ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শুক্রবার দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়েছে। এমন আবহাওয়া এডিস মশা প্রজননের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রোদেলা আবহাওয়া অনেকাংশে এডিস মশার প্রজনন কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। ফলে সারাদেশে নতুন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক হ্রাস পেয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে সরকারী পরিসংখ্যানেই সারাদেশে এখনও প্রায় তিন হাজার ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে। শুক্রবারও ঢাকার বাইরে দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। ঢাকার বাইরে স্থানীয়ভাবে মশক নিধন এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, সময় নিয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়লে রাস্তাঘাট, অলিগলিসহ খোলা জায়গায় পানি জমে থাকে। আর এই পানিতে ব্যাপক মাত্রায় প্রজনন ঘটনায় এডিস মশা। রোদ উঠলে হ্রাস পায় এডিস মশার প্রজনন কার্যক্রম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুক্রবার গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৬৭৩ জন। সারাদেশে রবিবার পর্যন্ত মোট রোগীর ৯৬ শতাংশ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তবে ঢাকার বাইরে নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি রয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি ঢাকায় ২২৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৪৪ জন। সারাদেশে বর্তমানে ভর্তি ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু রোগীর সর্বমোট সংখ্যা ২৯০০ জন। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১২৮২ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৬১৮ জন। এ বছর জানুয়ারি থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি ও ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮০,০৪০ ও ৭৬,৯৩৭ জন। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুসন্দেহে ২০৩টি মৃত্যুর তথ্য প্রেরিত হয়েছে। তাদের মধ্যে আইইডিসিআর ১০১টি মৃত্যু পর্যালোচনা সমাপ্ত করে ৬০টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। জেলা ও উপজেলায় স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা ॥ দেশের সব ক’টি বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। রাজধানীতে আক্রান্তদের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক দু’প্রকার এডিস মশার মধ্যে ‘এডিস এজিপ্টি’ শহরে এবং ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ গ্রামাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। ফলে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে আক্রান্ত হয়ে গ্রামাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন তাদের শরীর থেকে ডেঙ্গুর জীবাণু টেনে নিয়ে গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়াতে পারে ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ মশা। এ বিষয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এ এস এম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ঢাকায় আক্রান্তদের অনেকে গ্রামে চলে গেছেন। ডেঙ্গু মশা দু’ধরনের হয়ে থাকে। গ্রামাঞ্চলে ছড়ানোর আরেকটি কারণ হলো, ডেঙ্গু বাহক ‘এডিস এজিপ্টি’ মশা যেমন নাগরিক মশা, শহরের মশা। এ ধরনের মশা শহুরে এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘরে থাকে। ডেঙ্গুর আরেকটি বাহক ‘এডিস এ্যালবোপিকটাস’ থাকে গ্রামাঞ্চলে। এই এডিস এ্যালবোপিকটাস যদি কোনও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড় দেয় তাহলে এই মশাটিও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই গ্রামে যারা যাচ্ছে তারা গিয়ে সেখানে যে মশার কামড় খাচ্ছে তাতে করে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। ফলে গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর বিস্তার লাভের সুযোগ রয়ে যাচ্ছে। আর গ্রামাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। যশোর ॥ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস থেকে জানান, যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সালামতপুর গ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মেহেরুন নিসা (৫০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক দফাদারের স্ত্রী। মেহেরুন নিসার দেবর নূর ইসলাম জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত মেহেরুন নিসাকে গত ৬ সেপ্টেম্বর ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার সময় তিনি মারা যান। এদিকে, শার্শার পুলিশ ও পুলিশের সোর্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগকারী সেই নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শার্শার গোড়াপাড়া পুলিশের ইনচার্জ এসআই খায়রুল ও পুলিশের সোর্স কামারুলের বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় ধর্ষণের অভিযোগকারী সেই নারী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। গত বুধবার ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করতে দেন। বৃহস্পতিবার তার রিপোর্টে রক্তে কম থাকার রিপোর্ট পাওয়ার পর ডাক্তার তাকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টসহ উপস্থিত হলে ডাক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ৪ এ ভর্তি করে নেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৪৯০৮৯/১৭৪। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
×