ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এপারে শান্তি, ওপারে আতঙ্ক ॥ রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 এপারে শান্তি, ওপারে আতঙ্ক ॥ রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না

চট্টগ্রাম অফিস/স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। আর রাখাইন রাজ্যে বাসযোগ্য এবং নিরাপত্তার নিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি না করার কারণে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায় না। উখিয়া, টেকনাফের ৩২ আশ্রয় শিবিরে রোহিঙ্গাদের মাঝে একটি কথাই চাউর হয়ে আছে সেটা হচ্ছে-রাখাইনে ফিরে গেলে তাদের ওপর আবার দমন-নিপীড়ন চলবে। কেননা, মিয়ানমার সরকার তাদের প্রণীত নীলনক্সা অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করতে তৎপর। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক ব্যাপক চাপ থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার নিজেদের স্বার্থে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি। সেখানে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করতে মানবাধিকারের যে চরম বিপর্যয় ঘটানো হয়েছে সে ইস্যুতে আগামী মঙ্গলবার জেনেভায় মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার কর্মসূচী রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেদন নিয়ে তদন্ত দলের আলাদা সংবাদ সম্মেলন হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার দমনপীড়ন চালানোর সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত করবে, যাতে থাকবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন দিক। জাতিসংঘের তদন্ত দল বর্তমান সময়ে মনে করছে ইতোমধ্যে দু’দফায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার মূল কারণ রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়া। রাখাইন রাজ্যে এখনও যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে তাদের সঙ্গে বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। ওপারের রোহিঙ্গারা এপারের রোহিঙ্গাদের চব্বিশঘণ্টা যেমন খোঁজখবর পেয়ে থাকে, তেমনি এপারের রোহিঙ্গারাও ওপারের অবস্থা নিয়ে সর্বক্ষণিক ওয়াকিফহাল থাকছে। এতে এপার ও ওপারের রোহিঙ্গারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে তৎপর। এপারের রোহিঙ্গারা নিশ্চিত হয়েছে ওপারে তাদের বাড়িঘর, জমিজমা ফিরিয়ে দেয়ার কোন লক্ষণ সে দেশের সরকারের নেই। উপরন্তু ফিরে গেলে তাদের রাখা হবে আশ্রয় কেন্দ্রে। যেখানে এদেশের আশ্রয় ক্যাম্পের সঙ্গে সে দেশের আশ্রয় ক্যাম্পের পরিবেশের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। এদেশে আশ্রিত হয়ে রোহিঙ্গারা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে অনুরূপ সুবিধা প্রাপ্তির কোন লক্ষণ তারা দেখছে না। যে কারণে বাপ-দাদার দেশে যুগ যুগ ধরে বসতি করেও এখন তারা ফিরে যেতে চাইছে না। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য মানবাধিকার বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই। ফলে এসব বিষয় অবহিত হয়ে রোহিঙ্গারা দু’দফায় প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণের দিন বেঁকে বসে। একজনও ফিরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। উপরন্তু মহাসমাবেশের মাধ্যমে তাদের অসম্মতি জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ মানবিক দিক বিবেচনা করে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে যেভাবে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে তাতে তারা সন্তুষ্ট। মোদ্দাকথা, এপারের আশ্রয় তাদেরকে অনাবিল শান্তি এনে দিয়েছে। আর ওপারের বর্বরতা তাদেরকে চরম ভীতির মাঝে রেখেছে। রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রাপ্তির ঘটনা তদন্তে দুদক ॥ রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে বাংলাদেশী এনআইডি ও পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার তদন্তে দুদক অনিয়ম ও জালিয়াতির বহু তথ্য পেয়েছে। পাসপোর্টের চট্টগ্রামের দুটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে দুদক দেড়শ’রও বেশি রোহিঙ্গার তথ্য পেয়েছে, যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের সার্টিফিকেট নিয়ে এনআইডি কার্ড বানিয়েছে এবং পরবর্তীতে এসব নিয়ে পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়ার তৎপরতায় লিপ্ত।
×