ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ডোরিয়ানের ভয়ঙ্কর ছোবল

প্রকাশিত: ০৯:৩৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ডোরিয়ানের ভয়ঙ্কর ছোবল

ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের দুই ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে আঘাত হেনেছে। এর আগে ক্যারিবীয় অঞ্চলে মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে এবং ফ্লোরিডাকে প্রায় ধুয়ে-মুছে নেয় এই ঝড়। হাজার হাজার অধিবাসীকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে অধিবাসীদের অনেকে ডোরিয়ানের ভয়ঙ্কর আগ্রাসন সহ্য করে এখনও সেখানে রয়ে গেছেন বলে সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে। গাছপালা উপড়ে ফেলতে পারা এই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্র বাতাসে ইতোমধ্যে দ্বীপটির বিদ্যুতব্যস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে চার্লসটনের অনেক সড়কে এখন হাঁটু পর্যন্ত পানি বিরাজ করছে। নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি। জরুরী বিভাগের পরিচালক শ্যানন এফ স্কেফ জানান, এক লাখ ৩৬ হাজার অধ্যুষিত শহরটির অধিকাংশ মানুষকে এই অনাকাক্সিক্ষত ঝড়ের কবল থেকে নিরাপদে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে আঘাত হেনেছে এমন অন্য যে কোন ঝড়ের চেয়ে এই ঝড় আমাদের বেশি আঘাত করেছে। তবে চার্লসটনের অনেকেই আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, এখন পর্যন্ত আমরা ভাগ্যবান।’ ক্যাটাগরি টু ঘূর্ণিঝড়টি এখন আঘাত হানার চেষ্টা করছে। যার বাতাস ঘণ্টায় এক শ’ পাঁচ মাইল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ঝড়টি দ্বীপটি ঘিরে কতক্ষণ স্থায়ী হয়, সে বিষয়টি এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর দেশটিতে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্সও এতটা ভীতি সৃষ্টি করতে পারেনি, যতটা ঘূর্ণিঝড় ডোরিয়ান নিয়ে জনমনে চাপা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ম্যাকক্লিলানভেলির দক্ষিণ ক্যারোলিনার উপকূলীয় মাছ শিকারের গ্রামের মদ বিক্রেতা পেটি কোর্নাক ডোরিয়ানকে খুব হাল্কাভাবে না নিলেও তিনি ঝড়টি আঘাতহানির সময় সেখানেই থাকবেন বলে মনস্থির করেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে তিনি তার দোকানটি গত মঙ্গলবার থেকেই বন্ধ করে রেখেছেন। ঘরে ৮০ বছর বয়সী শাশুড়ি আছেন, যিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না জানিয়ে ৫২ বছর বয়সী ব্যবসায়ী কোর্নাক বলেন, ‘আমি কোনভাবেই এখান থেকে যেতে পারব না।’ তিনি জানান, এই ভীতিপ্রদ মুহূর্তে টিকে থাকা খুবই কষ্টকর। কোর্নাক জানান তার অনেক ঝড় কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এদিকে দক্ষিণ ক্যারোলিনার গবর্নর হেনরি ম্যাকমাস্টার বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। ঝড় শেষ হলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থাও নেয়া আছে।’ তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ডোরিয়ানে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে ডোরিয়ানের ঘটনায় বাহামা দ্বীপপুঞ্জে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ এ পৌঁছেছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উঠে আসা এ ঝড়ের তান্ডবে নিখোঁজের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত না হওয়ায় মৃতের সংখ্যা ‘অবিশ্বাস্যরকমের বেশি’ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা। দ্বীপপুঞ্জটির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আবাকো দ্বীপে মৃতদেহ মুড়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত ২০০টি ব্যাগ পাঠানো হয়েছে। গত রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বাহামাসের উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ডোরিয়ান এখন অনেকখানি দুর্বল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনা উপকূলের পথে রয়েছে। ক্যারিবীয় অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আঘাত হানা এ ঝড়ে আবাকো ও গ্র্যান্ড বাহামায় নিখোঁজের সংখ্যা কয়েক শ’ থেকে কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। বৃহস্পতিবার বাহামাসের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডুয়ানে স্যান্ডস ডোরিয়ানে নিহতের সংখ্যা ‘হতভম্ব করে দিতে’ পারে বলে সতর্ক করেছেন। দ্বীপটিতে মানবিক ত্রাণ সাহায্য প্রয়োজন বলে ধারণা দিয়েছে জাতিসংঘ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আবাকো দ্বীপটি কার্যত বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মৃতদেহ, পানি ও খাদ্য সঙ্কটে সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। লুটপাট ঠেকাতে দ্বীপটিতে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। বিমান থেকে ধারণ করা ভিডিওতে আবাকো দ্বীপে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে। দ্বীপটির বন্দর, দোকানপাট ও কর্মস্থল, একটি হাসপাতাল ও বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরমধ্যে কোন কোনটি খন্ড খন্ড হয়ে উড়ে গেছে। দ্বীপটিতে এরই মধ্যে কিছু পরিমাণ ত্রাণও পৌঁছেছে। উদ্ধারকর্মীরা মৃতদেহের পাশাপাশি নিখোঁজদের সন্ধানেও তৎপরতা বাড়িয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাহামাসের ২০১ জনকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে মার্কিন কোস্ট গার্ড।
×