ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৬০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

৬০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বছর দশেক আগেও প্রজনন বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা পেত নারী। কিশোরীরা অতি লজ্জায় নিজেকে গুটিয়ে নিতো। কিছু না বলায় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যেত। মেয়েরা কৈশোরে প্রবেশের পরই শারীরিক পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। শুরু হয় ‘পিরিয়ড’ যাত্রা। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রচার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিশোরীদের প্রজনন সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন করায় নারী সচেতন হয়েছে। বর্তমানে স্কুলের ৬০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী স্যানিটারি প্যাড (বা ন্যাপকিন) ব্যবহারে পিরিয়ড চলাকালেও স্কুলে উপস্থিত থাকে। আগে এই সংখ্যা কম ছিল। দিনে দিনে বাড়ছে। সরকারী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্যানিটারি প্যাড পাচ্ছে। পিরিয়ডকালীন কিশোরীদের অনুপস্থিতির হার কমেছে। তারপরও আশাতীত ফল আসেনি। তবে সরকারীভাবে বলা হয়েছে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক স্কুলে কিশোরীদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকবে। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক স্কুলে কিশোরীদের জন্য বিশেষায়িত স্যানিটেশন ইউনিট নির্মাণ করবে। বগুড়ায় ওয়াশ ইন হেলথ কেয়ার ফ্যাসিলিটি শীর্ষক সেমিনারে কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশনের ওপর আলোচনা হয়। এই বিষয়ে এসডিজি অর্জনে সরকারকে সহযোগিতা দিতে কর্মপরিকল্পনা ও পরামর্শ দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে বগুড়ার সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, মেডিক্যাল অফিসার, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তা ও মিডিয়া কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বগুড়া এনজিও ফোরাম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মোঃ রেজওয়ানুল করিম। বিশ^স¦াস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের তথ্য এবং জরিপের বিশ্লেষণ করেন একটি প্রতিষ্ঠানের হেড অব রিসার্চ মনিটরিং এ্যান্ড ইভেন্যুয়েশন আহসান হাবিব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের জরিপে দেখা গেছে উপজেলা হেলথ এ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সেন্টারে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ৭১ শতাংশ। নারী পুরুষের আলাদা টয়লেট সংখ্যা, হ্যান্ড ওয়াশ ও ক্লিনিং সন্তোষজনক নয়। হ্যান্ড ওয়াশের আলাদা ডিভাইস আছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা প্রায় একই। কোন কোন কমিউিনিটি ক্লিনিকে ড্রামে পানি রাখা হয়। দেশে স্যানিটেশনের অবস্থা সন্তোষজনক। বলা যায় শতভাগ। তারপরও সরকারী হাসপাতালগুলোতে টয়লেট পরিষ্কার রাখায় ঘাটতি রয়েছে। টয়লেট ক্লিনিং বিষয়টি আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রতিবেদন বলা হয়, একটা সময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বড় অংশ পিরিয়ড চলাকালে স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। এখন স্কুলের ৬০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী পিরিয়ড চলাকালে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে স্কুলে উপস্থিত থাকে। বিপাকে পড়তে হয় উন্নতমানের স্যানিটিশেন ও টয়লেটের সংখ্যা কম থাকায়। এই কারণে এখনও ৪০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী পিরিয়ড চলাকালে অনুপস্থিত থাকে। বগুড়ার সিভিল সার্জন গাউসুল আজিম চৌধুরী জানান, সরকারীভাবে প্রতিটি স্কুলে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বগুড়ায় ২০০ সরকারী প্রাথমিক স্কুলে সরবরাহ করা হয়েছে। বেসরকারী সংস্থাগুলোও সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। আহসান হাবিব জানান প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত করাতে অনেক শিক্ষিক এখনও লজ্জা পান। তবে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠছে। শিক্ষিত নারী তাদের মেয়েদের প্রজনন জ্ঞান দিচ্ছেন। একজন মিডিয়া কর্মী জানান, ২০১১ সালে চলনবিলের ফুলকুচা গ্রামের এক স্কুলে একটি সংস্থা মেয়ে শিক্ষার্থীদের পিরিয়ড চলাকালে স্যানিটারি প্যাডের জ্ঞান দিয়ে প্যাড সরবরাহ করে। মেয়েদের সহায়তা করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মেয়েদের আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করে দেয়। আইসিডিডিআরবির এক জরিপে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগেও গ্রামের নারী পিরিয়ড চলাকালে পুরাতন কাপড়ের ন্যাকড়া ব্যবহার করত। মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারে এসব নারী সচেতন হয়ে প্যাড অথবা ন্যাপকিন ব্যাবহার করছে। বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রজনন জ্ঞান নিতে পারছে। স্যানিটারি প্যাডের গুরুত্ব বুঝে স্বজনদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলছে।
×