ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাংলাদেশ সবার উপরে। আর এবার মাথাপিছু আয়ে ভারতকে টপকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে ভাল খবর। বুধবার সচিবালয়ে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ফগার মেশিন, মেলাথিয়ন কীটনাশক ও হস্তচালিত মেশিন ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে তা ভারতের মিডিয়াগুলোও বড় করে প্রচার করছে। দেশটির বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১৯০৯ ডলার। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৩৯ দশমিক ৬১ ডলার মাথাপিছু আয় ভারতের। তবে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বলছে, মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি, মাথাপিছু আয় ও মানবসম্পদ সূচকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান ধীরে ধীরে কমে আসছে। গড় আয়ুতে ইতোমধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়ন এবং স্বাস্থ্যসেবায় এদেশের অগ্রগতিও চোখে পড়ার মতো। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালসহ আগের তিন বছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪ শতাংশ। ওই বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৩৫৫ মার্কিন ডলার। এই ধারা চলতে থাকলে ২০২০ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে। ভারতের একজন নাগরিক বাংলাদেশের নাগরিকের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি আয় করেন, অথচ ২০১১ সালে ভারতের নাগরিক আয় করতেন ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৬ সালসহ আগের তিন বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষেত্রে সমন্বিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (সিএজিআর) ১২ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। এক্ষেত্রে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেকের কম ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে পাকিস্তানের সিজিআর ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। আর চীনের অর্থনৈতিক প্রসারের বার্ষিক হার ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ভারতের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া সম্প্রতি জাতিসংঘ বলেছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই যে অর্থনৈতিক অর্জন এটাই এখন সবাইকে বলতে হবে, জানাতে হবে। তিনি বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বিশ্বে সবার ওপরে। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত এই দশ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারাবিশ্বে সবার উপরে। গত ২৯ আগস্ট ‘দ্য স্পেক্টটের ইনডেক্স’ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি শতকরা ১৮৮ ভাগ এবং অন্য দেশের মধ্যে চীন ১৭৭, ভারত ১১৭, ইন্দোনেশিয়া ৯০, মালয়েশিয়া ৭৮, অস্ট্রেলিয়া ৪১ এবং ব্রাজিল ১৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ওই সময় বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে এমন শীর্ষ ২০ দেশের তালিকায় ঢুকবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি সেখানে ১শ’ ভাগের দশমিক ৯ ভাগ অবদান রাখবে। যেখানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ কানাডার অবদানও একই। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হিসেবে বাংলাদেশ গত ক’বছর ধরে ধারাবাহিক সাফল্য পেয়ে আসছে। পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশ স্বাধীনের পরবর্তী সময় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১২০ মার্কিন ডলার তখন ভারতের মাথাপিছু আয় ১৪০ ডলার ছিল। অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই অর্জন ধরে রাখতে হলে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যানসিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক কাজে লাগাতে একটি আইন করছে সরকার। এর ফলে দেশের ভাল হবে। ব্যাংকি খাতে তারল্য সঙ্কট তৈরি হবে না। তিনি বলেন, যেখানে যে অবস্থায় অলস টাকা যা এফডিআর হিসেবে জমা আছে তা সেভাবেই থাকবে। তবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সরকারের কাছে এর লিখিত জবাব দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে থাকবে রাষ্ট্রের সম্পদ। তিনি বলেন, এই ব্যবস্থার ফলে জবাবদিহিতা বাড়বে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের আয় ভাল। আয় ভাল প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারী অর্থের অপচয় করছে। এই আইনের ফলে অপচয় বন্ধ হবে। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলো চলতে না পারলে তাদের মার্জ করা হবে। সরকার ব্যাংক দিয়েছে আবার তা নিয়েও নিতে পারে। হলমার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ব্যবসার সুযোগ দেয়া হবে। তবে এর আগে তাদের সরকারী টাকা পরিশোধ করতে হবে। এদিকে, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) জন্য ২০০টি ফগার মেশিন, ১৫০টি হস্তচালিত মেশিন ও ৪০ হাজার লিটার মেথরিয়ান কীটনাশক ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে সরকারের ব্যয় হবে ৫ কোটি ৩২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এক মাসের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি ও কীটনাশক দেশে আসবে। এসব ক্রয়ের জন্য টেন্ডার করলে অনেক সময় লাগবে। জাতির কথা বিবেচনা করে এ ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা কয়েক দেশ সফর করেছেন। তারা পরবর্তীতে সিঙ্গাপুর যাবেন। সিঙ্গাপুরের একটি প্রকল্প আছে, মশাকে আকৃষ্ট করে তারা একত্রে মারে। তারা গর্ত করে সব মশা আকৃষ্ট করে সেখানে আনে, তখন সব মশা একসঙ্গে মারা হয়। আমাদের আগে মশা তাড়ানো হতো, তাই লাভ বেশি হয়নি। আমরা দেখছি মোটামুটি পরিবর্তন আসছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের ডেঙ্গু স্মরণকালের ভয়াবহতা দেখিয়েছে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বিষয়টি জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে সরকার। শুরুর দিকে সেবাদান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব না পাওয়ায় এবার শুধু উত্তর সিটির জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছে। উত্তর সিটি যেহেতু কিনছে, দক্ষিণেও হয়তো কিনবে। মশা মারার এ কার্যক্রম বছরব্যাপী চলবে। শীত বেশি হলে এত মশা থাকবে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, হলমার্ক, বিসমিল্লাহসহ যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণ জালিয়াতি করেছে তারা সবাই টাকা ফেরত দেবে এবং ব্যবসায় আসবে। এদিকে, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ১২ বছরে অর্থ পরিশোধের যে উদ্যোগ ঋণখেলাপীদের বিষয়ে নেয়া হয়েছে, তা আদালতের নির্দেশে বর্তমানে স্থগিত করা আছে, সে প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, কাউকে বিপদে ফেলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবেনা।
×