ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসামাল কিশোর গ্যাং ॥ হাতিরঝিল থেকে ১০০ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ১০:০৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বেসামাল কিশোর গ্যাং ॥ হাতিরঝিল থেকে ১০০ সদস্য গ্রেফতার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ একের পর এক অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, হুমকি-ধমকি, গুলিসহ নানা অপরাধের পাশাপাশি খুনের মতো মারাত্মক অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে গ্যাং সদস্যরা। সর্বশেষ বুধবার রাতেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাং সদস্যরা এক কিশোরকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঢাকার অলিগলি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। কিশোর গ্যাংগুলোকে পুঁজি করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধ সংঘটিত করাচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের যেসব সদস্য অপরাধে জড়িত, তাদের গ্রেফতারে সারাদেশে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব। শুক্রবার রাজধানীর হাতিরঝিলে পুলিশের অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে কিশোর গ্যাংয়ের শতাধিক সদস্য গ্রেফতার হয়। তাদের সাজা দিয়ে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের কাছে পিস্তল, রিভলবারসহ বোমা সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরাই এক সময় দেশের বড় বড় সন্ত্রাসী হতে পারে ও মারাত্মক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এরা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়েও উঠতে পারে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন। এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিলে কিশোর গ্যাংবিরোধী অভিযানে শতাধিক কিশোরকে আটক করেছে পুলিশ। কয়েকজন অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার হাতিরঝিল থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। কটূক্তি, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করাসহ বিভিন্নভাবে পথচারীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে এই কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে। হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতিরঝিল, মধুবাগ, মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে থানায় নেয়া হয়। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। তারা বিভিন্ন জায়গায় জটলা করে ইভটিজিং করে, পথচারীদের নানাভাবে কটূক্তি করে, অশ্লীল ভঙ্গি করে বলে জানান ওসি। তাদের থানায় নিয়ে ‘যাচাই-বাছাই’ করা হচ্ছে জানিয়ে ওসি বলেন, কেউ নিরপরাধ হলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। বুধবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর চান মিয়া হাউজিংয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মহসিন (১৪) নামের এক কিশোরকে হত্যা করে। এ ঘটনায় আহত তিন জনের মধ্যে সাব্বির (১৭) ও রাকিব (১৭) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং রুবেল (২৩) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত সাব্বির ও রাকিব নিহত মহসিনের সঙ্গেই একই স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ত। নিহত মহসিন মোহাম্মদপুরের কাটাশুরে চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। পুলিশ বলছে, রাত নয়টার দিকে চান মিয়া হাউজিং এলাকার ২ নম্বর সড়কে মহসিন, রুবেলসহ কয়েক কিশোর মুঠোফোনে ছবি দেখছিল। একপর্যায়ে তাদের সমবয়সী একদল কিশোর চাপাতি দিয়ে তাদের কোপায়। এতে তিনজন আহত হয়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোর মহসিন মারা যায়। আহত রুবেল প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করে। মোহাম্মদপুর থানার ওসি জি জি বিশ্বাস বলছেন, হামলাকারীরা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। মঙ্গলবার বিকেলে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে বসে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আড্ডা দিচ্ছিল। একটি গ্রুপ আরেকটি গ্রুপকে উদ্দেশ করে আপত্তিকর মন্তব্য করে। তারই জেরে হত্যাকান্ডটি ঘটে। হামলাকারী কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। শুক্রবার পর্যন্ত এ ঘটনায় পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মূল আসামি পারভেজ এখনও পলাতক। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মহসিন ফিল্ম ঝির ঝির নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আর পারভেজ আতঙ্ক নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। গ্রুপ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। গত বুধবার বিকেলে বান্ধবীকে নিয়ে ঢাকা উদ্যানে বেড়াতে গিয়েছিল মহসিন। এ সময় পারভেজ ও তার সহযোগীরা মহসিনের বান্ধবীকে ইভটিজিং করে। এ নিয়ে মহসিনের সঙ্গে পারভেজের তুমুল ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়। পরে পারভেজ ও তার সহযোগীরা মহসিনকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। কোপানোর সময় মহসিনের সঙ্গে থাকা আরও তিনজন আহত হয়। এ ঘটনায় নিহত মহসিনের ভাই ইউসুফ আলী বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছেন। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহেদুল ইসলাম জানান, ঘটনায় জড়িতরা দুটি পৃথক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। গ্যাং দুটির অধিকাংশ সদস্যই স্কুলের অনিয়মিত ছাত্র। এদের মধ্যে অনেকেই আবার স্কুলে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশই ঢাকা উদ্যানের ভেঙ্গে যাওয়া বস্তির বাসিন্দা। এদের অধিকাংশ সদস্যের পিতা বা মাতা গার্মেন্টে চাকরি করেন। কেউবা মোহাম্মদপুর টাউন হলে মাছের ব্যবসা করেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে এক মহিলাকে মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে একটি কিশোর গ্যাং হত্যা করে। পরবর্তীতে ঘটনাটির তদন্তে বেরিয়ে আসে নিহত মহিলার মেয়েকে ইভটিজিং করা নিয়ে কিশোরদের সঙ্গে গ-গোলের সূত্রপাত হয়েছিল। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতে বাধা দেয়ায় তার মাকে মোটরসাইকেল দিয়ে চাপা দিয়ে হত্যা করে গ্যাংয়ের সদস্যরা। হত্যার পর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত হত্যাকারী আটজন গ্রেফতার হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকার উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের কাছে সন্ধ্যায় ট্রাস্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র আদনান কবিরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটজন গ্রেফতার হয়। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আদনানকেও কিশোর গ্যাং হত্যা করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং থাকার সুস্পষ্ট তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের নথিপত্র অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় প্রতিটি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং আছে। তবে সবচেয়ে বেশি কিশোর গ্যাং থাকার তথ্য মিলেছে বস্তি এলাকাগুলোতে। এসব বস্তিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, হুমকি-ধমকি দেয়া, কাউকে গুলি করে ভয় দেখানোসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করতেই কিশোর গ্যাং গড়ে তোলা হয়েছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ইভটিজিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধে জড়িত। তুলনামূলক বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে উত্তরায়। নাইন স্টার ও ডিসকো বয়েজ নামের দুটি কিশোর গ্যাং খুবই সক্রিয় উত্তরায়। এ দুটি গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনায় আদনান নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনটি মারামারি এবং একটি ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ নাইন স্টার নামের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে খুন হয় আদনান। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এসব কিশোর গ্যাংয়ের কাছে পিস্তল, রিভলবারের মতো মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্রও আছে। এছাড়া কিশোর গ্যাংগুলোর প্রায় প্রত্যেক সদস্যের কাছে বহনযোগ্য সুইচ গিয়ার চাকু আছে। এসব চাকু তারা প্যান্টের পকেটে রাখে। এক সময় এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা পকেটে ক্ষুর রাখত। কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় সকল সদস্যই মাদকাসক্ত। আগে গাঁজা বা ফেনসিডিলের মতো মাদকে আসক্ত ছিল। বর্তমানে তারা ইয়াবা, হেরোইন ও ড্যান্ডির মতো মাদকে আসক্ত। বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য মাদক সেবন করতে করতে এক সময় টাকার জন্য মাদক বিক্রি শুরু করে। প্রায় শতভাগই মাদক ব্যবসায় জড়িত। তারা সব সময়ই সরকার দলের নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। আর ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কিশোর পাড়া-মহল্লায় ইভটিজিং থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে। এরা দলবদ্ধ হয়ে উচ্চৈ শব্দে মোটরসাইকেলের হর্ন বাজিয়ে এপাড়া ওপাড়া করে বেড়ায়। