ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিপূরণ বঞ্চিত ১৩ জন

নওগাঁয় পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নওগাঁয় পাসপোর্ট অফিসের ভূমি অধিগ্রহণে অনিয়ম

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের জন্য জমি অধিগ্রহণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সদরের চকপাথুরিয়া মৌজায় ৯১ নং দাগে যে ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, ওয়ারিশসূত্রে তার প্রকৃত মালিক ২৫ জন হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের ন্যায্য পাওনা থেকে ৬ নারীসহ ১৩ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন শুধু তাদের নামেই গত ১৮ আগস্ট ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ বাবদ প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় গত ২২ আগস্ট বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে রতন হোসেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে অভিযোগকারীসহ বঞ্চিতদের কাউকেই সংশ্লিষ্ট অফিসে ডাকা হয়নি বলে জানিয়েছেন রতন হোসেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাখিল করা অভিযোগ এবং আদালতে চলমান মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ সদরের চকপাথুরিয়া মৌজায় ৯১ নং দাগের ওই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক ছিলেন একই জেলা সদরের কোমাইগাড়ি মহল্লার মৃত দৌলত মন্ডলের পুত্র রহিম উদ্দিন মন্ডল। রহিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে ওই জমির মালিকানা প্রাপ্ত হন। নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ প্রকাশিত রিভিশনাল সার্ভে বা আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ের নাম উল্লেখ থাকার কথা। কিন্তু সেটেলমেন্ট দফতরের ভুলে আরএস খতিয়ানে রহিম উদ্দিনের শুধু দুই ছেলে আমির উদ্দিন মন্ডল ও আব্দুর রাজ্জাকের নাম প্রকাশ পায়। বিষয়টি জানার পর ২০১১ সালে নওগাঁ প্রথম সাবজজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা (নং ৫৯/১১) করা হয়। মামলায় মৃত রহিম উদ্দিনের একমাত্র জীবিত কন্যা লাইলী বেগম এবং তার মৃত দুই ভাই-বোনের ১২ সন্তান পক্ষভুক্ত হন। ওই মামলার বাদী পক্ষের একজন লাইলী বেগম জানান, স্থানীয় ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে চকপাথুরিয়া মৌজার ৯১ নং দাগের সেই ২৫ শতক জমি অধিগ্রহণের কথা জানিয়ে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি প্রথম নোটিস (এল এ কেস ১০/২০১৬-২০১৭) ইস্যু করা হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ জুন এবং ১১ জুলাই আরও দুটি নোটিস ইস্যু করা হয়। তখন তিনিসহ ১৩ ওয়ারিশ ওই জমি নিয়ে আদালতে বাটোয়ারা মামলা চলমান থাকার কথা জানিয়ে নওগাঁ ভূমি অধিগ্রহণ অফিসারের কার্যালয়ে চিঠি দেন। তাতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা ওই জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ কাউকে পরিশোধ না করার অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার জয়া মারীয়া পেরেরা কয়েক দফা শুনানি করেন। প্রায় দেড় বছর আগে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানিতে জয়া মারীয়া পেরেরা তাদের জানান, বাটোয়ারা মামলা নিষ্পত্তি কিংবা বাদী-বিবাদী পক্ষের মধ্যে আপোসমীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ কাউকে প্রদান করা হবে না। তবে পরবর্তীতে ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার মারীয়া পেরেরা অন্যত্র বদলি হয়ে যান এবং যোবায়ের হোসেন নামে এক কর্মকর্তা তার স্থলাভিষিক্ত হন। লাইলী বেগমের অভিযোগ, যোবায়ের হোসেন ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার হিসেবে যোগদানের পর তাকেও অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত জমি নিয়ে বাটোয়ারা মামলা বিদ্যমান থাকার কথা জানিয়ে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ না করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তিনি তা আমলে না নিয়ে বরং তড়িঘড়ি করে গত ১৮ আগস্ট এক পক্ষের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৯২ লাখ ৭২ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। এ ব্যাপারে জেলা ভূমি অধিগ্রহণ অফিসার যোবায়ের হোসেন বলেন, সঠিক নিয়ম মেনেই এবং আদালতের জিপির মতামত নিয়ে ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন অনিয়ম করা হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×