ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আরও এক আসামি গ্রেফতার, ওসির বিরুদ্ধে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আরও এক আসামি  গ্রেফতার, ওসির  বিরুদ্ধে বিপুল  সম্পদ অর্জনের  অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৩ সেপ্টেম্বর ॥ পাবনায় গণধর্ষণের পর গৃহবধূকে থানা চত্বরে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আর এক আসামি ওসমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ভোরে শহরের সিংগা বাইপাস এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ওসমানের বাড়ি সদর উপজেলার সাহাপুর যশোদল গ্রামে। এ নিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে সবাইকে গ্রেফতার করা হলো বলে পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানায়। মামলার বাকি আসামিরা হলেন সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ঘন্টু (৩৮) এবং সাহাপুর যশোদল গ্রামের রাসেল আহমেদ, হোসেন আলী ও মোঃ সঞ্জু। সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাপুর যশোদল গ্রামের এক নারীকে ২৯ আগস্ট রাতে একই গ্রামের আকবর আলীর ছেলে রাসেল আহমেদসহ চার সহযোগীকে নিয়ে অপহরণের পর টানা চারদিন ধরে গণধর্ষণ করে। নির্যাতিতা পরে বাদী হয়ে পাবনা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে এসআই একরামুল হক রাসেলকে আটক করে। পুলিশ রাসেলকে আটক করলেও মামলা নথিভুক্ত না করে থানা চত্বরে একটি চক্রের মধ্যস্থতায় কাজী ডেকে এনে পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে রাসেলের সঙ্গে ধর্ষিতাকে বিয়ে দিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করেন থানার ওসি ওবায়দুল হক। মামলা না নিয়ে গণধর্ষণের শিকার ৩ সন্তানের জননীকে এক ধর্ষকের সঙ্গে সদর থানায় বিয়ের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দায়িত্বে অবহেলায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার এবং এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন। এ মামলায় প্রধান আসামি রাসেল ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ঘটনার বিচার দাবিতে শহরে মানববন্ধন করেছে মহিলা পরিষদ। অন্যদিকে বর্বরোচিত এ ঘটনায় তদন্তে মন্ত্রিপরিষদ ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ইবনে মিজান পুলিশ সুপারের বরাত দিয়ে বলেন, গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে থানায় ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার ঘটনায় জেলা পুলিশ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিলে পুলিশ সুপার পাবনা থানার ওসি মোঃ ওবায়দুল হককে প্রত্যাহার এবং থানায় কাজী ডেকে আনার জন্য এসআই একরামুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দায়িত্ব অবহেলা ও ধর্ষণ মামলা না নেয়ার কারণে ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নির্দেশে পাবনা জেলা প্রশাসক বৃহস্পতিবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটির সদস্য হচ্ছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ নেওয়াজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান এবং ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার আবু জাফর। এ দিকে সদর থানার প্রত্যাহারকৃত ওসি ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সখ্য গড়ার মাধ্যমে অর্থ বিত্তের পাহাড়ের অভিযোগ উঠেছে। তার প্রশ্রয়ে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা একের পর এক অপরাধ করলেও বরাবরই থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। খুন, ধর্ষণ, মাদক কারবার কিংবা যে অপরাধই হোক না কেন সন্ত্রাসীদের মধ্যস্থতায় টাকার বিনিময়ে সব কিছুরই সমাধানদাতা ছিলেন ওসি ওবাইদুল। তিন সন্তানের জননী নির্যাতিতা গৃহবধূর দায়ের করা গণধর্ষণের অভিযোগ থেকে শরিফুল ইসলাম ঘন্টু নামের এক আসামিকেই বাঁচাতেই সদর থানা চত্বরে বিয়ের আয়োজন করেন ওসি ওবাইদুল হক।
×