ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সব সোশ্যাল মিডিয়া সোশ্যাল নয়

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সব সোশ্যাল মিডিয়া সোশ্যাল নয়

বেশ কিছুকাল হতে লক্ষ্য করছি- YOUTUBE নামের একটি অনৈতিক মিডিয়া বাজারে চালু করা হয়েছে। যাতে যেসব প্রচার করা হচ্ছে, তা মোটেই সহ্য করার মতো নয়। একদিকে মানুষ ও পশুর মিলিত ভিডিও আরেকদিকে কিছু পাগলের অশ্লীল রাজনৈতিক বক্তব্য- এখনই এসব বন্ধ করা না গেলে তরুণ সমাজ বিপথগামী হতে পারে। এরই মধ্যে আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি নৈতিকতা এবং আদর্শের প্রশ্ন। দেখা যায় ৫ বন্ধু এক সঙ্গে আড্ডা মারতে রমনা পার্ক কিংবা কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। ৫ বন্ধু মেয়েও হতে পারে ছেলেও হতে পারে কিংবা ছেলে-মেয়ের মিশেলও হতে পারে। একটা সময় ছিল যখন ছেলে-মেয়েতে বন্ধুত্ব হতো না- হতো প্রেম। আজকাল আর সে অবস্থা নেই। প্রেম বন্ধুত্ব সবই হয়। দেখা গেল ৫ বন্ধু রেস্টুরেন্টে গিয়ে এক টেবিলে বসলেন, কি খাবে না-খাবে জানতে বা অর্ডার নিতে বেল বয় কয়েকবার ঘুরে গেল কারও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই হাতের যন্ত্রটিতে মগ্ন। ডওঋও থাকলে তো কথাই নেই। রেস্টুরেন্টের গরম চাও তুচ্ছ। কপির কথা তো মনেই থাকে না। এমনভাবে মগ্ন হয়ে থাকে যে- এক টেবিলে বসলেও যেন কেউ কাউকে চেনে না, জানেও না। এটা বলছি আমি সুস্থধারার ভিডিও অর্থাৎ Facebook-এর কথা। এর বাইরে যে ঠওউঊঙ সেগুলোর কথাই বলছি যে গুলোতে মানুষ আর পশুতে কোন ভেদাভেদ নেই। সব একাকার হয়ে যায়। যেগুলোর ব্যাপারে এখনই চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। অবশ্য এটা ঠিক যে- কোন ভাল কাজের সঙ্গে কিছু খারাপ কাজও চলাচল করে। আনাগোনা করে এবং আমি সেগুলোর কথাই বলছি। অর্থাৎ খারাপ দিকটার কথা। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে। এবার YOUTUBE-এর নোংরা VIDEO-এর পাশাপাশি কিছু পাগলের প্রলাপের কথা বলছি। এই পাগলদের একটি খবর এসেছে এক মিলিটারি কুদেতার ঘর থেকে। লেখাপড়ায় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট হলেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থোপার্জনের ক্ষেত্রে তার পান্ডিত্যের কোন অভাব নেই। অল্প বয়সেই শাইন করেছেন এবং অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে বিদেশে পলাতক অবস্থায়ও ধনাঢ্য জীবনযাপনে কোন সঙ্কট হচ্ছে না। কোথায় পায় এত টাকা? ওই গৌরিসেনের নামটা কি জানা দরকার? ক’দিন আগে আমি আমার Samsung cell phone open করলাম। দেখি লাল চতুর্ভুজের মাঝখানে ছোট্ট সাদা ত্রিভুজ, নিচে লেখা YOUTUBE। সার্চ করার সঙ্গে সঙ্গেই দেখি কালো স্যুট-টাই পরা ওই মিলিটারি কুদেতার সন্তানটি বক্তৃতা করছেন হাত নেড়ে নেড়ে। তার বক্তব্যের ভাষা শুনলে গা রি রি করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নাকি স্বাধীনতা চাননি? চেয়েছে ওদের জিয়া। এবার বলুন পাঠক, এসবও আমাদের শুনতে হচ্ছে। এই বেয়াদবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারেরও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সমালোচনা করে। যে কেউ সরকারের সমালোচনা করতে পারে কিন্তু তা হতে হবে সত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। আসলে ও মনে করে ফেরারি আসামি হোক আর যাই হোক বিলাতে নিজেকে বিলাতি বিলাতি ভাবতে ভাল লাগে। ওখানে বসবাস করলে সবাই বিলাতি হয়ে যায়? কিন্তু ও জানে না, বিলাতি সাহেবরা শুধু সন্তান লালন-পালন করে না। সঙ্গে সঙ্গে চতুষ্পদ আরেকটিও পালে... না, থাক নামটি বললাম না। রুচি হচ্ছে না। তবে এটা জানি লন্ডন পালিয়ে ভাল করেছে। নইলে এখন কারাগারে থাকতে হতো। এরপর আসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়। YOUTUBE-এ প্রতিনিয়ত গলা ফাটাচ্ছেন তিনি। বোধহয় এতে ওই YOUTUBE তাকে কিছু পয়সা যেমন Talk shwo তে অংশগ্রহণ করলে পাওয়া যায়। তবে YOUTUBE-এ এ প্রথা চালু আছে কি-না তা আমি জানি না। সম্প্রতি তার একটি বক্তৃতা শুনলাম। বক্তৃতাটি হচ্ছে একটি গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে। এমনটিই মনে হয়েছে। গ্রন্থটি রচনা করেছেন আমার প্রয়াত বন্ধু মাহফুজ উল্লাহ। সুদর্শন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। আজ তিনি জীবিত নেই। