ২টিতে ৩০ বছরের কারাদ- ও একটিতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-ের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপীল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা এ আপীল করেন। আপীলে খালাস চান তিনি। মোট ৯০ পৃষ্ঠার আপীলে খালাসের পক্ষে ১১৩টি যুক্তি তুলে ধরা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মোঃ নুরুজ্জামান। একই বেঞ্চে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক কৃষিপ্রতিমন্ত্রী কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপীল শুনানি শুরু হয়েছে। এ মামলাটিও অবকাশের পর পুনরায় কার্যতালিকায় আসবে বলে জানা গেছে। আপীল বিভাগে এটিএম আজহারুল ইসলামের মামলাটি হবে অষ্টম মামলা। এর আগে আপীল বিভাগে ৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এই সাতটি মামলার মধ্যে ৬ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যার মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ-ের বিরুদ্ধে আরও ৩০ জন উচ্চ ্আদালতে আপীল করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেন , জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির আব্দুস সুবহান, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, জাপার সাবেক সাংসদ আব্দুল জব্বার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান, বাগেরহাটের সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, মোঃ আকরাম হোসেন, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, নেত্রকোনার ওবায়দুল হক তাহের, আতাউর রহমান ননী, হবিগঞ্জের মজিবুর রহমান (আঙ্গুর মিয়া ) মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, কিশোরগঞ্জের সামসুদ্দিন আহম্মেদ, এ্যাডভোকেট শামসুল হক, জামালপুরের এস এম ইউসুফ হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মোঃ মোসলেম প্রধান, মোঃ আব্দুল লতিফ, ইউসুফ আহম্মেদ, মোঃ আমির আহম্মেদ ওরফে আমীর আলী, মোঃ জয়নাল আবেদীন, মোঃ আব্দুল কুদ্দুস, হামিদুর রহমান আজাদ, এ গনি ওরফে এ গনি হালদার, মোঃ আকমল আলী তালূকদার, মোঃ ইসহাক সিকদার। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার কথা বিবেচনা করে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলা কমাতে ট্রাইব্যুনাল একটি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে ৩৯টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
×