ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মীরসরাইয়ে জরাজীর্ণ স্কুলে পাঠদান অর্ধসহস্র শিক্ষার্থীকে

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

  মীরসরাইয়ে জরাজীর্ণ স্কুলে  পাঠদান অর্ধসহস্র শিক্ষার্থীকে

মাকসুদ আহমদ, মীরসরাই থেকে ফিরে ॥ মীরসরাইয়ের সুফিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। ১৯৯৬ সালে টিনের চৌচালা ঘরে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন শ্রেণী কক্ষের দরজা আছে কপাট নেই, জানালা ভেঙ্গে পড়ে গেছে মেরামত নেই। অনেকটা ৬০ ডিগ্রী কাত হয়ে গেছে প্রায় ১০০ ফুট লম্বা স্কুলগৃহ নামের টিনের স্থাপনা। শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থেকেই সরকারের এমপিওভুক্ত এই বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকার পূর্ববর্তী মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ২০১৭ সালে এই স্কুল সংস্কারের সুপারিশ করার পর নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও তা চলছে কচ্ছপের গতিতে। তিন কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ চললেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে চারতলা ভবন নির্মাণের অনুরোধ করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছেনা। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি মীরসরাইয়ের মিঠানালা এলাকার সুফিয়া গ্রামে ‘সুফিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান’। বিদ্যালয়টির কোড নং- ৩৬৭০ ও ইআইএন কোড-১০৪৬৩২। ১ম শ্রেণী থেকে শুরু হওয়া এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০০৭ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের আওতায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আসছে। মাধ্যমিক পাসের হার শতকরা ৯৫ শতাংশ। তবে ২০১৬ সালে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাসের রেকর্ড করেছে। কিন্তু এত আনন্দের মধ্যেও রয়েছে বিষাদের কলঙ্ক। নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ চললেও জরাজীর্ণ টিনের চালা ঘরে শতভাগ ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। দেখার কেউ নেই নাকি শিক্ষার্থীরা অবহেলার পাত্র তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। স্কুলের জরাজীর্ণ অবস্থা পরিদর্শনে গেলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল পারভেজ প্রতিবেদককে জানান, পড়ালেখা ও খেলাধুলা কোনটিতে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক কাটছে না। কারণ ভবনের অভাবে শিক্ষা ও পল্লী বিদ্যুতের পোলের কারণে খেলতে হয় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে। আর্থিক সঙ্কটের আবেদন জানিয়েও মানবিকতা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যে কোন মুহূর্তে শত শত শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত টিনের চালা ঘরের স্কুলটি এখন জরাজীর্ণ। এসএসসি পাসের হার ৯৫ ভাগ হলেও শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নেই। জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে পাঠদান যেমন বিঘিœত হচ্ছে তেমনি শিক্ষক স্বল্পতায় শিক্ষার্থীদের ফল ধরে রাখাও অনেক কষ্টসাধ্য। সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যালয়টিতে একটি নতুন দ্বিতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হলেও তাতেও ধীরগতি। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এই ভবনের সম্প্রতি দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ভবনটি চারতলায় সরকার উন্নীত করে না দিলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে জরাজীর্ণ ও শতভাগ ঝুঁকিপূর্ণ টিনের চালা ঘরে পাঠ গ্রহণ করতে হবে। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এই ভবনটি চারতলায় উন্নীতকরণের জন্য সুপারিশও করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। এদিকে এই বিদ্যালয়টিতে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরের জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় প্রথম বারের মতো একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তবে ২০০৭ সাল থেকে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্য স্কুলের শরণাপন্ন হয়ে চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আসছে। এদিকে, বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য সীতাকুন্ডের পল্লী বিদ্যুত সমিতি চট্টগ্রাম-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার-এর দফতর থেকে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল স্মারক নং-২৭,১২,১৫৫৩,০০৫,০৪,১৮, ১৪৭ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ৬৭ হাজার ৩৫৯ টাকা খরচ দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিদ্যুত সংযোগ দিতে ও পল্লী বিদ্যুত সমিতি নিজেদের খরচ বাঁচাতে অবৈধভাবে স্কুল মাঠের মাঝখানে বৈদ্যুতিক পিলার স্থাপন করে। কিন্তু বিদ্যুত বিভাগের নিয়মানুযায়ী রাস্তার ধারে বিদ্যুতের পোল স্থাপনের নিয়ম থাকলেও তা পালন করেনি পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩। যার কারণে যে কোন মুহূর্তে ঝরে যেতে পারে শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীর তাজা প্রাণ। তবে স্কুলের আর্থিক দৈনতা ও পল্লী বিদ্যুত সমিতির ম্যানেজারের দায়িত্ব অবহেলার কারণে দুর্ঘটনার অপেক্ষায় বিদ্যালয় মাঠের মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বিদ্যুতের পিলারটি। এদিকে, বিদ্যালয়ের আর্থিক সঙ্কটের বিষয় জানিয়ে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সীতাকু-ের পল্লী বিদ্যুত সমিতি চট্টগ্রাম-৩ এর জেনারেল ম্যানেজারকে অবহিত করা হয়। এখনও মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনসহ সামবেশ (এ্যাসেম্বলি) শেষ করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, পিলার তুলে নেয়ার খরচ পরিশোধের অক্ষমতা প্রকাশ করে প্রধান শিক্ষক আবুল পারভেজের স্বাক্ষরিত আবেদনের প্রেক্ষিতে নিশ্চুপ রয়েছে পল্লী বিদ্যুত সমিতি-৩ এর ব্যবস্থাপক। অথচ ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির সুপারিশক্রমে এ আবেদনে সীতাকু-ের পল্লী বিদ্যুত সমিতির রিসিভিংও রয়েছে ওই বছরের ২৮ নবেম্বর।
×