ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অলরাউন্ডার রশীদে ম্লান সাকিব

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 অলরাউন্ডার রশীদে ম্লান সাকিব

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট ম্যাচ স্পিন লড়াই নিয়েই ছিল আলোচনা। দু’দলের বোলিং স্তম্ভ সাকিব আল হাসান ও রশীদ খানের দিকেই ছিল সবার দৃষ্টি। দু’জনই অধিনায়ক। সাকিব টেস্ট ক্রিকেটে বিচরণ করছেন ১২ বছরের বেশি, সেখানে রশীদের যাত্রা সবেমাত্র শুরু। দল হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে আফগানিস্তান একেবারেই নবীন বলেই দলীয় লড়াইটি নিয়ে যত আলোচনা তারচেয়ে বেশি সাকিব-রশীদের মধ্যে স্পিন লড়াই নিয়ে। কিন্তু চট্টগ্রামে চলমান একমাত্র টেস্টের দু’দিন শেষে ব্যাটে-বলে সাকিবকে ম্লান করে দিয়েছেন রশীদ। পুরো বাংলাদেশ দলকেই নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম এ লেগস্পিনার ব্যাট হাতে টি২০ মেজাজে অর্ধশতক হাঁকানোর পর বল হাতে দেখিয়েছেন দাপট। রশীদ ভীতি বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বেশ আগে থেকেই। সেই ভীতিকে কাজে লাগিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ধস নামিয়েছেন। সাকিব শেষদিকে ২ উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ১১ রানে সাজঘরে ফিরেছেন রশীদের শিকার হয়ে। তাই নেতৃত্ব, ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সাকিব যেখানে শূন্য রশীদ সেখানে একাই এক শ’ দু’দিন শেষে এটা নিশ্চিতভাবেই বলবেন যে কেউ। ব্যাটিং কিংবা বোলিং- উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের অন্যতম ভরসার নাম সাকিব। আর সে কারণেই এক সময় দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট ক্রিকেটের র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর অলরাউন্ডার ছিলেন তিনি। এখনও সাকিব বিশ্বের ৩ নম্বর সেরা টেস্ট অলরাউন্ডার। অভিজ্ঞতায়ও দারুণ পরিপুষ্ট তিনি। অতীতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিন ফরমেটে, এখন টি২০ ও টেস্ট দলের অধিনায়ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাড়ে ১২ বছর পেরিয়ে গেছে তার। ৫৫ টেস্ট খেলে ব্যাট হাতে ৩৯.৬৫ গড়ে ৩৮০৭ রান এবং বল হাতে ২০৫ উইকেট- বর্তমান প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় এক উজ্জ্বলতম অলরাউন্ড নৈপুণ্য। বরাবরই বাংলাদেশ দলকে টেস্ট ক্রিকেটে নির্ভর করতে হয় সাকিবের ওপর। তার ব্যাটিং গড়টা দারুণ থাকলেও এক্ষেত্রে তার ওপর মূলত আস্থা বাঁহাতি স্পিনে। কিন্তু চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিন বেদম মার হজম করেছেন তিনি আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের কাছে। তবে দ্বিতীয়দিন কিছুটা নিজেকে ফিরে পান। তুলে নেন দুই উইকেট। কিন্তু ততক্ষণে আফগানরা প্রত্যাশার বাইরে অনেক বড় সংগ্রহ পেয়ে গেছে। যখন সাকিবের জ্বলে ওঠা প্রত্যাশিত ছিল তখন তিনি পারেননি। এরপর ব্যাট হাতে নামার পরও ব্যর্থ হয়েছেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি রশীদ ভীতিকে কাটিয়ে দলের ব্যাটসম্যানদের সাহসী করে তুলতে। উল্টো নিজেই রশীদের বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েছেন। রশীদ মূলত টি২০ ক্রিকেটে দারুণ নাম কামিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী বড় টুর্নামেন্টগুলোয় ধারাবাহিকভাবে অন্যতম সেরা পারফর্মার। আবার দেশের পক্ষেও এ ফরমেটে সারাবিশ্বেই ভীতিকর একজন বোলার। এবার তাই বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে নামার আগে তার লেগস্পিন নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে টেস্ট ক্রিকেট একেবারেই ভিন্ন মেজাজের তাই অনেকেই ভেবেছিলেন অনভিজ্ঞ রশীদ এই ফরমেটে খুব বেশি সুবিধা এত দ্রুতই করে উঠতে পারবেন না। কিন্তু স্পিন সহায়ক সাগরিকায় দু’দলের স্পিন লড়াই হবে এবং সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব এবং আফগানিস্তানের হয়ে রশীদ মূল সেনাপতির দায়িত্বে থাকবেন সেটা নিশ্চিতই ছিল। সাকিবের মতো আফগানদের অধিনায়কত্ব করার গুরুভার রশীদের কাঁধেও। টস করতে নেমেই তিনি বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেন ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ অধিনায়ক হিসেবে। ২০ বছর ৩৫০ দিন বয়সে টেস্ট ক্রিকেটে টস করে সেখানেও সাকিবকে হারিয়ে দেন। এরপর ৮ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে রশীদ ৬১ বলে ২ চার, ৩ ছক্কায় ৫১ রানের যে ইনিংস খেলেন তাতে করেই প্রায় সাড়ে তিন শ’ সংগ্রহটি পেয়ে যায় আফগানরা। এর আগে সাকিবকে হটিয়ে টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছিলেন রশীদ। এবার যেন টেস্ট ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় টেস্টে খেলতে নেমেই প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে একই চ্যালেঞ্জ শুরু করলেন তিনি। আফগানিস্তান ইনিংসে সাকিবসহ বাংলাদেশী স্পিনাররা তেমন আতঙ্ক ছড়াতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম কিছুটা সমীহ আদায় করতে পেরেছেন বলেই ৪ উইকেট তুলে নেন। সাকিব শেষদিকে ২ উইকেট নেন। কিন্তু বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে নামার পর সবার দৃষ্টি ছিল রশীদের দিকে। ব্যাটসম্যানরা টেস্ট খেলতে নামার আগে যতই বলুন রশীদকে পাত্তা দিচ্ছেন না তারা, বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন রূপ। রশীদ তার ভয়ানক লেগস্পিনে কোণঠাসা করে ফেলেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। শুরুটা করেছিলেন অভিজ্ঞ অফস্পিনার মোহাম্মদ নবী। এরপর বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদ- গুঁড়িয়ে দিয়েছেন রশীদ। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া লিটন দাসকে (৩৩) বোল্ড করে শুরু, এরপর সাকিবকে (১১) এলবিডব্লিউ করে ভীতিকর হয়ে ওঠেন তিনি। মিডলঅর্ডারের স্তম্ভ মুশফিকুর রহীমকেও (০) দুই বলের বেশি খেলতে দেননি, সাজঘরে ফিরিয়েছেন। রশীদ ‘জুজু’ কাটিয়ে উঠতে পারেননি আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও (৭)। তাকেও বোল্ড করে দেন রশীদ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং গত এক যুগ ধরে যে তিন ব্যাটসম্যানের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল- সেই সাকিব, মুশফিক ও রিয়াদকে মাত্র ১৬ রানের ব্যবধানে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন তিনি। আর এতে নবীন টেস্ট দল আফগানদের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে উল্টো ফলোঅনের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে রশীদের দেয়া সেই তীব্র ঝাঁকুনি থেকে দলকে ফলোঅন থেকে বাঁচিয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৪৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। তবে দ্বিতীয়দিন শেষে নিজ ভূমেই পরবাসীর মতো হয়ে পড়া বাংলাদেশ দল ১৪৮ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে আছে অলরাউন্ডার রশীদের কারণেই। সাকিব যেখানে নেতৃত্ব, ব্যাটিং আর বোলিংয়ে শূন্য পেয়েছেন রশীদ সেখানে এক শ’তে ১০০।
×