ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাশেজে অবিশ্বাস্য স্টিভেন স্মিথ

প্রকাশিত: ০৯:১১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 এ্যাশেজে অবিশ্বাস্য স্টিভেন স্মিথ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতিহাসের অন্যতম সফল প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে সিরিজের প্রথম টেস্টেই দলকে জিতিয়েছিলেন। আলোচিত বল টেম্পারিংয়ের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন এক বছর। বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর এ্যাশেজ দিয়ে প্রায় দেড় বছর পর সাদা পোশাকের জার্সিতে স্টিভেন স্মিথের প্রত্যাবর্তনটা ছিল স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো। জোড়া সেঞ্চুরিতে প্রথম ম্যাচের জয়ের নায়ক দ্বিতীয় টেস্টে মাথায় আঘাত পাওয়ায় তৃতীয় ম্যাচে আর মাঠে নামতে পারেননি। লর্ডসে আহত হওয়ার দিনেও পেয়েছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। এবার যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে গেলেন ৩০ বছর বয়সী সুপার উইলোবাজ। হাঁকালেন ডাবল সেঞ্চুরি। সিরিজে স্মিথের ইনিংসগুলো দেখুনঃ ১৪৪, ১৪২, ৯২ ও ২১১! ৩* ম্যাচেই রান ৫৮৯!! টানা তিন এ্যাশেজে পাঁচ শ’র ওপরে রান এমনকি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানেরও ছিল না। ক্যারিয়ারের ২৬তম সেঞ্চুরির পথে অবিশ্বাস্য স্মিথ আরও একাধিক রেকর্ডে নিজের নামটা খোদাই করে নিয়েছেন। লর্ডসে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইংলিশ পেসার জোফরা আর্চারের দ্রুতগতির বাউন্সার স্মিথের হেলমেট গলে মাথার পেছনে আঘাত করেছিল। আহত-অবসর হিসেবে প্রথমে মাঠের বাইরে চলে গেলেও পরে ব্যাটিংয়ে ৯২ রানে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে আর ফিরতে পারেননি। কনকাশন অর্থাৎ বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মার্নাস লাবুশেন। তৃতীয় টেস্টে মাঠের বাইরে থাকা স্মিথ আহতবাস্থা থেকে ফিরে কেমন করেন সেই প্রশ্ন ছিল। কিন্তু অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ক্রিকেটবিশ্বকেই নাড়িয়ে দিলেন সুপার উইলোবাজ। ২৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩১৯ বলে খেললেন ২১১ রানের মনোমুদ্ধকর ইনিংস। সাড়ে নয় বছরের ক্যারিয়ারে স্মিথের তিন ডাবল সেঞ্চুরির সবকটিই এ্যাশেজে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এ্যাশেজে স্মিথের চেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে দুইজনের। আটটি ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে শীর্ষে তারই পূর্বসুরি কিংবদন্তি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। চারটি ডাবল সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় স্থানে ইংলিশ কিংবদন্তি ওয়ালি হ্যামন্ড। দুইটি করে ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে স্মিথের পরেই আছেন অস্ট্রেলিয়ার বব সিম্পসন ও ইংল্যান্ডের এ্যালিস্টার কুক। সর্বশেষ তিন এ্যাশেজে পাঁচ শতাধিক রান স্মিথের। ২০১৫ ইংল্যান্ড এ্যাশেজে ৫০৮, ২০১৭-১৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৮৭ রান ও এবার চার ইনিংস খেলে ৫৮৯। এ্যাশেজের দীর্ঘ ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাটসম্যানই টানা তিন এ্যাশেজে পাঁচ শতাধিক রান করতে পারেননি। ব্র্যাডম্যান ক্যারিয়ারজুড়ে পাঁচবার এ্যাশেজে পাঁচ শতাধিক রান করেছিলেন, তবে কখনও টানা তিনবার হয়নি। ২০১৫ সালে ইংল্যান্ড সফরে লর্ডসে ২১৫ রানের ইনিংস খেলেন স্মিথ। এবার ওল্ডট্র্যাফোর্ডে ২১১ রান। টেস্টে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইংলিশ কন্ডিশনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুইটি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন স্মিথ। এমন কীর্তি আছে ব্র্যাডম্যান, পাকিস্তানের জহির আব্বাস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভিভ রিচার্ডস ও গর্ডন গ্রিনিজ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথের। ব্র্যাডম্যান অবশ্য পাঁচটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন ইংল্যান্ডের মাটিতে। স্মিথ ক্যারিয়ারে ৬৭ টেস্টে ২৬টি সেঞ্চুরির ১১টি হাঁকিয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। টেস্টে নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এটা চতুর্থ সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বাধিক ১৯টি সেঞ্চুরি করে শীর্ষে ব্র্যাডম্যান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩টি সেঞ্চুরি ভারতের সুনীল গাভাস্কার আর অস্ট্রলিয়ার বিপক্ষে ১২টি সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের জ্যাক হবসের। ১৪৭.২৫ গড়ে এবারের সিরিজে স্মিথের সংগ্রহ ৫৮৯ রান। এ বছরের (২০১৯) সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের তালিকায় শীর্ষে। মাত্র চার ইনিংস খেলে তিনি টপকে গেছেন সবাইকে। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন দিমুথ করুনারত্নে (৪২৭), ক্ইুন্টন ডি কক (৪২৮), ট্রাভিস হেড (৫০৩) ও বেন স্টোকসকে (৫১৩)। ওল্ডট্র্যাফোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন স্মিথ। ১৯৬৪ সালে ববি সিম্পসন অসিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১১ রান করেন। যা এই মাঠে যে কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৮৪ সালে উইন্ডিজদের হয়ে গর্ডন গ্রিনিজ ২২৩ রানের ইনিংস খেলেন। গত ২৫ বছরে ইংল্যান্ডের মাটিতে স্মিথই একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন তাও দুইবার। স্মিথের আগে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে এ্যালান বোর্ডার হেডিংলিতে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্মিথের ব্যাটিং গড় ৯৩.৬৪। ৩৯ ইনিংসে ১৬ সেঞ্চুরিতে ৩১৮৪ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ১১৬.৬ গড় নিয়ে প্রথম ইনিংসে তারচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় কেবল ব্র্যাডম্যানের। স্বাভাবিক নিয়মে সিরিজে আরও তিনটি ইনিংস খেলার সুযোগ পাবেন স্মিথ, নিজেকে কোথায় নিয়ে যান সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×