ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য যাত্রা

এই দেশ আমাদের। আমরা গর্ব করি এই দেশটিকে নিয়ে। গর্ব করার মতো আমাদের একটি রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। মাতৃভাষা রক্ষায় আমরাই বুকের রক্ত দিয়েছি। বাঙালীর ইচ্ছার প্রতিফলন আমাদের স্বাধীনতা। হাজার বছরের ইতিহাসে এই বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান আমাদের জাতির পিতা। বাঙালী জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এই চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশ হবে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে ৭২ সালে আমরা রচনা করি একটি আদর্শ সংবিধান। সদ্য স্বাধীন দেশটিকে নিয়ে আমাদের মনে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট থমকে যায় আমাদের স্বপ্নের পথে চলা। পাকিস্তানের ধারায় আমাদের দেশেও চালু হয় সামরিক শাসন। স্বাধীনতা বিরোধিতাকারীরা তখন নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় আসে। শুধু জাতীয় পতাকা আর জাতীয় সঙ্গীত ছাড়া সবই পাকিস্তানের ধারায় চলতে থাকে। এমনও দেখা যায় একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, ‘আমি আর দেশ চালাতে পারছি না, মন্ত্রীদের বাড়িতে আজ ডাকাত, খুনীদের আশ্রয়স্থল, তাই সেনাবাহিনীর হাতে রাষ্ট্রের ভার তুলে দিলাম।’ দেশ তখন জনগণের ইচ্ছায় নয়, পরিচালিত হচ্ছিল মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ইচ্ছায়, যারা পাকিস্তানের আদর্শকে অন্তরে ধারণ করত। ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসনের অবসানের পর ভেবেছিলাম দেশ আবার স্বাধীনতার মূল ধারায় ফিরে আসবে। অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা দুই নেত্রী হবেন আমাদের কান্ডারি, বাঙালী জাতির আদর্শের প্রতীক। একজন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শই যার আদর্শ। আর একজন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনীতিতে তার দল এবং পথ আলাদা হতে পারে; কিন্তু আদর্শের ক্ষেত্রে তিনিও হবেন আপোসহীন। কিন্তু ’৯০-এর পর সামরিক শাসনের অবসান ঘটলেও একই আদর্শে দেশ পরিচালিত হতে থাকে। ’৯১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশে চালু হয় এক নতুন রাজনৈতিক ধারা। যাকে রাজনীতি না বলে বলা চলে Political Business. ’৯১-এর নির্বাচনটি ছিল ভোট কেনাবেচার মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার উপায় মাত্র। আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হলেও অর্থের প্রভাবে নির্বাচনের ফলাফল রাজনৈতিক নেতাদের হাত থেকে ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। ক্ষমতায় আসে বিএনপি কিন্তু রাজনীতি চলে যায় অরাজনৈতিকদের হাতে। রাজনীতি হয়ে উঠে লাভজনক ব্যবসা। অর্থের প্রভাবে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের এই প্রক্রিয়াকেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন সূক্ষ্ম কারচুপি। তখন থেকেই রাজনীতিতে বিনিয়োগ হয়ে উঠে সবচেয়ে লাভজনক বিনিয়োগ। নীতি নৈতিকতাহীন রাজনীতিতে মূল লক্ষ্য হয় ক্ষমতা দখল। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্বে এসে রাজনীতিকে তথা দেশকে স্বাধীনতার আদর্শের ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। দেশের সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে তার জীবননাশের চেষ্টায় বার বার আঘাত আসতে থাকে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে তাকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে থামায় এমন শক্তি কার, ধমনীতে যে বঙ্গবন্ধুর রক্ত। পিতা যদি দেশের জন্য হাসতে হাসতে বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন, তবে মেয়ে কেন নয়? মেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে। দেশকে অপরাধ এবং দুর্নীতিমুক্ত করে রাজনীতিকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে তিনি একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কোন হুমকি তাকে থামাতে পারেনি। তাই এদেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতার বাইরে রেখে দেশ গঠনে তার সমস্ত পদক্ষেপকে থামিয়ে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। তার দক্ষতা, সততা আর দেশবাসীর প্রতি তার ভালবাসা আমাদের প্রত্যাশা দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। সততা, দক্ষতা আর ভালবাসা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রমাণ করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর পদটি আজ আদর্শের প্রতীক। তার মতো একজন আলোকিত মানুষকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর পদটি আজ আলোকিত। যে আলোয় বাংলাদেশ আজ আলোকিত আলোর প্রতীক। এ সত্যটি আজ আমরা অন্তরে ধারণ করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অসৎ হতে পারেন