ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুরনো কাঠামো নিয়ে দ্বিগুণ সেবা দিচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  পুরনো কাঠামো নিয়ে দ্বিগুণ সেবা দিচ্ছে দুই সিটি কর্পোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চারদিকে ডেঙ্গু আতঙ্ক। প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন আক্রান্ত রোগীরা। এ অবস্থায় ডেঙ্গু মোকাবেলাসহ মশক নিধন এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। নেই পর্যাপ্ত লোকবল। পাশাপাশি ফগার ও হুইলব্যারোসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির সঙ্কট থাকায় মশক নিধন পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না। পুরনো কাঠামোর মাত্র ৪৮ শতাংশ জনবল নিয়ে সংস্থা দুটি তাদের এলাকায় দ্বিগুণ নাগরিক সেবা দিয়ে আসছে। এ কারণে প্রতিটি সেবা-সংক্রান্ত কার্যক্রমে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর নতুন করে ১৬টি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় সংস্থা দুটির আয়তন বেড়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি, বরং বিভক্ত হওয়ার সময় দুই ভাগ হয়েছে আগের জনবল। এজন্য যথাযথ নাগরিক সেবা পাচ্ছে না নগরবাসী। বাড়ছে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মোট ১২৯ ওয়ার্ডের জন্য মশক নিধনকর্মী রয়েছেন ৭০৯ জন। যদিও বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুই সিটি কর্পোরেশন অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রতিদিনের মজুরি চুক্তিতে পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধনকর্মী নিয়োগ দিতে যাচ্ছে। জানা গেছে, জনবল সঙ্কটের পাশাপাশি দুই সিটি মিলে মোট ফগার মেশিন আছে ৬৭১টি এবং হস্তচালিত মেশিন আছে ৮৮৫টি। এর মধ্যে অনেকগুলো মেশিন বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। বিভক্ত হওয়ার পর ঢাকা উত্তরের জন্য এক হাজার ৮৫৮ এবং দক্ষিণের জন্য দুই হাজার ৪৮২ জনবল চূড়ান্ত করা হয়। অর্থাৎ দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে মোট জনবল চার হাজার ২৮০ জন। যদিও অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের জনবল ছিল পাঁচ হাজার ১১৭ জন। সদ্য যুক্ত হওয়া এলাকাসহ দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস। আয়তন ২৭০ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড সংখ্যা ১২৯টি। এর মধ্যে দক্ষিণের ৭৫টি এবং উত্তরে ৫৪টি। এত বিশাল আয়তনের জায়গায় মশা নিধন কাজে রয়েছেন মাত্র ৭০৯ জন কর্মী। এদিকে ডিএনসিসি ২০১৮-১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ব্যয় ধরে ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি টাকা। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি টাকা। অন্যদিকে ডিএসসিসি ২০১৮-১৯ অর্থবছর মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যয় ধরে ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ওষুধ কিনতে ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি টাকা। কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যা করতে ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। এ বিষয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলেন, মশক নিধনসহ পরিচ্ছন্নতার জন্য আমরা সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। তবে আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে, এত বড় এলাকার জন্য এত কম জনবল দিয়ে সব কাজ করানো আসলেই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তারপরও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি। মেয়র আতিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করতে এসে আমরা শিখেছি যে, এটা শুধু কোন মৌসুমের কাজ নয়। বরং এটা সারাবছর অর্থাৎ ৩৬৫ দিনের কাজ। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, তবে আমাদের লোকবল সঙ্কট আছে। ডিএনসিসির এলাকা থেকে ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা নিধন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, হেঁটে হেঁটে মশা মারার পরিবর্তে কম সময়ে অধিক স্থানে ওষুধ ছিটাতে মোটরসাইকেল ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
×