ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে বিরোধী নেতার আসনে রওশন

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সংসদে বিরোধী  নেতার আসনে  রওশন

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবশেষে সমঝোতা হয়েছে ভাঙ্গনের মুখে পড়া জাতীয় পার্টিতে। ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বেগম রওশন এরশাদের নাম প্রস্তাব করে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। রবিবার মাগরিবের নামাজের বিরতির সময় জাপার সংসদ সদস্যরা স্পীকারের কার্যালয়ে গিয়ে তার হাতে চিঠিটি হস্তান্তর করেছেন। এরপর সংসদে অধিবেশন শুরু হলে শূন্য বিরোধী দলের আসনে বসেন রওশন এরশাদ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী দলের নেতা করার জন্য স্পীকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জাতীয় পার্টির ২৫ সংসদ সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। আমরা সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর আগে সংসদ ভবনে জাতীয় পার্টির কয়েক সংসদ সদস্য বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এরপর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা লবি থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দলের সংসদ সদস্যরা সংসদীয় দলের সভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে রওশন এরশাদকে মনোনয়ন করে স্পীকারের কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকেও একটি চিঠি দিয়ে এটা জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি বলেন, রবিবারের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বিরোধী দলের উপনেতা কে হবেন এমন প্রশ্নে জাপা মহাসচিব বলেন, বিরোধী দলের নেতা মনোনীত হওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন কে হবেন বিরোধী দলের উপনেতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোন বিরোধী নেই। গেম ইজ ওভার। মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, গত শনিবার সর্বসম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের দায়িত্ব পালন করবেন। আর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বেগম রওশন এরশাদ। রংপুরের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন এইচ এম এরশাদের পুত্র রাহগির আল মাহে সাদ। সাংবাদিকদের জাপা মহাসচিব আরও বলেন, জাপার মধ্যে সাময়িকভাবে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল তা মিটে গেছে। আমরা সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রংপুর-৩ আসনে সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ইসিতে দু’পক্ষ থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছে তা তুলে নেয়া হবে এবং দলের সিদ্ধান্ত ইসিতে জানিয়ে দেয়া হবে। এ সময় তার সঙ্গে দলের এমপি মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ এবং আবু হোসেন বাবলা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে রবিবার দুপুর ১টায় জাতীয় পার্টির সংসদীয় কমিটির যে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হয়নি। কয়েকদিন আগে জাতীয় পার্টির কে হবেন চেয়ারম্যান বা বিরোধীদলীয় উপনেতা তা নিয়ে দলের মধ্যে দুটি বলয় তৈরি হয়। রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে দলটির সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ও ফখরুল ইমামসহ কয়েকজন রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে মনোনীত করার জন্য স্পীকার বরাবর চিঠি দেন। এমনকি চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম দিয়ে নির্বাচন কমিশনেও চিঠি পাঠান তারা। অপরদিকে কাজী ফিরোজ রশীদ, আবু হোসেন বাবলাসহ প্রায় ১৪-১৫ এমপি জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার তৎপরতায় উঠে পড়ে লাগেন। কিন্তু শনিবার রাতে দলটির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা দলের মধ্যে সৃষ্ট আন্তঃকোন্দল মিটিয়ে ফেলতে সমর্থ হন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হবেন প্রয়াত এরশাদের ভাই জিএম কাদের এবং বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করবেন এরশাদ পতœী রওশন এরশাদ। সব মিলিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বর্তমানে ২৫ এমপি আছেন। এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনটিতে বিজয়ী হলে তাদের সদস্য সংখ্যা ২৬ হবে। জাতীয় পার্টিতে বিভাজন নেই ॥ এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন আর বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করবেন বেগম রওশন এরশাদ এমপি। এছাড়া রংপুর-৩ আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। বেলা ১১টায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফ করেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
×