জরা বা বার্ধক্য জীবনের এক চরম সত্য। শৈশবের সোনালি সকাল শেষ করে, তারুণ্য আর যৌবনের রোদেলা দুপুর পাড়ি দিয়ে, মাঝ বয়সের ব্যস্ত বিকেলটাও যখন চলে যায়, তখনই জীবন সায়াহ্নের গোধূলিবেলা হয়ে আসে বার্ধক্য। পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়- এরা একটি পরিবার গড়েছেন অন্তত ২০ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। তখন তাদের বয়স ছিল, ভাল স্বাস্থ্য ছিল, তাদের চোখে স্বপ্ন ছিল, সন্তান-সন্ততি গড়ে তুলেছেন, প্রাণপণ পরিশ্রম করেছেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন। অথচ বার্ধক্যের এই সময়টা আসলে মানবজীবনের শেষ অধ্যায়। তবে অকালমৃত্যু না হলে এই স্তরটিতে শেষ পর্যন্ত পদার্পণ করতেই হবে। বার্ধক্যকে এড়িয়ে চির তারুণ্যের সোনার হরিণ ধরার চেষ্টা মানব ইতিহাসজুড়েই হয়েছে, কিন্তু তার নাগাল পাওয়া যায়নি। বার্ধক্য তাই জীবনের নিয়তি।
বার্ধক্য যখন আসে তখন কিছু স্বাভাবিক শারীরিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। চুল পাকে, চুল পড়ে যায়, ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে, শ্রবণ শক্তি কমতে থাকে। মস্তিষ্ক ছোট হয়ে আসে, স্মৃতি হয়ে পড়ে দুর্বল, পেশিশক্তি কমে যায়। রুচি চলে যায়, ঘুম কমে যায়। হাড়ের ক্ষয় হয়, লিভার এবং কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। শরীরের প্রায় সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গতেই বাসা বাঁধে জরা বা ক্ষয়।
শারীরিক পরিবর্তনের কারণে কিছু কিছু রোগ প্রকৃতিগতভাবে বয়স্কদেরই হয়ে থাকে। যেমন তাদের রক্তনালী সরু হয়ে যায়। ফলে উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি হতে পারে। প্রবীণদের মস্তিষ্ক ছোট হয়ে আসে, মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় বলে ব্রেন এ ট্রফি। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কেউ কেউ আলঝাইমার্স ডিজিজ বা ডিমেনসিয়াতে আক্রান্ত হন। ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়, আবেগ, অনুভূতি, বিচারবুদ্ধি, বিবেচনা শক্তি, চিন্তাক্ষমতা, কাজ করার ক্ষমতা ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে। আচার-আচরণে অনেকটাই শিশুতে পরিণত হন। এক সময় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেন, বিছানায় মল-মূত্র ত্যাগ করেন। এছাড়াও মাথা ঘোরা, হাত-পা কাঁপা যাকে বলে পার্কিনসন্স ডিজিজ ইত্যাদি নানা ধরনের মস্তিষ্কের রোগও প্রবীণদের মাঝে দেখা যায়। আবার মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে অন্য নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় হয়ে যায় যাকে বলা হয় অস্টিওপরোসিস। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা বোধ করেন, মাঝে মাঝে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙ্গে যায়। এছাড়া অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয় যেমন হাঁটুতে বা কোমরে ব্যথা এমনকি শরীর বেঁকে যায়। ফলে কার্যক্ষমতা আরও কমে যায়। হাঁটা-চলায় প্রচণ্ড অসুবিধা হয়। চোখে ছানি পরাটাও বয়স্কদের রোগ। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেটগ্রন্থি বড় হয়ে প্রস্রাবের জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে মূত্র ধারণক্ষমতা কমে যায়, প্রস্রাব করতে বেশি সময় লাগে, চাপ দিয়ে প্রস্রাব করতে হয়। মলমূত্র ধরে রাখার ক্ষমতাও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। পানি ও লবণের পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটে, শীতে বা সামান্য ঠাণ্ডাতেই তাদের দেহ ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেমন নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, চামড়ার ইনফেকশন ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারও বয়স্কদের বেশি হয়।
