ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দেশে গড়ে উঠবে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দেশে গড়ে উঠবে যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ

ওয়াজেদ হীরা ॥ স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক, যোগ্য ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে। তাই স্কাউটিং কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করছে সরকার। বিশেষ করে কাব পর্যায়ের স্কাউট সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার কাব তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্কাউটস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। গত ৩ সেপ্টেম্বর একনেক কমিটি কাব স্কাউট প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। যা এ বছর থেকে ’২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। বছর হিসেবে ব্যয়ের এ বছরেই হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে পুরো অর্থায়ন হবে সরকারী। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্কাউট খুবই ভাল একটি বিষয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী। আমরা যে প্রকল্পটি নিয়েছি অনুমোদন দিয়েছি -এর মাধ্যমে স্কাউটিং সংক্রান্ত কাজ আরও আধুনিকায়ন হবে, আরও ভাল অবস্থান হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্কাউটিং বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক যুগোপযোগী আন্দোলন। এটি শিশু-কিশোর ও যুবকদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও ব্যক্তিজীবনে তার ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটায়। ১৯১৪ সালে বাংলাদেশ ভূখন্ডে প্রথম স্কাউটিং শুরু হয়। স্বাধীনতার পর স্বাধীন দেশে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস’ নব উদ্যমে নতুন প্রেরণায় অগ্রযাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতার পর ৫৬ হাজার স্কাউট নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমানে দেশে স্কাউটের সংখ্যা ১৬ লাখ ৭৯ হাজার। সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বাংলাদেশ স্কাউটস বিশ্বে পঞ্চম স্থানে। এর মধ্যে কাব রয়েছে সাত লাখ ৬৫ হাজার। আর প্রস্তাবিত নতুন উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে কাব সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ লাখে। বাংলাদেশ স্কাউটস সূত্রে জানা গেছে, ৬ থেকে ১১ বছর বয়সীরা কাব, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের স্কাউটস এবং ১৭ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের রোভার স্কাউটস বলা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের ৬৫ হাজার ৯৯ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০ হাজার সাতাশটিতে কাব লিডার নেই। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানে ৩০ হাজার ৭শ’ নতুন কাব দল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সক্রিয় ইউনিট আছে, সেখানে একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিট লিডারের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে তহবিল সঙ্কটে স্কাউটের প্রতিবছর বেশিসংখ্যক দল উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছে না। এছাড়া ইউনিট পর্যায়ে সপ্তাহে একদিন নিয়মিত প্যাক মিটিং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উৎসাহ-উপকরণ ও কাবিংয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। ফলে ইউনিট লিডারদের নিয়মিত বেসিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং বার্ষিক অন্যান্য কাব কার্যক্রম বাস্তবায়নে ট্রেনিং রুম, ট্রেনিং ইকুইপমেন্ট, প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থী আবাসন, তাঁবু সঙ্কট ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ জন্য এ প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর এ বছরের ৩০ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হয়, অনুমোদন পাওয়া গেছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে জাতীয় অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ৩৬ নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, বারোটি কাব স্কাউট ভবন সংস্কার ও সম্প্রসারণ, কাব লিডারদের প্রশিক্ষণ, ইউনিটের উৎসাহ-উপকরণ ক্রয়, সমাজ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও কাব লিডারদের সম্মানী দেয়া। বিষয়টি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জানিয়ে প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পে সারাদেশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ সাধন হবে বলে প্রকল্পটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রকল্পের বছরভিত্তিক ব্যয় বিভাজনে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৮ কোটি ৫৪ লাখ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় হবে ৭৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ কমিশনের অভিমত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটির মাধ্যমে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাব-স্কাউটিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ ঘটবে।
×