ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:৩০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ

ওয়াজেদ হীরা ॥ বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি প্রাণিসম্পদের অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধি এবং টেকসই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, দেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান অঞ্চলকে বাদ দিয়ে সমতল অঞ্চলের ২৯ জেলার ২১০টি উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় সমন্বিত পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ব্যবহারের মাধ্যমে সমতল অঞ্চলের অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রকল্পটি ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাণিসম্পদ সাবসেক্টরের বর্তমান ও ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে প্রাণিজাত খাদ্য ও গোখাদ্যের ব্যবস্থাপনাকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা আমাদের অন্যান্য জেলায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবনমানের দিকেও খেয়াল রাখছি। তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারের পরিকল্পনা আছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী যারা বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে আছে সমতলে অর্থাৎ এক লাখ ৩৮ হাজার পরিবার প্রায়। এদের অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করা। কোন পরিবারে গরু, ছাগল বা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া যাতে তারা পিছিয়ে না থাকে। সরকার সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় এটি সেই উদ্যোগ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালী হলেও তাদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। এই জাতিগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে তাদের স্বকীয়তা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০ এর ধারা ২ (১) এবং ১৯ ধারা অনুযায়ী দেশে নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা ২৭টি। এদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশের বাস পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবং বাকি ৫৮ শতাংশ সমতলে বাস করে। সমতলে বসবাসরত নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁওতাল, ওরাও, বর্মন, খাসি, গারো অন্যতম। তবে এই জাতিগোষ্ঠী পাহাড়ীদের তুলনায় একটু বেশিই বঞ্চিত। দারিদ্র্য ও অনগ্রসরতার কারণে তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনাচরণ থেকে বেরিয়ে আসছে না। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তুলতে এসব জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র খামারি পর্যায়ে প্রাণিসম্পদের অব্যাহত উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই কর্মসংস্থানের প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় দারিদ্র্য নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিক পদ্ধতিতে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের লক্ষ্যে আধুনিক ব্যবস্থাপনা, উন্নতজাতের ঘাস উৎপাদন ও সংরক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে পিছিয়েপড়া এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের, দারিদ্র্য বিমোচন ও আমিষের চাহিদা পূরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ৩৫২ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সমন্বিত পদ্ধতিতে প্রাণিসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সমতল অঞ্চলের অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন, প্রাণিসম্পদ উৎপাদন (গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি) এবং উন্নতজাতের ঘাস উৎপাদন, সংরক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি তাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করে জীবনমান উন্নয়নও এই প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দবিহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় শুরুতেই সরকারের নেয়া উদ্যোগের সুফলভোগী পরিবার নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত খামারি পরিবারের মাঝে প্যাকেজভিত্তিক অনুদান বিতরণ করা হবে। যারা লালন-পালনের জন্য প্রাণী, অস্থায়ী ঘর নির্মাণ ও খাদ্য সহায়তা পাবেন। খন্ডকালীন ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর নিয়োগ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৩৫ সুফলভোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। ঘাসের প্রদর্শনীর জন্য প্লট তৈরি ও ঘাস চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাজার সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত পণ্য ও পণ্যসামগ্রী বিক্রির জন্য বাজারজাতকরণ করা হবে। সুবিধাভোগীদের জন্য ওষুধ ও টিকা সংগ্রহ করা হবে।
×