শুধু শারীরিক রোগ-ব্যাধিই নয়, প্রবীণদের সমস্যাটা আসলে বহুমাত্রিক। তারা মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সমস্যায় জর্জরিত। প্রকৃতপক্ষে একটা মানুষ যখন বার্ধক্যে উপনীত হয়, তখন তার নিজের মধ্যেই কিছু কিছু জিনিস দানা বেঁধে উঠে, যেমন শারীরিক অসামর্থ্য, অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতা, অদৃষ্টের ওপর সমর্পণটাও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা। এগুলোর কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে শুরু করে তারা নিজেকে অবাঞ্ছিত, পরিবারের বা সমাজের বোঝা মনে করেন। বৃদ্ধদের প্রায়ই একাকিত্বের অভিশাপে ভুগতে হয়। প্রায়ই জীবনসঙ্গী একজন আগেই চলে যান এবং ছেলে-মেয়েরা দেশে বা বিদেশে কাজ করতে বাধ্য হয়। একাকিত্বের সঙ্গে যুক্ত হয় বিষণœতা। অনেক সময় এমন অযৌক্তিক ও শিশুসুলভ আচরণ তাদের মধ্যে প্রকাশ পায় যাকে অনেকেই দ্বিতীয় শৈশব বলে মনে করেন।
আগের চেয়ে এখন প্রবীণ রোগী অনেক বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধি। এক সময় মানুষের গড় আয়ু কম ছিল, বৃদ্ধ হওয়াটাই ছিল এক বিরাট সাফল্য। কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ, স্বাস্থ্যসচেতনতা, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও কার্যকর চিকিৎসার সহজলভ্যতা, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি, নিরাপদ পানীয় জলের সংস্থান, নানা রকমের রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সফল প্রয়োগ ইত্যাদি কারণে মানুষ আজ বেশিদিন বেঁচে থাকতে সক্ষম। অনেক জটিল রোগ যা এক সময় মৃত্যুর নামান্তর ছিল, আজ তা অনেকাংশে নিরাময়যোগ্য। এখন স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিও বেঁচে যাচ্ছেন, কিডনি বা লিভারের রোগে আক্রান্ত মৃতপ্রায় ব্যক্তি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন লাভ করছেন।
এসব সাফল্য আমাদের গড় আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রবীণের সংখ্যাও বাড়ছে, আর সেইসঙ্গে বয়স বৃদ্ধিজনিত রোগসমূহের প্রকোপও বেড়ে যাচ্ছে। বয়স্ক রোগী বৃদ্ধির কারণে পারিবারিক, স্বাস্থ্যগত, সামাজিক এমন কি রাষ্ট্রীয় সমস্যাও প্রবল আকার ধারণ করছে। পারিবারিকভাবে অনেক সময় প্রবীণরা অবহেলা অযতেœর শিকার হয়ে পরিবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন বা পরিবারই তাকে ঠেলে দিচ্ছে দূরে। তার নিকটজন এমনকি ছেলেমেয়েও তাকে বোঝা মনে করছে। আবার অনেক প্রবীণ নিজেই কারও ওপর বোঝা হয়ে থাকতে চাচ্ছেন না, বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিচ্ছেন।
তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রধান কারণ হলো চিকিৎসা সুবিধার অভাব। তাদের জন্য চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা অনেক জায়গায় নেই, বা থাকলেও সীমিত, বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে। তৃতীয় বিশ্বে অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ আর এর শিকার হন প্রবীণরা বিশেষ করে মহিলারা। আবার গ্রামের প্রবীণদের আর শহরের প্রবীণদের সমস্যা অনেক সময় ভিন্ন হয়। শহরে অনেক প্রবীণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় ভোগেন বেশি। নিঃসঙ্গতা বা পারিবারিক অবহেলা এক্ষেত্রে দায়ী। গ্রামের প্রবীণদের মধ্যে আর্থিক অসচ্ছলতা বেশি। ভূমিহীন অসচ্ছল গ্রামীণরাই আর্থিক দীনতায় আরও বেশি ভোগেন। ফলে পরনির্ভরশীলতার কারণে খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সমস্যাটা গ্রাম পর্যায়ে অত্যন্ত জটিল। তাদের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। একদিকে ওষুধের দাম অন্যদিকে পথ্যের দুর্মূল্য এবং মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং বার বার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়ার খরচ, সবমিলে বৃদ্ধদের চরম দুরবস্থা।
