ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি, সন্দেহের তীর হুতিদের দিকে

সৌদি তেল স্থাপনায় হামলা

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সৌদি তেল স্থাপনায় হামলা

সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে আরামকো কোম্পানির দুটি তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ফলে আগুন ধরে গেছে। শনিবার সকালে তেল স্থাপনা দুটিতে ড্রোন হামলার পর এ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ড্রোন হামলার ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ওই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আর এতে তেল উৎপাদন ব্যাহত হবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। এখন পর্যন্ত কোন গোষ্ঠীই ওই হামলার দায় স্বীকার করেনি। এ ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। বিবিসি, গার্ডিয়ান ও ভয়েস অব আমেরিকা। আরামকো কারখানায় অগ্নিকা-ের ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে আরামকোর তেল স্থাপনা থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যাচ্ছে এবং একটি ভিডিওতে গুলির শব্দও শোনা গেছে। দাহরানের অদূরে বুকিয়াকের আবকাইক এলাকায় তেল স্থাপনাটি অবস্থিত। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের ৩৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই বুকিয়াক। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল থেকে তেল স্থাপনায় অগ্নিকা-ের কোন খবর সম্প্রচার করেনি। আরব আমিরাতের আল আরাবিয়া টিভি চ্যানেল অগ্নিকা-ের খবর জানিয়ে বলেছে, স্থানীয় সংবাদদাতার মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আরামকো হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন আবকাইকের এই স্থাপনায় প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল তেল প্রক্রিয়াজাত করা হয়। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, আবকাইক ও খুরাইস এলাকায় অবস্থিত দুই তেল স্থাপনায় অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন আরামকোর নিরাপত্তাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে অগ্নিকা-ের ফলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভয়াবহ এই ঘটনার দায় এখনও পর্যন্ত কোন গোষ্ঠীই স্বীকার করেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সৌদির বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায়ই এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামলা সম্পর্কে আরামকোর তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বুকিয়াকের আবকাইক ও খুরাইস প্রদেশে অবস্থিত সৌদি আরামকো কোম্পানির কারখানায় ড্রোন হামলায় অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ড্রোন সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ দাহরানের ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত আবকাইক। এখানেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনাটি অবস্থিত। আর খুরাইস আরও ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলক্ষেত্র। গত জুন ও জুলাইয়ে উপসাগরে তেলবাহী জাহাজে হামলার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই হামলার জন্য রিয়াদ ও ওয়াশিংটন ইরানকে দোষারোপ করে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তেহরান। গত মাসে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা সীমান্ত এলাকায় ড্রোন দিয়ে হামলা চালালে শেবাহ তেলক্ষেত্রে সেটা আঘাত হানে। এছাড়া মে মাসে দুটি তেল সঞ্চালন কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ দুটি হামলাতেই আগুন ধরে যায়, কিন্তু এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। অপরিশোধিত তেল ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানটি আরামকো শেয়ার ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আইপিও ছাড়তে তারা নয়টি ব্যাংককের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া তাদের পরিকল্পনায় গতি আনতে দুবাইয়ে এ সপ্তাহেই তারা ব্যাংকারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে। এরই মধ্যে তাদের তেল স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটল। সৌদি আরামকোর আবকাইকের তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার। এই কারখানায় তেল সামান্য পরিশোধন করে পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরের স্থাপনায় পাঠানো হয় জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এর আগে এই স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গীরা। আল কায়েদা দাবি করে যে, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই তেল স্থাপনায় আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটা সফল হয়নি। আরামকো জানায়, খুরাইস তেলক্ষেত্রে ২০ বিলিয়ন (দুই হাজার কোটি) ব্যারেলেরও বেশি তেল মজুদ আছে এবং এই কারখানায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হয়ে থাকে।
×