ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুই-সুতার কারিগর

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সুই-সুতার কারিগর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মেয়ে রীমা আক্তার। চট্টগ্রাম শহরে মা-বাবার সঙ্গে থাকে। ২০১৬-এর জেএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর তার মা-বাবা পড়াতে চান না বলে একদিন বাসায় এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আমি হতভম্ব। হঠাৎ রীমা বলল, স্যার আমি গার্মেন্টসে কাজ করে লেখাপড়া করব। ঠিকই গার্মেন্টসে কাজ করে লেখাপড়া চালাতে লাগল এবং ২০১৯ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমানে হোমিওপ্যাথি কলেজে এইচএমবিতে নৈশ বিভাগে ভর্তি হয়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার আশা রাখে। পরিশ্রম হিসেবে বেতন খুব কম। হয়রানিও আছে প্রচুর। তবু রীমা বিনীতভাবে গার্মেন্টস্ শিল্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ছোটবেলায় ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, পাড়ার ৬/৭ জন মেয়ে ঘরের বারান্দায় এসে বসে থাকত এক মুঠো ভাতের আশায়। বিনিময়ে সারাদিন কাজ করবে। বাবাকে পাড়ার লোকেরা আগেই বলে রাখতেন, এবার ধানি মৌসুমে যাতে তার মেয়েটা শ্রমিক হিসেবে রাখেন। বিনিময়ে তিনবেলা ভাত। ১৯৮৩/৮৪ সালের দিকে পাড়ার সুচিত্রা পিসি, সীতা পিসি, গীতা পিসিরা চট্টগ্রাম শহরে গার্মেন্টসে জয়েন করলেন। যতটুকু মনে পড়ে, বেতন ছিল ৫০০ টাকা। এখনও তারা গার্মেন্টসে কাজ করে। আজ তাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে কেউ শিক্ষক কেউ বা ভাল সরকারী চাকরি করছে। এক সময় যারা সারারাত উপোস থেকে ভোরবেলা একমুঠো পান্তাভাত খাওয়ার আশায় প্রতিষ্ঠিত পরিবারের ঘরের দরজায় এসে বসে থাকত, গার্মেন্টস্ শিল্প আজ তাদের ভাগ্য পাল্টে দিয়েছে। শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক শোষণ হয় এ শিল্পে। তারপরও তো আজ তারা প্রতিষ্ঠিত। নারীর প্রতি নির্যাতন কখন হতো না? নির্যাতন তো আগেও হতো। দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে কত মহাজন কত নারীর জীবন দুর্বিষহ করেছে অথবা প্রভাবশালী বলে নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতার কত ইতিহাস মাটির নিচে চাপা পড়েছে, তার তো কোন হিসাব নেই। অনেকে মান-সম্মানের দিকে চেয়ে মহাজনদের নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা প্রকাশ না করে নীরবে সয়ে গেছে। আজকে নারীর আত্মসচেতনতা বলুন, নারী জাগরণ বলুন বা নারীর অর্থনৈতিক উন্নতি বলুন, এর পেছনে বিরাট অবদান রেখে চলেছে গার্মেন্টস্ শিল্প। দোহাজারী, চট্টগ্রাম থেকে
×