প্রবীণদের স্বাস্থ্যসমস্যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি বিশেষায়িত বিভাগ। কিছু কিছু রোগ আছে যা শুধু বয়স্কদেরই হয়। আবার সকল বয়সেই হয় এমন রোগের লক্ষণ, তীব্রতা ও চিকিৎসা বয়োবৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। বিভিন্ন ওষুধের মাত্রা বয়স্কদের জন্য কম, অনেক ওষুধ সাবধানতার সঙ্গে দেয়া প্রয়োজন হয়। এছাড়া বয়স্কদের খাবারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সতর্কতা নেয়া প্রয়োজন। তাদের সেবার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দিকে নজর দিতে হয় যা অন্য বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন নাও হতে পারে, যেমন নিয়মিত পায়খানা হচ্ছে কিনা, প্রস্রাবে সমস্যা হচ্ছে কিনা, তারা নিজেদের যতœ নিতে পারছেন কিনা ইত্যাদি। অনেক সময় বৃদ্ধরা শিশুদের মতোই নিজেদের সমস্যা ঠিকমতো বলতে পারেন না। তাই তাদের না বলা কথা বোঝার মতো যোগ্যতা সেবাদানকারীর থাকতে হয়। এসব দিক বিবেচনায় রেখে উন্নত বিশ্বে শুধু বৃদ্ধদের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা বিভাগ থাকে, যাকে বলে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন। বৃদ্ধদের যে কোন স্বাস্থ্য সমস্যা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য তারা বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন।
দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশে এখনও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত সীমিত। তাই দেখা যায় এরা বাসায় যেমন নিজেদের পরিবার কর্তৃক অবহেলিত হন, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও যথাযথ সুবিধা পান না। এই বয়সে অনেক রোগেই দেখা যায় সুনির্দিষ্ট উপসর্গ থাকে না বা বয়স্করা সেগুলো ঠিকমতো অনুভব করেন না বা ভালভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায় খুব জটিল বা মারাত্মক অসুখে বৃদ্ধ রোগী সাধারণ অবসাদ, দুর্বলতা, অস্বস্তি এ ধরনের সমস্যার কথা বলছেন। এমন ক্ষেত্রে পরিবার থেকেও নজর দেয়া হয় না, এমনকি অনেক চিকিৎসকও যথার্থ মনোযোগ দেন না, হয়ত বার্ধক্যজনিত বলে মনে করেন। এভাবে অবহেলার ফলে অনেক রোগ নিরাময় সম্ভব হয় না। এর মূল কারণ বৃদ্ধদের সমস্যা সম্পর্কে বিশেষায়িত জ্ঞানের অভাব।
প্রবীণ বা বয়স্ক ব্যক্তিরা সম্মানিত। তারা দ্বিতীয় শিশু। আমাদের মনে রাখা উচিত আজ যারা প্রবীণ তারাও অতীতে তার পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকেই অনেক কিছু করে গেছেন। তাদের যেন কোন রকম অবহেলা করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা যারা নবীন তারা যেন ভুলে না যাই যেÑ আমাদেরও একদিন এই অবস্থায় উপনীত হতে হবে। আজ যদি আমরা তাদের প্রতি অবহেলা করি, তাহলে আমাদেরও এই রকম অবহেলার শিকার হতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রবীণরা অবহেলিত, উপেক্ষিত, সমাজে ও পরিবারে অনেকের কাছে বোঝাস্বরূপ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সবার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অবশ্য কর্তব্য।
আমাদের যা করতে হবে-