না। তিনি মিথ্যা বলতে পারেন না, তিনি কোন অপরাধ করতে পারেন না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বাংলাদেশের প্রধানন্ত্রীকে নতুন করে সঙ্গায়িত/মূল্যায়িত করার সময় এসেছে এবং আমাদের সকলের শ্রদ্ধার আসনটি আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য। এই পদটিকে যিনি কলঙ্কিত করবেন নৈতিক বিচারে এই পদে থাকার তার কোন অধিকার থাকবে না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা এবং আদর্শের আলোকে আলোকিত প্রধানমন্ত্রীর পদে যিনিই থাকবেন তাকেও একজন আলোকিত মানুষ হতে হবে। দেশবাসীর বিশ্বাস ছিল আমাদের আর একজন নেত্রী এদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও একজন আলোকিত মানুষ। বঙ্গবন্ধুর পর দুই নেত্রীই ছিলেন আস্থা এবং ভরসারস্থল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এদেশের ১৬ কোটি মানুষের বিশ্বাসে আঘাত করেছেন। এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আদালতের রায়ের তিনি আজ অভিযুক্ত। টাকা আত্মসাৎ এবং কোটি মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গে এই সামান্য সাজা বেগম জিয়ার জন্য কি যথেষ্ট? বিশ্বাস ভঙ্গের কোন সাজা হবে না? দেশবাসী যারা বেগম জিয়াকে ভালবেসে, শ্রদ্ধা করে তাদের নেতার আসনটিতে বসিয়েছিল, বেগম জিয়া তাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। আমাদের দেশে রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক এমন অনেক ব্যক্তিত্ব আছেন যারা জাতির বিবেক বলে পরিচিত। তারা সবসময় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ক্ষেত্রে নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান করেন। দুদলের কারও পক্ষে বা বিপক্ষে যায় এমন সত্য কথাটিও তারা বলতে পারেন না। নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রেও তারা আপোসহীনভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখেন। বিচারে বেগম জিয়ার সাজা হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন মন্তব্য জাতি আজও পায়নি। অর্থ আত্মসাতের মামলায় এরশাদের সাজা হওয়ার পর ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, গরু চুরির অপরাধে একজন গরু চোরকে যে সাজা দেয়া হয়, সেই বিবেচনায় এরশাদের কত বছরের কারাদন্ড হওয়া উচিত। আজ একই রকম অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়ার আইনজীবীদের আইনের উপদেশ দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে ড. কামাল হোসেন তাদের কাছে আজ অঙ্গীকারবদ্ধ। এই জন্যই কি কিছু নীতিহীন রাজনীতিবিদরা বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোন কথা নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতায় যাওয়ার ভাবনায় তারা তাদের মুখোশটুকুও আর ধরে রাখতে পারেনি। এবার ক্ষমতায় যেতেই হবে। মার্কায় কি আসে যায়- হোক না ধানের শিষ। হোক না জামায়াতের সঙ্গে সখ্য, তাতে কি। স্বাধীনতার এত বছর পর এদেশের মানুষ আর জামায়াতকে নিয়ে ভাবে না। বিশেষ করে তরুণদের জামায়াত নিয়ে ভাবার সময় কোথায়। তারা এখন সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তির মাধ্যমে তাদের সত্যের পথ চিনতে দেয়া হবে না। সরকারের বিপরীতে যে কেউ আসুক তরুণরা তাকেই সমর্থন দেবে। তারা ভেবেছিল তাদের কুৎসিত চেহারাটা যা এতদিন মুখোশের আড়ালে ছিল সেটা এদেশের মানুষ/ আমাদের তরুণরা চিনতে ভুল করবে। কিন্তু সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে বাঙালী কখনও ভুল করে না। তারা সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্ব বেছে নিতে জানে। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বাঙালী সেদিন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল; আজ দুর্নীতি সন্ত্রাস আর মাদকের হাত থেকে মুক্তির আশায় এ দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে একইভাবে তাদের পূর্ণ সমর্থন জানায়। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাবে ’৭০-এর নির্বাচন আর ২০১৮-এর নির্বাচনের ফলাফলে কোন পার্থক্য নেই। সেদিন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে ছিল বজ্রকণ্ঠ, আজ জননেত্রীর কণ্ঠে মাতৃত্বের আহ্বান। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির পিতা, আর জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের মানুষের কাছে আজ Mother of humanity। ১৯৭১ আর ৭৫-এর হায়েনারা চেহারা পাল্টে এদেশের রাজনীতিতে আজ নতুন রূপে নতুন কৌশলে। কিন্তু আমরা বাঙালীরা এদেশে আর ১৫ আগস্ট হতে দেব না। কেউ আর বাংলাদেশকে বাংলাস্তান বানাতে পারবে না। ’৭৫-এর পর আজ আবারও এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক হতে পেরেছে। তার নেতৃত্বে বাঙালী আজ শুধু অপ্রতিরোধ্যই নয়, কৃতিত্বে বিশ্বে আজ আমরা সর্বোচ্চ মানবিক জাতি হিসেবে পরিচিত। লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
×