ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এটিএম জালিয়াতি সাহায্য চাওয়া হয়েছে ইন্টারপোলের

দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি ইউক্রেনের হ্যাকার ভিতালি

প্রকাশিত: ১১:১০, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুই মাসেও গ্রেফতার হয়নি ইউক্রেনের হ্যাকার ভিতালি

শংকর কুমার দে ॥ ব্যাংকের এটিএম থেকে ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ইউক্রেনের ৬ নাগরিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, ইউক্রেন থেকে ১৭৩ নাগরিক ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসেছে। বিশ্বের ১৩০ দেশে এটিএম থেকে ডিজিটাল জালিয়াতি করে ইউক্রেনের এই সিরিয়াল হ্যাকার গ্রুপ। ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির ঘটনায় ৬ জন গ্রেফতার হলেও এই চক্রের পলাতক সদস্য ইউক্রেনের ভিতালি গত দুই মাসেও গ্রেফতারের জালে আটকা পড়েনি। ব্যাংকের এটিএম বুথে অভিনব এ জালিয়াতির রহস্য উদঘাটনের তদন্ত করছে ডিবির সাইবার ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি ও গোয়েন্দা সংস্থা। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, ইউক্রেন থেকে ট্যুরিস্ট ভিসায় যে ১৭৩ জন বাংলাদেশে ঢুকেছে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে অন্তত ৩ জন এটিএম বুথ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া আত্মগোপনে থাকা ইউক্রেনের ভিতালিকে খুঁজছে গোয়েন্দা পুলিশ। ইউক্রেন থেকে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে ডিবি পুলিশ। ইতোমধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ডিবি সূত্র জানায়, গত ১ জুন সন্ধ্যায় খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সময় ইউক্রেনের এক নাগরিককে আটক করে বুথের নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি দুদিনে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নয়টি বুথে হানা দিয়ে ১৫ লাখ টাকা তুলে নেয়। দ্রুত আটক হওয়ায় বড় টার্গেট নিয়ে আসা চক্রের বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে দেশের ব্যাংকিং খাত রক্ষা পেয়েছে। তদন্তে উঠে আসে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার নয়টি বুথ থেকে মোট ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে দুটি বুথে জালিয়াত চক্র ঢুকেছিল। তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি ও সিআইডি নতুন এসব তথ্য পেয়েছে। সিআইডির এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ইউক্রেনের গ্রুপটি মূলত আন্তর্জাতিক সিরিয়াল হ্যাকার গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি পৃথিবীর ১৩০ দেশে ব্যাংকের এটিএম বুথসহ নানা ধরনের প্রতারণা করে। ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসা এই হ্যাকার গ্রুপের টার্গেট ছিল ভারতসহ আরও কয়েকটি দেশে প্রতারণা করার। ঈদের ছুটিকে টার্গেট করে তারা ঢাকায় আসে। তাদের ধারণা ছিল, এ সময় নিরাপত্তা শিথিল থাকবে। তাই বুথ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে তেমন বেগ পেতে হবে না। ইউক্রেনের এই প্রতারক চক্র ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নয়টি বুথে ঢুকেছে। এর মধ্যে খিলগাঁওয়ের দুটি, কাকরাইলের একটি, হোটেল রেডিসনের একটি, ভিআইপি রোডের একটি ও নিকুঞ্জের দুটি বুথ থেকে তারা ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের ৬ নাগরিক গ্রেফতার হলেও চক্রের ব্যাকআপ গ্রুপ বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশী ছাড়াও বিদেশী নাগরিক রয়েছে। হাতিয়ে নেয়া অর্থ তাদের কাছে রয়েছে। ইউক্রেনের এই গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশী কারও সংশ্নিষ্ট থাকার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, বুথ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ ডলারে রূপান্তর করতে হলে বাংলাদেশী কারও সহযোগিতা প্রয়োজন। গত ১ জুন রাত পৌনে আটটার দিকে খিলগাঁও থানাধীন তালতলা মার্কেটের বিপরীতে ডাচ্-বাংলা বুথে দুই বিদেশী নাগরিক মুখোশ ও টুপি পরে বুথে ঢোকে। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে করে সিকিউরিটি গার্ড জালাল দু’জনকে ধরার চেষ্টা করলে তারা পালাতে চায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দেনিস ভেতোমস্কি নামের এক বিদেশীকে আটক করা হয়। খবর পেয়ে খিলগাঁও থানা পুলিশের একটি দল সেখানে যায়। পরে থানা পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির একটি যৌথ দল দেনিসকে নিয়ে পান্থপথের ওলিও ড্রিম হ্যাভেন হোটেলে অভিযান চালায়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আরও ৫ জনকে। এরা হলো ভালোদিমির ত্রিশেনসকি, নাজারি ভজনোক, সের্গেই উকরাইনেতসআলেগ শেভচুক, আলেগ শেভচুক ও ভাতালি কিলিমচুক। এরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক। তাদের কাছ থেকে ম্যাগনেটিক কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল, ট্যাবসহ অন্যান্য হ্যাংকিং আলামত উদ্ধার করা হয়। ইউক্রেনের ৬ নাগরিকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। স্পেশাল ব্রাঞ্চের এক উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ইউক্রেনের যেসব নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে ও বাংলাদেশ থেকে ফেরত গেছে, তাদের বিষয়ে তথ্য নিচ্ছে এসবি। এমনকি পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ শাখা আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে আটক ছয় ইউক্রেনের নাগরিকের তথ্য জানার চেষ্টা করছে। ১৩০ দেশের এটিএম বুথ টার্গেট করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় ইউক্রেনের এই হ্যাকার গ্রুপ-এমন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করা হচ্ছে।
×