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে এবং প্রভাব দেখাতে তারা সাধারণত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে বা বাজারে বা মার্কেটের সামনে দলবেধে আড্ডা দেয়। আড্ডাস্থলের সামনে সারি সারি মোটরসাইকেল রেখে দেয়। এদের অধিকাংশই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরুতে পারেনি। দু’একজন পেরুলেও তারা কলেজে ভর্তি হয়েই শেষ। কলেজে গিয়ে তারা একই কাজ করে বেড়ায়। ঠিকমতো ক্লাসে যায় না। পরীক্ষা দেয় না। কলেজের গেটে দলবেঁধে আড্ডা দিয়ে নিজেদের প্রভাব প্রচার বা জাহির করার চেষ্টা করে। পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সারাদেশে অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও কাজ করছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পর কিশোর সংশোধনাগার থেকে বের হওয়া কিশোরদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। সারাদেশে অপরাধে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতারে চলমান অভিযানে শতাধিক কিশোর অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। যাদের অধিকাংশই সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে গাজীপুর ও টঙ্গী কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের উপপরিচালক মেজর রইসুল ইসলাম জানান, নানা অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে উত্তরাসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকা কিশোর গ্যাং সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে র‌্যাব কাজ করছে। সাজাপ্রাপ্তদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। দীর্ঘদিন যাবত তারা রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ছিনতাই, পথচারীদের ব্যাগ, মোবাইল ফোন, মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ চাকু বা ব্লেড দিয়ে কেটে ভেতরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়াসহ নানা অপরাধ করে আসছিল। ছিনতাই করা প্রতিটি মোবাইল ফোনের বিনিময়ে তারা মোবাইল ফোনের দামভেদে তিন থেকে পাঁচটি করে ইয়াবা ট্যাবলেট পেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলছেন, পারিবারিক ও সামাজিক কারণ ছাড়াও শিক্ষাগত কিছু কারণও কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে ওঠার জন্য দায়ী। পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোররা নানা কারণে শিক্ষা থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হয়ে হতাশায় ভোগে। এসব কিশোরই এক সময় মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পরে তারা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে। এরা মাদকের টাকা যোগাড় করতে এক সময় ছিনতাই, মাদক বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে। নেশা করে পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন মোড়ে বসে তরুণী ও কিশোরীদের ইভটিজিং করে। পাড়া-মহল্লায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে একসঙ্গে অনেক কিশোর জোটবদ্ধ হয়। অধিকাংশ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যই উচ্চৈ শব্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকা দাপিয়ে বেড়াতে পছন্দ করে। এটি তারা করে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে। সামাজিক, পারিবারিক, শিক্ষাগতসহ নানা কারণে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পরিবার ও সমাজের কাছে থেকে বঞ্চিত হয়ে আর উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পিতামাতা বা পরিবারের সান্নিধ্য না পেয়ে আস্তে আস্তে নেশার জগতে ঢুকে পরবর্তীতে কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ে। সন্তানদের দিকে সবার আগে পরিবারকে খেয়াল করতে হবে। অন্যথায় কিশোর গ্যাং কালচার গড়ে ওঠার প্রবণতা কমবে না। বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ বলছেন, কিশোর গ্যাং পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য রীতিমত হুমকি স্বরূপ। কারণ এক সময় কিশোর অপরাধীরাই বড় বড় অপরাধী হয়ে মারাত্মক সব অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। কোন কোন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের দুর্ধর্ষ জঙ্গী হয়ে ওঠাও বিচিত্র নয়। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ কিশোর গ্যাংয়ের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছেন। একজন সাধারণ মানুষও অনেক সময় তাদের হাত থেকে রেহাই পান না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিকভাবে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। এতে করে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা কমে যাবে। দেশের সব জায়গার মানুষ কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সতর্ক থাকলে সমাজ থেকে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে। কিশোর গ্যাং দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তাই এখনই কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
×