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমরা হাজী মুহম্মদ মহসীন হলে পাশাপাশি কক্ষে থাকতাম। এক সঙ্গে চা ভাগ করে খেতাম। শুনেছি তিনি নাকি খালেদা জিয়ার ওপর বিশাল এক গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপক ওই গ্রন্থের আলোচনায় খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আপোসহীন নেত্রী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। হাসি পেল। আমার কাছে ‘আপোসহীন’ এর কিছু উদাহরণ আছে : এক. ১৯৮৫ সালে আমি তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। এরশাদবিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধেছে। এমনি সময় খালেদা জিয়া বাড়ি থেকে কোথায় যেন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। ৫ দিন তার কোন খোঁজ ছিল না। এক সকালে তার পুত্র তারেক জিয়া ক্রিম কালারের একটি মিতস্যুবিসি কার চালিয়ে প্রেসক্লাবে এলো মায়ের খোঁজে। তখন ৩-৪ দিন ধরে নিখোঁজ। শুনেছি, ওই গাড়িটিও নাকি দিয়েছেন এরশাদ সাহেব। দুই. আন্দোলন চলছে। শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং সর্বোপরি আপামর গণতন্ত্রকামী জনগণ, কবি-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-শিল্পী তথা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ সংগঠন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজপথে। খালেদা জিয়াকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কেউ খবরও দিতে পারছে না। দু’দিন পর সাংবাদিকরা আবিষ্কার করলেন তিনি হোটেল পূর্বাণীতে এবং তার সঙ্গে তখনকার বিএনপি মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমান। এই হলো খালেদা জিয়ার আপোসহীনতা। আপোসহীন নেত্রীর আন্দোলনের নমুনা। এমনি আরও অনেক নমুনা দেয়া যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহাশয় এই খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের নেত্রী, আপোসহীন নেত্রী, দেশনেত্রী কত কি প্রশংসা যে করছিলেন YOUTUBE-এ, শুনে একা একা হাসছিলাম। অবশ্য এই ভদ্রলোকের দ্বারা সবই সম্ভব। যার নৈতিক শক্তি দুর্বল তার কাছ থেকে এমন বক্তৃতা নিরাশার হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। জাতীয় সংসদে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি (একজনই পেয়েছে) রুমিন ফারহানা শপথ নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেই কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লেন। সংসদকে বললেন ‘অনির্বাচিত’ এবং ‘অবৈধ’। এরপর কি তার নিজের বৈধতা থাকে? তিনি নিজে কি পার্লামেন্টের অবৈধ সন্তান হয়ে যাচ্ছেন না? আসলে কোথায় কি বলতে হবে কতখানি বলা যাবে সে মাত্রাজ্ঞান তার এখনও হয়নি। বয়স তো কম! গত বুধবার ছিল সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরের দিন। ওই দিন রুমিন ফারহানা একটি প্রশ্ন করলেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করিয়া বলিবেন কি, দেশে বর্তমানে মানুষ হত্যা হইতে মশা মারা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হয়...(?) প্রিয় পাঠক, আপনারাই বলুন এই রুমিনের প্রশ্নটির জবাব দেয়ার কি প্রয়োজন আছে? না, এটিও রুচির ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, এই রুমিনকে নিয়ে YOUTUBE আমরা এত বেশি মাতামাতি করি যে- তাকে মনে হবে কি হনুরে? তারেক জিয়ার মতো অর্বাচীন যে দলের নেতা নীতিনির্ধারক সে দলের নমিনেশনে রুমিন ফারহানার মতো সদস্যই সংসদে ঢুকবে? একটি কথা বলে আজকের লেখা ইতি টানব : খালেদা জিয়া নাকি গণতন্ত্রের সমার্থক? কিসের সঙ্গে কি...? ঢাকা ॥ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ লেখক : সংসদ সদস্য ও সিনিয়র সাংবাদিক, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব, উপদেষ্টা-সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। [email protected]
×