ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা

বি.এস.এস,বি-এড (কৃষি ডিপ্লোমা)। সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় সেনবাগ, নোয়াখালী। মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫ সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। অষ্টম পরিচ্ছেদ। গবাদিপশুর খাদ্য প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যক খাদ্য । যা কিছু গবাদি পশুর দেহে আহার্য্য রুপে গৃহীত হয় এবং পরিপাক, শোষণ ও বিপাকের মাধ্যমে দেহে ব্যবহ্রত হয় বা শক্তি উৎপাদন করে তাকে গবাদিপশুর খাদ্য বলে। যেমন-গম, ভুট্টা,ঘাস, খৈল, ভুসি ইত্যাদি। গবাদি পশুর খাদ্যকে প্রধানত নিম্নোক্ত দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যথা- ১। আঁশ জাতীয় খাদ্য ২। দানাদার খাদ্য শিক্ষার্থীবন্ধুরা, এখন আমরা গবাদিপশুর খাদ্যগুলি নিয়ে আলোচনা করব- আঁশ জাতীয় খাদ্য এ জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণ আঁশ এবং কম পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়। যেমন-যেকোন খড়, প্রাকৃতিক বা চাষ করা সবুজ ঘাস হে, সাইলেজ প্রভৃতি। আঁশ জাতীয় খাদ্য গবাদিপশু চারণভূমি থেকে পেয়ে থাকে বা ঘাস কেটে পশুকে সরবরাহ করা হয়। তুলনামূলক লিগিউম জাতীয় ঘাস যেমন-আলফা-আলফা, কাউপি, খেসারি, মাস-কলাই, ইপিল-ইপিল, ইত্যাদিতে বেশী পরিমাণ প্রোটিন, শক্তি, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সাধারণ ঘাসের চেয়ে বেশি থাকে। দানাজাতীয় খাদ্য যে জাতীয় খাদ্যে কম পরিমাণ আঁশ এবং বেশি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় তাকে দানাদার খাদ্য বলা হয়। দুধাল বা মাংস উৎপাদনকারী গবাদি পশুর ক্ষেত্রে শুধু আঁশ জাতীয় খাদ্য সরবরাহ করলে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। দানাদার খাদ্যকে নিম্নোক্ত উপায়ে ভাগ করা যায়- ক) প্রাণিজ উৎস- ফিস-মিল, ব্লাাডমিল, ফেদার মিল প্রভৃতি। খ) উদ্ভিজ উৎস-গম, ভুট্টা, খৈল, ভুসি, কুঁড়া,ক্ষুদ প্রভৃতি। গবাদিপশুর ঘাস দুই পদ্ধতিতে সংরক্ষন করা যায়। যথা- ক) সাইলেজ খ) হে সাইলেজ রসাল অবস্থায় ফুল আসার সময় সবুজ ও সতেজ ঘাসকে কেটে টুকরা করে সেগুলো বায়ুরোধী অবস্থায় সংরক্ষণ করাকে সাইলেজ বলে।বাণিজ্যিকভাবে সাইলোপিটে সাইলেজ সংরক্ষণ করা হয়। গম, ভুট্টা,আলফা-আলফা, কাউপি থেকে প্রস্তুতকৃত সাইলেজে বেশি পরিমাণে শক্তি পাওয়া যায়। সাইলেজ ব্যবহারের সুবিধা ১। দীর্ঘ দিন পুষ্টিমান অক্ষুন্ন থাকে। ২। সঠিক সময়ে ঘাস কেটে সেগুলো কার্যকরী খাবার হিসাবে গবাদি পশুকে সরবরাহ করা হয়। ৩। এতে হে এর তুলনায় কম পুষ্টিমান অপচয় হয়। ৪। সাইলেজ তৈরির ফলে ঘাসের জমির সর্ব্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। ৫। সাইলেজ ঠান্ডা ও আদ্র আবহাওয়াতেও তৈরি করা যায়। শিক্ষার্থীরা, এখন আমরা সাইলেজ তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে জানব- বিভিন্ন ধরনের ঘাস দিয়ে সাইলেজ তৈরি করা গেলেও ভুট্টা ও আলফা-আলফা দিয়ে তৈরি সাইলেজ অত্যন্ত উন্নত মানের হয়। ভুট্টার সাইলেজ গবাদি পশু বিশেষ করে দুধাল গাভীর জন্য অত্যান্ত উপকারী। ভুট্টার সাইলেজে বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকে। ভুট্টার গাছের গোড়ার কালো দাগ আসার সাথে সাথে সাইলেজ প্রস্তুতের জন্য ভুট্টা কাটার উপযোগী হয়। এ সময়ে ভুট্টা গাছের শুষ্ক পর্দাথের পরিমাণ ৩০-৩৫% হয়। ভট্টা গাছগুলোকে ভুমি থেকে ১০-১২ সেমি উঁচুতে কাটা হয়। এরপর এগুলোকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়। টুকরা করা ঘাস গর্তে বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে র্দীঘদিন সংরক্ষন করা যায়। টুকরা করা গাছগুলো ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। তবে বর্তমানে গর্তের পরিবর্তে পলিথিন দিয়ে তৈরি বড় আকারের ব্যাগে সংরক্ষণ করা হয়। টুকরা করা গাছগুলো ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে বাতাস চলাচল করতে না পারে। এভাবে সংরক্ষণ করলে কোনো পুষ্টি উপাদান না হারিয়ে র্দীঘদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পশুকে সরবরাহ করা যায়। সাইলেজ তৈরির সময় গাছ টুক-রা করা ও বায়ুরোধী করার উদ্দেশ্যঃ ১। গাজনের জন্য বেশি পরিমাণে গাছের সুগার অবমুক্ত হতে পারে । ২। বায়ুরোধী হলে সুষ্ঠুভাবে গাঁজন সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাক-টিক এসিড তৈরি হয়। ৩। কোনো খাদ্য উপাদানের অপচয় ব্যতিরেকে ঘাস সংরক্ষণের জন্য এটা একটা কার্যকর ব্যবস্থা। ৪। সাইলেজ বায়ুরোধী পরিবেশে পুষ্টি উপাদানের পরিমান অক্ষুন্ন রেখে ক্ষতিকর ইস্ট, মোল্ড, ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে র্দীঘদিন রক্ষা করে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়। হে হে অতি পরিচিত এবং গুরুত্ত্বপূর্ন সংরক্ষিত খাদ্য যা সারা বছর গবাদিপশুকে সরবরাহ করা যায়। সবুজ ঘাসকে শুকিয়ে এর আদ্রর্তা ২০% বা তার নিচে নামিয়ে এনে হে প্রস্তুত হয় করা হয়। হে তৈরির জন্য এক বা একাধিক লিগিউম জাতীয় ঘাস ব্যবহার করা যায়। লিগিউম জাতীয় ঘাসে সাধারণ ঘাসের তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। লিগিউম জাতীয় গাছের মূলে রাইজোবিয়াম নামক ব্যাক্টেরিয়া বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন ধরে রাখে যা প্রোটিন গঠনের জনয ব্যবহৃত হয়। তবে লিগিউম ছাড়াও সাধারণ ঘাস দিয়ে হে তৈরি করা যায়।
×