ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 আফগানদের বিরুদ্ধে টেস্ট শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার একমাত্র টেস্ট শুরু হবে আজ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সকাল দশটায় টেস্ট ম্যাচটি শুরু হবে। দুই দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নামবে। বাংলাদেশ ১৯ বছর ধরে এর আগে ১১৪টি টেস্ট খেললেও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে কখনও টেস্ট খেলা হয়নি। কারণ ২০১৭ সালের জুনের আগে আফগানরা টেস্ট মর্যাদাই পায়নি। টেস্টে কুলীন রাজ্যে প্রবেশ করে দুটি মাত্র টেস্ট খেলেছে আফগানিস্তান। এবার নিজেদের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামবে আজ। সেই টেস্টটি হবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান দুই দলই চার মাস পর টেস্ট খেলতে নামবে। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ এ বছর মার্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে। আর আফগানিস্তান ‘হোম ভেন্যু’ হিসেবে ব্যবহার করা ভারতের দেরাদুনে এ বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বশেষ টেস্ট খেলেছে। নিজেদের শেষ টেস্টটিতে বাংলাদেশ যেখানে হারের তিক্ত স্বাদ পেয়েছে, সেখানে আফগানদের জয়ের মধুর স্মৃতি মিলেছে। তবে ‘হোম ভেন্যু’তে খেলার হিসেব ধরলে বাংলাদেশ ৮ মাস পর দেশের মাটিতে খেলতে নামছে। গত বছর নবেম্বরে দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। সেই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। তাতে করে দুই দলই নিজেদের শেষ টেস্টে ‘হোম ভেন্যু’তে জয়ের স্বাদ নিয়েই খেলতে নামবে। এবার বাংলাদেশ খেলবে আফগানদের বিরুদ্ধে। এ বছর দেশের মাটিতে এ একটি টেস্টই খেলবে বাংলাদেশ। এই টেস্টকে সামনে রেখে আফগানিস্তান দল কঠোর অনুশীলন করেছে। দেরাদুনে প্রস্তুতি ক্যাম্প না করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অনুশীলন করেছে। বাংলাদেশে প্রচুর গরম। গরমকে হিসেবে রেখে আবুধাবির গরম আবহাওয়ায় প্রস্তুতি ক্যাম্প করে বাংলাদেশে এসেছে আফগানিস্তান। কিন্তু সেই গরম কী আসলেই মিলবে? এ মুহূর্তে গরম হাওয়াই বইছে। তবে আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস তাতে দেখা যাচ্ছে, আগামী দুইদিন চট্টগ্রামে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টিতে একমাত্র টেস্টকে চোখ রাঙাচ্ছে। তবে পুরোপুরি সেই বৃষ্টি আবার টেস্টকে কাবু করতে পারবে না, তাও পূর্বাভাস মিলছে। খেলা যে পাঁচদিনের হবে। প্রথম দুইদিন আবার পুরো সময়জুড়ে বৃষ্টি থাকবে না। হঠাৎ হঠাৎ আসবে। তাহলে তো খেলা হবেই। আর খেলা জমে ওঠারও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। রশীদ খান নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট নেতৃত্ব দেবেন। টস করতে নামতেই সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন। যখন টেস্টটি খেলতে নামবেন তখন আবার আইসিসির নতুন নিয়মে সাদা জার্সিতে নাম ও নাম্বার লেখাও থাকবে। টেস্টের নতুন যুগে যখন প্রবেশ করবেন, তখন রশীদের নেতৃত্বের শুরুটাও হবে। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও টেস্টের এই যুগের সাক্ষী আজ হয়ে যাচ্ছে। এই নতুন জার্সি পরে কোন দলটি দেখাবে ঝলক? সেই প্রশ্ন সবখানে। আবার সবার কাছে একটি জবাবও প্রস্তুত, বাংলাদেশের কাছে আফগানিস্তান পাত্তাই পাবে না। মাত্র দুই টেস্ট খেলে কী টেস্টের যে মহিমা সেটি বোঝা সম্ভব? আর বাংলাদেশ তো দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও হারিয়েছে। সেখানে আফগানরা তো টেস্ট খেলাটা মাত্র শুরু করেছে। তাই বাংলাদেশ যে দাপটে আফগানিস্তানকে হারাতে চায় সেটিই হতে পারে। দুই দলের অধিনায়কই আবার টেস্ট শুরুর আগেরদিন বুধবার সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট জেতার মন্ত্র বলে দিয়েছেন। এত যে এই টেস্টে স্পিন নিয়ে কথা হচ্ছে, আসলে ম্যাচ জেতা যাবে ব্যাটসম্যানদের নৈপুণ্যে। দুই দলের স্পিনাররাই যে তুখোড়। স্পিনবান্ধব উইকেট পেলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। আর পেস বোলিংটা তো এই টেস্টে উপেক্ষিতই থাকবে। উপমহাদেশের উইকেটে খেলা। দুই দলেই আবার স্পিন মজবুত। তার মানে স্পিনে বধ করার চেষ্টা চলবে। আফগানরা রশীদ খান, মোহাম্মদ নবী, জহির খান, কাইস আহমেদকে দিয়ে সেই কাজ করার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশও সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানকে নিয়ে আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপ তছনছ করে দেয়ার চেষ্টা করবে। তাতে বোঝাই যাচ্ছে স্পিন আর পেস নয়, এই টেস্টে যে দল ব্যাটিংয়ে ভাল করবে তারাই টেস্ট জিততে পারে। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব যেমন বলেছেন, ‘দেশে আমরা তো ভালই বোলিং করেছি। আমাদের স্পিনাররা যখনই তাদের পছন্দমতো উইকেট পেয়েছে, সবসময়ই ভাল করেছে। তবে ওদেরও (আফগানিস্তান) কোয়ালিটি স্পিনার আছে। আমার মনে হয় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে এখানে দুই দলের ব্যাটিং।’ রশীদও একমত। বলেছেন, ‘ঠিক বলেছে (সাকিব)। আমরাও এটা ভাবছি। এই কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের রান করা কঠিনই হবে। যে টিকে থাকতে পারবে, চাপ সামলাতে পারবে, তারাই জিতবে। স্পিনারদের ঠিক জায়গায় বোলিং করতে হবে। ঠিক লেংথে বোলিং করতে পারলে উইকেট পাওয়া সহজ হবে। আগে এখানে স্পিনারদের ম্যাচ হতে দেখেছি। দুই দলেরই তাই ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষা। যারা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে যারা স্নায়ুর সঙ্গে পেরে উঠবে, ঠিক সময়ে ঠিক কাজটা করবে তারাই জিতবে।’ এই ব্যাটিং জায়গাটিতেই বাংলাদেশ দল অনেক এগিয়ে থাকছে। আফগান দলে যেখানে ইহসানুল্লাহ, ইবরাহিম জাদরান, জাভেদ আহমদি, রহমতশাহ, আসগর আফগান, হাসমতুল্লাহ শহিদী, মোহাম্মদ নবী, রশীদ খানরা রয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশ দলে সৌম্য সরকার, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। ব্যাটিং যদি হয় জয়ের মন্ত্র, তাহলে তো বাংলাদেশের সামনে আফগানদের কুলিয়ে ওঠারই কথা নয়। টেস্টে ধৈর্য ধরে উইকেট আঁকড়ে থাকার যে মেজাজ সেটিই তো এখন পর্যন্ত আয়ত্ত করতে পারেননি আফগান ব্যাটসম্যানরা। সবদিকেই আসলে টেস্টে বাংলাদেশই এগিয়ে রয়েছে। এখন আজ শুরু হতে যাওয়া টেস্টে আফগানদের দাপটের সঙ্গে হারিয়ে সেই এগিয়ে থাকার মর্ম বুঝিয়ে দেয়া গেলেই হলো।
×