ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রশীদ খানের অনন্য অর্জন

প্রকাশিত: ১২:০০, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রশীদ খানের অনন্য অর্জন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অধিনায়ক হিসেবে চট্টগ্রামে টস করার সঙ্গে সঙ্গেই ১৪২ বছরের টেস্ট ইতিহাস পাল্টে দিয়েছিলেন রশীদ খান। মাত্র ২০ বছর ৩৪৯ দিন বয়সে আফগানিস্তানকে টেস্ট ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আর সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচ জেতানোর রেকর্ডটাও গড়লেন এ লেগস্পিনার। বিশ্বের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার হিসেবে স্বীকৃত রশীদ ম্যাচে ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ম্যাচে দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছেন ১১ উইকেট। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই এমন কীর্তি আর কারও নেই। তবে সর্বোপরি অধিনায়ক হিসেবে অর্ধশতকের পর ম্যাচে ১০ উইকেট বা তার বেশি দখলের রেকর্ডে তিনি এখন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ইমরান খান ও অস্ট্রেলিয়ার এ্যালান বোর্ডারের পাশে জায়গা করে নিয়েছেন। মাত্র তৃতীয় টেস্টে খেলতে নেমে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। আর দলকে এনে দিয়েছেন ৩ টেস্টেই দ্বিতীয় জয়। এর আগে শুধু অস্ট্রেলিয়াই নিজেদের প্রথম ৩ টেস্টের দুটিতে জিততে পেরেছিল। আফগানরা সেই বিরল কীর্তিতে অস্ট্রেলিয়াকে স্পর্শ করল বাংলাদেশকে ২২৪ রানে হারিয়ে। রশীদের রেকর্ড গড়ার সামনে একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টি। চতুর্থ দিন থেকেই তাকে এবং আফগানিস্তানকে লড়তে হয়েছে বৃষ্টির সঙ্গে। কারণ রশীদের লেগস্পিন আর আফগানদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের বিপক্ষে অসহায় হয়ে পড়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ দল। চতুর্থ দিন বৃষ্টিতে খেলা হয়নি প্রায় ৪০ ওভার। এর মধ্যেই ৩ উইকেট ঝুলিতে পোরেন রশীদ। প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটিকে ছাড়াতে পারলে দেশের জন্যই মঙ্গল। সেটা করার জন্য যেন মুখিয়েই ছিলেন। কিন্তু পঞ্চম দিন বৃষ্টির দাপটে খেলা শুরু হতে হতে ১টা বেজে যায়। মাত্র ১৩ বল হতেই আবার বৃষ্টিতে ৩ ঘণ্টা বন্ধ থাকে খেলা। পড়ন্ত বিকেলে যখন আবার খেলা শুরু হয়, তখন আম্পায়াররা জানিয়েছিলেন ১৮.৩ ওভার খেলা হবে। বাংলাদেশের তখনও বাকি ৪ উইকেট। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন রশীদ। একাই তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজকে (১২) ও তাইজুল ইসলামকে (০) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। একই টেস্টে প্রথমবারের মতো দুই ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেন এতে। এরপর একমাত্র ভরসা হিসেবে টিকে থাকা সৌম্য সরকারকেও (১৫) শর্ট লেগে ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচে পরিণত করে বাংলাদেশ দলকে গুটিয়ে দেন ১৭৩ রানে। মাত্র ৪৯ রানে ৬ উইকেট তার ক্যারিয়ারসেরা। ম্যাচে ১০৪ রানে ১১ উইকেট। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ৮ নম্বরে নেমে ৫১ রানও করেছিলেন রশীদ। আর তাতেই সাকিব আল হাসানের ৫০ রানের পর ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন। ম্যাচশেষে তিনি যে রেকর্ডের মালিক হয়েছেন তাতে কারও অংশীদারিত্ব নেই। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে নেতৃত্ব দিতে নেমেই হাফসেঞ্চুরির পর ১০ উইকেট বা তার বেশি নেয়ার প্রথম নজির সৃষ্টি করেছেন রশীদ। এর আগে কোন অধিনায়কই প্রথম ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে এমনটা করতে পারেননি। আর ১৪২ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই অধিনায়ক হিসেবে এমন নজির শুধু ইমরান ও বোর্ডারেরই ছিল। তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে এমনটা করলেন রশীদ। তবে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই এমন কীর্তিতে রশীদ অনন্য এক রেকর্ডের পাতা খুললেন। তার এমন বিধ্বংসী বোলিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনে মাত্র ১৭.২ ওভার খেলেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। ২২৪ রানের জয় পায় আফগানিস্তান। তাতেই প্রতিপক্ষের মাটিতে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই প্রথম জয় আসে। এ কীর্তি অবশ্য অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানেরও আছে। সে তুলনায় তাদের অন্য কীর্তিটা আরেকটু বেশি কৃতিত্বের। টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ে দলটি ভাগ বসিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ১৪০ বছর পুরনো এক রেকর্ডেও। নিজেদের প্রথম টেস্টে জয়ের রেকর্ড শুধু অস্ট্রেলিয়ার আছে। কারণ ১৮৭৭ সালে সেটিই ছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্ট। পরের ম্যাচেই তাদের হারিয়ে দ্বিতীয় টেস্টে নিজেদের প্রথম জয় বুঝে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। দুই বছর পর (১৮৭৯ সালে) আরেকটি সফরে এসে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় ইংলিশরা। ফলে নিজেদের প্রথম তিন টেস্টেই দুই জয়ের স্বাদ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরের বছর নিজেদের মাঠের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই নিজেদের দ্বিতীয় জয় পায় ইংল্যান্ড। সেটি ছিল তাদের চতুর্থ ম্যাচ। টেস্টে দ্বিতীয় জয় পাওয়ার পথে অস্ট্রেলিয়ানদের ধারে কাছে এতদিন শুধু ইংল্যান্ডই ছিল। ইংল্যান্ডকে টপকে এখন অস্ট্রেলিয়ার পাশে বসল আফগানিস্তান। আর অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরুর ম্যাচে এমন কীর্তি দলকে পাইয়ে দিয়েও একটি অনন্য নজির গড়লেন রশীদ। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই জয় পাওয়া পাকিস্তানের পরের জয়টি নবম ম্যাচে। মাত্র ১২ ম্যাচ খেলেই দ্বিতীয় জয় পেয়েছে উইন্ডিজরা। তাদের আগে টেস্ট খেলা শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকার লেগেছে এক ম্যাচ বেশি। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় জয় এসেছে তাদের ২০তম ম্যাচে। ভারত ৩০তম ম্যাচে গিয়ে প্রথম জয় পায়। তাদের চেয়ে মাত্র এক ম্যাচ বেশি খেলেই দ্বিতীয় জয় পেয়েছে জিম্বাবুইয়ে। আর প্রথম জয় পেতে ২৬ বছর অপেক্ষায় থাকা নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় জয়ের অপেক্ষাও কম নয়। ৫৫তম ম্যাচে এসে দ্বিতীয় জয় পেয়েছে কিউইরা। আর বাংলাদেশ দ্বিতীয় জয় পেয়েছিল ৬০তম ম্যাচে। সেটি আবার বিদেশের মাটিতে প্রথম জয় ছিল বাংলাদেশের। টেস্টে যাত্রা শুরুর ৯ বছর পর ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জয়টি এসেছিল সাকিবের নেতৃত্বেই!
×