ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার লাইটিংয়ে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার লাইটিংয়ে ৩০ কোটি  টাকার প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্রুটি রেখেই উদ্বোধন করা হয়েছিল প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার। যানজট কম ও যানবাহনে গতি ফেরানোর লক্ষ্য অনেকটা পূরণ হলেও রাতের অন্ধকারে আচ্ছন্ন ফ্লাইওভারে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ রয়েছেন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে। এ নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে ভোর পর্যন্তও। ফ্লাইওভারে নজরদারি রাখতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও রাতে জ্বলে না একটি বাতিও। আলো না থাকায় রাতে সিসি-ক্যামেরাও এক রকম অকেজো। অন্ধকার ফ্লাইওভারে মিলন নামে এক পাঠাও চালককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পর নিরাপত্তার বিষয়টি ফের সামনে আসে। যাত্রীরা বলছেন, দিনে তেমন সমস্যা নেই। কিন্তু সন্ধ্যার পর কোন অংশেই জ্বলে না বাতি। অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকায় মালিবাগ রেলগেট থেকে রাজারবাগ অংশের ফ্লাইওভারে রাতে কমে আসে চলাচল। ফ্লাইওভারে আলো না থাকায় দ্বিমুখী চলাচলে যানবাহনের লাইটে চালকদের চোখ ধাঁধিয়ে ওঠে। রাত ১০টার পর বিরাজ করে ভুতুড়ে পরিবেশ। অথচ ফ্লাইওভার নির্মাণ পরিকল্পনায়ই ছিল পর্যাপ্ত লাইটিং সিস্টেম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে যানজট নিরসনে পাঁচটি ফ্লাইওভার এবং দুটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বশেষ উদ্বোধন করা হয় মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার। কিন্তু নতুন এ দুই স্তরের ফ্লাইওভারে প্রায় শুরু থেকেই বাতিগুলো অকেজো এবং সিগন্যাল নষ্ট। ফ্লাইওভারে সড়কবাতি না জ্বলায় গভীর রাতে অন্ধকার ফ্লাইওভারে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট রাতে মালিবাগ ফ্লাইওভারে চালক মিলনকে হত্যার পর মোটরসাইকেল ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারী। এ ঘটনার পর পুলিশ সিটিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ পর্যালোচনা করতে গিয়ে জানা যায়, পর্যাপ্ত আলোর অভাবে কাভার করেনি তৃতীয় তলার ছিনতাই হওয়া ফ্লাইওভারের ওই অংশ। এর আগে গতবছরের ২৮ মে ফ্লাইওভারের মালিবাগের অংশ থেকে বস্তাবন্দী এক নারীর দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। একটি গাড়ি থেকে ওই ব্যাগটি ফেলে দেয়া হয়। ২০১৭ এর ডিসেম্বরে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় শফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। ছয় মাসেও বাসের নাম জানতে পারেনি পুলিশ। রাতের মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারে সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, তেজগাঁও সাত রাস্তা মোড় থেকে সোজা হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত মধ্যরাত অবধি নির্বিঘœ চলাচল দৃশ্যমান। একইভাবে দৃশ্যমান সাত রাস্তা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত। কিন্তু বাংলামোটর থেকে মালিবাগ এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন গেট থেকে বাংলামোটর কিংবা মালিবাগ থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত ফ্লাইওভারে চলাচল রাত আটটার পর কমে যায়। রাত ১০টার পর তা হাতে গোনা কয়েকটিতে নেমে আসে। মালিবাগ আবুল হোটেল এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘লাইট ছাড়া ফ্লাইওভার অনিরাপদ। পৃথিবীর কোন দেশে দেখবেন না রাতে ফ্লাইওভার অন্ধকার। কিন্তু এখানে হচ্ছে, ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে রাতে। প্রায়ই ছিনতাই, যাত্রী হয়রানির ঘটনা ঘটছে। রাতে ফ্লাইওভারে আলো ফেরানোই হতে পারে একমাত্র সমাধান।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রমনার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলামোটর ফ্লাইওভারের সড়কে যানজট, দুর্ঘটনাসহ নানা অপরাধ মনিটরিং করতে বসানো হয়েছে ৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এলজিইডির অর্থায়নে ফ্লাইওভার ও ফ্লাইওভারসংলগ্ন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৫০টি ক্যামেরা বসানো হয়। ৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভার সিসিটিভির নজরদারিতে রয়েছে। ৫০টি ক্যামেরার ফুটেজ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ফুলবাড়িয়ার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং আব্দুল গনি রোডের ‘সেন্ট্রাল কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার’ থেকে। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারের দেখভালের দায়িত্ব তো পুলিশের না। আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে মনিটরিং করি। যানজট কিংবা কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখলেই স্ব স্ব থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু রাতে এ কাজে বিপত্তি ঘটে। কারণ ফ্লাইওভারের অধিকাংশ অংশে নেই লাইটিং সিস্টেম। দীর্ঘ সময়েও এ সমস্যার সমাধান আমরা পাইনি। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটলেও দোষ চাপে শুধুই পুলিশের ওপর।’ এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গতবছরের নবেম্বরে বুঝিয়ে দেয়া হলেও আমরা হাতে পেয়েছি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। আমরা একটা প্রজেক্ট চালু করতে গিয়ে দেখতে পাই, পুরো ফ্লাইওভারের লাইটিং সিস্টেম নষ্ট, তার ছেঁড়া, বাতিও নেই। ইন্টার কানেকশন সিস্টেম সম্পূর্ণ অকেজো। লোকালি এ প্রজেক্ট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না বুঝে আমরা ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজসহ লাইটিংয়ের জন্য ৪৯ কোটি টাকার একটি প্রজেক্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিলাম। পরে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, আপাতত লাইটিংয়ের কাজ করতে। পরে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। নির্দেশনা মোতাবেক আমরা শুধু লাইটিং বাবদ ৩০ কোটি টাকার সংশোধিত প্রজেক্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। অনুমোদন পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে দ্রুতই ফ্লাইওভারের আধুনিক লাইটিং সিস্টেম চালু করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ খুন বা ছিনতাইয়ের শিকার হোক সেটা কারও কাম্য নয়। লাইটিংটা চালুর চেষ্টা আমাদের ছিল। অর্থায়ন ছাড়া তো কাজে হাত দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এবার আশা করছি হয়ে যাবে।’
×