ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তিনমাস বাজার থাকবে জমজমাট

কাঁচা চামড়া রফতানি হচ্ছে না, নির্ধারিত দামে কিনছে ট্যানারি

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কাঁচা চামড়া রফতানি হচ্ছে না, নির্ধারিত দামে কিনছে ট্যানারি

এম শাহজাহান ॥ ট্যানারি শিল্প বিকাশে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও আর কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এর আগে আগস্ট মাসে কোরবানির দিন দাম নিয়ে বাজারে ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি হলে কাঁচা চামড়া রফতানির ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কারসাজির কারণে এবার কোরবানির দিন চামড়া বেচাকেনা হয় পানির দামে। ক্রেতা না পেয়ে অনেকে কোরবানির চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। আর্থিক ক্ষতির কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছেন। তবে এখন সরকার নির্ধারিত দামে আড়তের কাছ থেকে চামড়া কিনছে ট্যানারি মালিকরা। সারাদেশের আড়তগুলো থেকে চামড়া আসছে ঢাকায়। আগামী তিনমাস পর্যন্ত কাঁচা চামড়া বেচাকেনার বাজার জমজমাট থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ট্যানারি মালিকরা চামড়ার আড়তমালিকদের প্রথম ধাপের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছেন। তবে বকেয়া আদায়ের হার নিয়ে অসন্তুষ্টি রয়েছে আড়তমালিকদের। এখন পর্যন্ত বকেয়ার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে। দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করার তাগিদ রয়েছে এফবিসিসিআইয়ের। কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও তা প্রক্রিয়াজাতকরণে পুরোদমে ব্যস্ত রয়েছে ট্যানারিগুলো। দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় শুরু হওয়ায় খুশি আড়তমালিকরা। এ অবস্থায় কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতির বিষয়টি নিয়ে আর ভাবছে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বরং সরকার মনে করছে, কাঁচা চামড়া ট্যানারিগুলো পেলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আপাতত আর কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি নয়। এছাড়া কেউ রফতানির জন্য অনুমতি নিতেও আসছে না। তিনি বলেন, এটির এখন আর প্রয়োজনও নেই। সঙ্কট হয়েছিল, এখন তা মিটে গেছে। এ কারণে আর কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা করে না, পরিবেশ সৃষ্টি করে। এখন এ খাতে ভাল পরিবেশ বিরাজ করছে। জানা গেছে, কাঁচা চামড়া রফতানিতে আগ্রহ কমে গেছে আড়তমালিকদেরও। ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হওয়ায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চামড়া যাচ্ছে ট্যানারিতে। এসব চামড়ার বেশিরভাগ নগদে বেচাকেনা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ টিপু সুলতান জনকণ্ঠকে বলেন, নির্ধারিত দাম দিয়ে আড়ত থেকে চামড়া কিনছে ট্যানারি মালিকরা। এ কারণে কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়টি নিয়ে তাদের তেমন কোন আগ্রহ নেই। তবে সরকার যদি এ ধরনের কোন সুযোগ দেয় তাহলে আড়তমালিকরা রফতানির প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এবার কোরবানিতে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কোরবানিদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটা দুঃখজনক। তবে সবকিছু নিয়মের মধ্যে চলে আসলে ভবিষ্যতে সবাই লাভবান হবেন। চামড়ায় কখনও লোকসান হয় না। এটা দেশের জাতীয় সম্পদ। জানা গেছে, এবার কোরবানির চামড়া বেচে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোরবানিদাতারা। তারা পানির দামেও চামড়া বেচতে পারেননি। ছয় ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ না দিলে তা পচতে শুরু করে। এমনকি ভয়াবহ দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় অনেক কোরবানিদাতা কোরবানির দিন সন্ধ্যার পর চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেন। কেউ চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছেন। এছাড়া অনেক চামড়া ড্রেন ও ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের চামড়া সংশ্লিষ্ট সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি চামড়ার উপকারভোগী এতিম, অসহায়, বিধবা ও সেবামূলক দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের জাতীয় সম্পদ নিয়ে এ ধরনের ছিনিমিনি খেলার পেছনে কারসাজির সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আড়তমালিক ও ট্যানারি সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে এবার চামড়ার বাজারে ধস নামে। মূলত স্বল্পমূল্যে চামড়া কেনার জন্য তারা জোটবদ্ধ হয়ে এ ধরনের কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, এবারের কারসাজিতে আড়তমালিক ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত। স্বল্পদামে চামড়া কেনে এখন তারা নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করছে ট্যানারিতে। অন্যদিকে, নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে। ফলে সিন্ডিকেট চক্র লাভবান হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি উঠেছে। বকেয়া পরিশোধ করছে ট্যনারি মালিকরা ॥ আড়তমালিকদের বকেয়া পরিশোধ শুরু করেছে ট্যানারি মালিকরা। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের বকেয়া টাকা দেয়া শুরু করা হয়েছে। এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি রেজাউল করিম রেজনু সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, তৃণমূল সকল চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তিনটি স্তরে ১৯৯০ থেকে ২০১০, ২০১১ থেকে ২০১৫ এবং ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত -এভাবে কাঁচা চামড়ার দাম পরিশোধ করা হবে। বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা যদি চামড়া না দেয় তাহলে ব্যবসা করা মুশকিল। তাদের যে বকেয়া ছিল তা দেয়া শুরু করা হয়েছে। কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হবে যাতে ভবিষ্যতে বকেয়া নিয়ে আর কোন সঙ্কট তৈরি না হয়।
×