ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আনিকা ইসলামের ব্যতিক্রমী প্রয়াস ‘নিবেদিতা’

প্রকাশিত: ১৩:০৫, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আনিকা ইসলামের ব্যতিক্রমী প্রয়াস ‘নিবেদিতা’

সারতাজ আলীম কথায় আছে ইচ্ছাশক্তি বড় শক্তি। ইচ্ছার অদম্য বলে নাকি সব কিছুকে সম্ভব করা যায়। আজকের গল্পটা অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে নিজে এবং আশপাশের নারীদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়া একজনের। শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ই আনিকা ইসলামের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কিছু একটা করতে হবে। চারপাশ থেকে অসচ্ছল নারীদের বিশেষ করে তরুণীদের দুরবস্থা বেশ পীড়া দিত তাকে। সুপ্ত ইচ্ছার ডানামেলা ওড়া সেখান থেকেই। শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আরও দশজনের জন্য কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের রাস্তাটা সহজ করার লক্ষ্য নিয়ে নামেন আনিকা। কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রবেশের মধ্যে দিয়ে আসবে নারীর ক্ষমতায়ন, উন্মুক্ত হবে নারী অধিকারের পথ। তবে তার জন্য নিজের শিক্ষাজীবন শেষ করে আগে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা জরুরী বলে মনে করেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে কর্পোরেট দুনিয়াতে প্রবেশের পর নিজের স্বপ্ন নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করেন আনিকা ইসলাম। তিনি জানান শুরুটা মূলত ছিল ফেসবুক কেন্দ্রিক। ঢাকা চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লাতে কাজ শুরু করেন তারা। নিবেদিতা নামের সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ৩টি। নারীর ক্ষমতায়ন, অসচ্ছলদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পথ প্রশস্ত করা এবং নারী উদ্যোক্তাদের পথ সুগম করা। বর্তমানে এই সংগঠনটি নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক নানারকম প্রশিক্ষণের আয়োজন করে যাচ্ছে। শিক্ষাজীবন থেকে কর্মজীবনে গিয়ে অনেকেই যেন অথৈ জলে পড়েন। আর এই জন্য নিবেদিতা দক্ষতা নির্মাণে নানাবিধ কর্মসূচী নিয়েছে যা মূলত এই সংগঠনটিকে অনন্য পরিচয় দিয়েছে। আধুনিক কর্পোরেট পরিবেশের অনেক কিছুই আমাদের শিক্ষাসূচীতে না থাকায় হঠাৎ করেই অনেক হোঁচট খান। নারীদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি। নিবেদিতার প্রশিক্ষণের ফলে কর্পোরেট পরিবেশে একজন নারী অভ্যস্ত হয়ে ওঠার প্রাথমিক ধারণা পান। সরাসরি অনেক সময় নিজেরা প্রশিক্ষণ না দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারে এবং শিক্ষানবিসদের যোগাযোগ করিয়েও দেয়া হয়। আরেক ধরনের প্রশিক্ষণে নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসাকে বৃদ্ধি করার শিক্ষা লাভ করে থাকেন। বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর মানুষ ছোটখাটো বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও নিজেদের পণ্য সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না। সেরা পণ্য বা সেবা প্রদানের পরেও ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের অভাবে অনেক ব্যবসা শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। পণ্যের বিপণন, বিজ্ঞাপনের কৌশল, পরিবহনের মতো ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিবেদিতা হাতে-কলমে শিখিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত ৩০০ জনের বেশি নারী উদ্যোগক্তা নিবেদিতার তালিকাভুক্ত আছে যাদের সব ধরনের সাহায্য করে সংগঠনটি। তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নটাকে বড় করতে কারা কারা উদ্যোক্তাদের ঋণ দিয়ে থাকে বা কিভাবে সহজে ঋণ পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়েও সদস্যদের ধারণা দেয় নিবেদিতা। এর বাইরেও ফেসবুক গ্রুপে ১৫ হাজার সদস্যের সঙ্গে জ্ঞানমূলক আলোচনা বা দক্ষতাবৃদ্ধির নানারকম কন্টেন্ট শেয়ার করা হয়। নিবেদিতার স্বপ্নদ্রষ্টা আনিকা আরও বলেন শুরুর দিকে ঠিক কি নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছেন এটাই মানুষকে বোঝাতে কষ্ট পেতে হতো। দক্ষতা সরাসরি বাহ্যিক জিনিস নয় বলে মানুষের আগ্রহ কিছুটা হলেও কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা সবাই বুঝে এসেছে। ঠিক কোন্ জিনিসগুলোর উৎসাহ থেকে এ রকম একটি প্লাটফর্ম তৈরির দিকে ঝুঁকলেন জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে অদ্ভুত একটা প্রশান্তি আছে। তাছাড়া মেয়েদের শেখার আগ্রহ এবং ভাল কিছু করার আগ্রহ আমাকে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে থাকে।’ গত ৩১ আগস্ট ‘নিবেদিতা উইমেন সামিট ২০১৯’ আয়োজন করে এই সংগঠনটি। নারী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন সমাজের প্রত্যেকটি অংশে নিশ্চিত করা এবং নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কুমিল্লাতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঢাকার বাইরে সম্মেলনটি আয়োজন করার পক্ষে নিবেদিতার যুক্তি ছিল বড় আয়োজনগুলো রাজধানীকেন্দ্রিক না হয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলকেন্দ্রিকও হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের আধুনিকতম সংযোজন ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ক্ষুদ্র ই-কমার্স উদ্যোক্তা এবং ভবিষ্যত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বিনিময় করেন। এই সম্মেলনে নিবেদিতার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রশাসনের বহু প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং তরুণ প্রজন্মের কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ই-কমার্স এবং দক্ষতাবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত সরকারের প্রতিনিধিরা কীভাবে কেউ সরকারী পূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারেন তা তুলে ধরেন। সম্মেলনে প্রায় তিনশত নারী উদ্যোক্তা ও আগ্রহী নারী উদ্যোক্তারা অংশ নেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। আগামী ৫ বছরের মধ্যে কয়েক বিভাগে অন্তত ১০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি।
×