ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজানো হয়েছে

প্রকাশিত: ১১:১৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজানো হয়েছে

জাবি সংবাদদাতা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ‘শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর এমন বক্তব্যে জাবিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ রাব্বানীর এ বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে পৃথক বিবৃতি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ বিবৃতিতে ‘কোন টাকা লেনদেন হয়নি’ উল্লেখ করে রাব্বানীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ করেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চিঠিতে রাব্বানী উল্লেখ করেন, ‘জাবি প্রশাসন (বিশ্ববিদ্যালয়) শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে।’ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার বিরুদ্ধে যা বলেছেন তাকে ‘মিথ্যা গল্প’ অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। নিজেকে স্বচ্ছ দাবি করে দুর্নীতির বিষয়ে ভালভাবে অনুসন্ধান করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের দেয়া সাক্ষাতকারে জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী যে চিঠি দিয়েছেন, সেই গল্পটা তাদের সাজানো অপপ্রচার। আমি জোরের সঙ্গে বলছি, গল্পটা মিথ্যা। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছেন। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি বিষয়টি প্রমাণ করতে। শুধু তাদের না, আমি অনুসন্ধান করতে বলছি সাংবাদিকদের। বিষয়টি তদন্ত করতে বলব চ্যান্সেলর এবং ইউজিসিকে, যে তদন্ত করে দেখুন আসল সত্যটা কী। উপাচার্য বলেন, ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আমার বাসভবনে আলোচনার জন্য আসেন। আলোচনার একপর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে চাঁদা দাবি করেন তারা। আমি তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এতেই শোভন-রাব্বানী হতাশ হন। সে কারণেই এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তারা। উপাচার্য বলেন, শোভন-রাব্বানী এখন বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমার কাছে চার থেকে ছয় শতাংশের দাবি নিয়ে এসেছিল, সেটি তো একবারও বলেনি। তারা বলেছিল, অন্য জায়গায় কাজের পার্সেন্টেজ অনেক বেশি, আমাদের এখানে শোনা যাচ্ছে কম। এত কমে তো পারা যাবে না। আমি বলেছি, আমি কমানো-বাড়ানোর কেউ না। আমার সঙ্গে টাকা নিয়ে কোন কথা বলবে না। তোমরা সৌজন্য সাক্ষাত করতে আসছ, সাক্ষাত হয়ে গেলে চলে যেতে পার তোমরা। উপাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তারা দেখেছে জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলন চলছে, এ সুযোগে তাদের অপকর্ম ঢাকতে। এ জন্য আমাকে জড়িয়ে টাকা দেয়ার বিষয়টা ট্যাগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। কিছু লোক আছে যারা আমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বানানোর জন্য চেষ্টা করছে। আমি এসবকে ভয় পাই না। আমার মনে হয় এসব নিয়ে ভাল অনুসন্ধান হওয়া দরকার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপরিকল্পনার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। উপাচার্য প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে দুই কোটি টাকা জাবি শাখা ছাত্রলীগকে দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তিন দফার দুটি মেনে নেয় প্রশাসন। আর দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আইনী যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার আবার বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
×