ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে দেয়া সাক্ষাতকারে মেরিস পেইন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুচিকে চাপ দেবে অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ১২:১১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুচিকে চাপ দেবে অস্ট্রেলিয়া

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে মিয়ানমার এবং সে দেশের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা আউং সান সুচির ওপর চাপ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মিয়ানমারের প্রবল ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধন ও গণহত্যা পরিস্থিতির মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইনকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের পর অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরবে সিডনি। খবর ওয়েবসাইটের। পেইন জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলার মতো মানবিক সঙ্কটের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা সম্পর্ক অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা থেকে তারা সরে আসবে না। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে যথাযথভাবে সিডনির বার্তা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পের একটি হলো কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প। চলতি মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশের এ ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা জাতিসংঘে তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিস পেইন। এরইমধ্যে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নারীদের ওপর ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার যৌন নিপীড়নের মধ্য দিয়ে রাখাইনে গণহত্যা পরিস্থিতি জারি করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে পেইন বলেছেন, নিজের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত অথবা শরণার্থী শিবিরে পৌঁছানোর আগে ভয়ঙ্কর মানসিক যন্ত্রণার শিকার হওয়া কোন নারীর সঙ্গে যখন আপনি কথা বলবেন, তখন আপনি নিশ্চয় খুব ভালভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, এই কাজের [জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরা] গুরুত্ব কতখানি। রোহিঙ্গা নারীদের বিপন্নতাকে বুঝলে তাদের নিরাপদ-মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের স্বার্থে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব আনার গুরুত্বও অনুধাবন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৭ সালের আগস্টে সঙ্কট শুরুর পর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সহায়তার জন্য ৭ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রস্তাব দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দেয়া সামরিক বরাদ্দ বাতিল করে তারা। পেইন বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে কেবল অসামরিক কাজে তহবিল দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যেন উর্ধতন সেনা নেতৃত্ব সিডনির বার্তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়। তখন থেকেই অস্ট্রেলিয়ার দিক থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেয়ার মানে হলো, দুর্যোগ মোকাবেলা কিংবা মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মতো জায়গাগুলোতে সহায়তা দেয়া। পেইন জানিয়েছেন, এই সহায়তার পরিমাণ ৪ লাখ মার্কিন ডলার। তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা যে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আছেন, তাদের বেশিরভাগই দেশে ফিরে যেতে চান। তবে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে সেখানকার পরিস্থিতি প্রতিকূল। পেইন মন্তব্য করেন, প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছামূলক, হতে হবে টেকসই। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ও মন্ত্রী পেইন চলতি মাসের শেষের দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দেবেন। তখন তারা অন্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন। প্লান ইন্টারন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়ার প্রধান সুসানে লেজিনা বলেন, ‘কক্সবাজার শরণার্থী ক্যাম্পে আটকা পড়া পরিবারগুলোর প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে অস্ট্রেলিয়া।’ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। মিয়ানমারে ফিরলে আবারও নিপীড়নের শিকার হতে পারেন এমন শঙ্কায় প্রত্যাবাসনে রাজি নয় তারা।
×