গাফফার খান চৌধুরী ॥ দেশে সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মাদক নিমর্ূূলে সমন্বিত কৌশলপত্র ঠিক হচ্ছে। জঙ্গী নির্মূলের মতো মাদক নির্মূলেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আবারও মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদারের নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে মাদকের আস্তানাগুলোয় সাঁড়াশি অভিযান চালাতে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত স্পেশাল টিম। মাদক সেবন, ব্যবসা বা কারবারের নেপথ্যে সরকারী দলের কোন নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদক মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে কেউ ছাড় দিলে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযানে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিষয়ে ইতোমধ্যেই কড়া নির্দেশ এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। সর্বশেষ সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে চালানো অভিযান আরও জোরদারের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের সঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ যোগ করে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশে বলা হয়েছে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা।
বিশেষ করে মিয়ানমারের নেত্রী আউন সাং সুচি ইয়াবা নির্মূল ও পাচারে তার অপারগতার কথা বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে স্বীকার করেছেন। এজন্য ইয়াবা পাচার ও তা দেশে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অত্যধিক সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে নাফ নদীসহ সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে মাদক আসে, সেসব পয়েন্ট সিলগালা করে দিতে বলা হয়েছে। সারাদেশে মাদকবিরোধী সর্বাত্মক অপারেশন চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেখানে মাদক সেখানেই কাঁচা টাকা, আর সেখানেই অস্ত্রগোলাবারুদ। কাজেই জঙ্গী আস্তানার মতো সেখানে অভিযান চালাতে হবে। আর সেখানে অভিযান চালাতে গেলে বন্দুকযুদ্ধ হবে। এটিই স্বাভাবিক। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামের কেউ যাতে হত্যাকা-ের শিকার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকাতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও জানানো হয়েছে, সারাদেশের ৬৮ কারাগারের মধ্যে ৩টি জেলে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। পর্যায়ক্রমে আরও স্থাপন করা হবে। এসব জেলে ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার। অথচ ৮৬ হাজারের বেশি বন্দী রয়েছে। বন্দীর শতকরা ৪৪ ভাগেরও বেশি মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। সেই অভিযান আরও জোরদারের করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে গ্রীন টির আড়ালে আসা নতুন মাদক এনপিএসের বিষয়ে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডকে এনপিএস সম্পর্কে শতভাগ সতর্ক ও অভিযান চালানোর নির্দেশ রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ’১৮ সালে ৪ কোটি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলায় এক লাখ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে। ইনজেকশনের মাধ্যমে নেয়া মাদকের কারণে দেশে এইডস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই নেশাজাতীয় ইনজেকশন বিক্রির ক্ষেত্রে আরও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের ৮৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি আছে। পর্যায়ক্রমে প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই কমিটি গঠন করতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৫০ শয্যার মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করা হচ্ছে। সারাদেশে ২৯৯ বেসরকারী মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তা সঠিকভাবে চলছে কিনা তার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৭০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে অতীতের মতো তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে। পুলিশের কোন সদস্য মাদকসেবী হলে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের পর চাকরিচ্যুত করার কথা বলা হয়েছে। মাদক মামলা পরিচালনার জন্য পৃথক আদালতের প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, পাশাপাশি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে মাদক মামলা তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।