ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহাসড়ক থেকে টোল

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মহাসড়ক থেকে টোল

বাংলাদেশে উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও বিশ্বব্যাপী অনেক নিয়মনীতি অন্তর্ভুক্তি করতে বিভিন্ন সময় কর্মপরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গত দশ বছর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামোর যে সামগ্রিক অবয়ব, সেখানে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের হরেক প্রকল্প দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। বিশেষ করে দূরযাত্রার মহাসড়কের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সংযোগস্থলে চার লেনের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প দৃশ্যমান হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। তবে সড়ক পরিবহন বিধিতে টোল আদায়ের যে নিয়ম বাংলাদেশে সেটা প্রচলিত আছে শুধু সেতু এবং কালভার্ট পার হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। এবার বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মহাসড়কের ওপর থেকেও টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) নিয়মিত বৈঠকে এমন নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেতু এবং কার্লভাটের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হবে মহাসড়কের ওপরও টোল আদায়ের প্রক্রিয়া। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসস্থলে ‘এক্সেল রোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ তৈরির নতুন প্রকল্পের ওপর তার অভিমত প্রকাশের সময় মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যাপারটিও উত্থাপন করা হয়। টোল গ্রহণে যে তহবিল গঠন করা হবে সেই অর্থে সড়ক-মহাসড়কের সংস্কারসহ কিছু উন্নয়ন কর্মযোগ সন্নিবেশিত করাও জরুরী। বৃষ্টি¯œাত বাংলা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সারা বছরই প্রায় সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থায় গণপরিবহনের যে দুর্ভোগ যেখান সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরম অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। বেশির ভাগ সময়ই রাস্তাঘাটের এমন দুরবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরী। ফলে বিপন্ন সড়কের নতুন করে সংস্কার প্রক্রিয়াটিও চলতে থাকে। তবে সড়কের নড়বড়ে অবস্থা বেশিদিন নিরাপদ থাকে না। কিছুদিনের মধ্যেই বেহাল সড়ক তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে সময় নেয় না। সঙ্গত কারণেই সড়ক ও সেতুমন্ত্রী দেশের মহাসড়কগুলোকে তুলনা করেছেন ছেঁড়া কাঁথার সঙ্গে, যা খুব বেশি টেকে না। ফলে বছরের প্রায় সময়ই সড়ক ব্যবস্থাপনায় নজরদারিসহ পুনঃসংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু অর্থ ব্যয় করার পরও সমস্যা যে তিমির সে তিমিরেই থেকে যায়। এবার প্রধানমন্ত্রী টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেই অর্থ যাতে যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা যায় তারও রূপরেখা দিয়েছেন। তবে মহাসড়কের টোল গ্রহণের ব্যাপারটি কিভাবে নির্ধারণ হবে তা নিয়েও কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। সেতুর ওপর নির্ধারিত টোল আদায়ের ব্যাপারেও নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শুধু তাই নয়, দূরপাল্লার যানগুলো কিভাবে মহাসড়কে টোল দেবে সেটাও কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দেবে। বিদেশে সাধারণত মহাসড়কের প্রতি ৫০ মাইল রাস্তায় একটি করে ফটক থাকে। স্থানীয় যানগুলো ১০ মাইল চলার পর অন্যদিকে মোড় নিলে টোলের আওতায় পড়বে না। এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট নীতিমালা আসবে বলে মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। টোল আদায় হবে মূলতঃ জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-রংপুরের মহাসড়কই টোল আদায়ের মধ্যে পড়বে। সরকারের সময়োপযোগী বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যাতে কোন অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির আবর্তে না পড়ে সেটা বিবেচনায় এনে নতুন এই ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করলে অর্থ সঞ্চয়ন ছাড়াও রাস্তাঘাটের নিরাপদ বলয় সুনিশ্চিত হবে।
×