১. মনে রাখতে হবে প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতোই তার সঙ্গে আচার-আচরণ করতে হবে। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত সব সময় প্রবীণদের আদর-যতœ দিয়ে শিশুদের ন্যায় প্রতিপালন করা। তাদের প্রতি মায়া-মমতা, ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। কোন ক্রমেই তাদের মধ্যে যেন এই ধারণা না হয় যে, তারা আমাদের জন্য একটি অতিরিক্ত বোঝা।
২. পৃথিবীর অনেক দেশে প্রবীণদের জন্য বৃদ্ধনিবাস বা ওল্ড হোমের ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজনে সেরকম ব্যবস্থা আমাদের দেশেও করতে হবে। তাই বলে অযতœ অবহেলায়, দায় এড়ানোর জন্য তাদের যেন এসব বৃদ্ধনিবাসে ঠেলে দেয়া না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
৩. আমাদের দেশে শুধু সরকারী কর্মচারী চাকরি হতে অবসর নেয়ার পর সামান্য পরিমাণ পেনশন ভাতা পেয়ে থাকেন। প্রবীণ কি শুধু তারাই হবে? সরকারী চাকরির বাইরে যারা অন্য পেশায় আছেন বা ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন, বা কোন চাকরিও করেন নাই, তারা কি বৃদ্ধ হবেন না? এদের জন্যও তো পেনশনের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকা জরুরী। এবং তা সরকারকে অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত।
৪. পেনশন বা বয়স্ক ভাতা হিসেবে যে অর্থ দেয়া হয় তার পরিমাণটাও সম্মানজনক হওয়া উচিত, যাতে তারা খেয়ে পরে চলতে পারেন এবং পরনির্ভরশীল হতে না হয়।
৫. প্রবীণরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা লাভ করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারী হাসপাতালে তাদের জন্য আলাদা বিছানা বরাদ্দ থাকা উচিত। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ তাদের বিনামূল্যে বা অল্প দামে দেয়া উচিত। এছাড়া প্রবীণদের চিকিৎসার জন্য বড় বড় হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত বিভাগ খোলা উচিত।
৬. পরিবারের সদস্যদের বা ছেলেমেয়েদের মনে রাখা উচিত, তারা যেন তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
৭. বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় এমনকি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যথাসম্ভব প্রবীণদের আমন্ত্রণ জানানো উচিত যাতে তারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় ও অবহেলিত মনে না করেন।
৮. সরকারকে ব্যক্তিগত আয়করের ব্যাপারে প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। জ্যেষ্ঠদের কর মওকুফ বা কর অবকাশের ব্যাপারে অতিগুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং তা যথাযথ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সমাজব্যবস্থারও দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। একক পরিবার, জনসংখ্যা, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, দ্রুত শিল্পায়ন আর শহরমুখী প্রবণতা অনেক কিছুই আমাদের আদর্শ ও মূল্যবোধের মূলে আঘাত করে প্রবীণদের অবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে বা খারাপের দিকে নিচ্ছে। ফলে প্রবীণরা অযতœ, অবহেলিত, একাকিত্ব, সমাজের এমনকি পরিবারের বোঝা হয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখা উচিত, আমাদের তারা যেভাবে মায়া মমতা ভালবাসা, এমনকি নিজের সর্বস্ব দিয়ে লালন-পালন করেছেন, তারাও আমাদের কাছে সেটাই আশা করেন। আমাদের প্রবীণদের জীবন যেন সত্যিকার অর্থেই হয় আনন্দের, শান্তিময়, মধুর স্মৃতিময়। তারা যেন নিজেদের অবহেলিত, পরিবারের ও সমাজের বোঝা মনে না করেন।
লেখক : ইউজিসি অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়