নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম, ৪ সেপ্টেম্বর ॥ বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নের বেলগাঁও চা-বাগানের অধীনস্থ পাহাড় থেকে দেড় সহস্রাধিক গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া ওই এলাকায় ২শ’ একর চা বাগানের জায়গা দখল করে ঝিনুক পোল্ট্রি ফার্ম নামে বিভিন্ন ইউনিট সৃষ্টি করে পুরো পাহাড় উজাড় করে ফেলছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আসহাব উদ্দিন। এদিকে গহীন অরণ্যে ৫০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই লেয়ার মুরগির ফার্ম। যার বর্জ্য লোকালয়ে পতিত হয়ে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। এ ঘটনায় বেলগাঁও চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আবুল বাশার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে একাধিক আবেদন করেও সুরাহা না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। সর্বশেষ বুধবার বিকেলে চা-বাগানের দখলীয় জায়গা হতে সহস্র্রাধিক গাছ কর্তন ও পোল্ট্রি ফার্মের নতুন স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার শরণাপন্ন হয়েছেন বাগানের ব্যবস্থাপক।
এ বিষয়ে চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোঃ আবুল বাশার জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চা-বাগানের জায়গায় অবৈধভাবে পোল্ট্রি গড়ে তুলে ব্যবসা করে আসছেন। যার ফলে পোল্ট্রি ফার্মের আবর্জনার দুর্গন্ধে চা-বাগানের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে অভিযোগ দাখিল করেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত চা-বাগানের জায়গা উদ্ধারে কোনরূপ দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এদিকে বাগানের সহস্র্রাধিক গাছ কর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, কর্তনকৃত গাছগুলো ওই পোল্ট্রি ফার্মের সন্নিকটে চা-বাগানের পাহাড় থেকে কাটা হয়েছে। কারা এই কাজ করেছে তা জানি না। তবে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। সরজমিনে দেখা যায়, গত ৩৫ বছর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে নিলামের মাধ্যমে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ ৩ হাজার ৪শ’ ৭০ একর জায়গা লিজ নেয়। পুরো এলাকায় চা-বাগান এখনও পর্যন্ত সৃষ্টি না হওয়ায় পরিত্যক্ত জায়গা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আসহাব উদ্দিন ২শ’ একর জায়গা দখল করে নেয়। তাছাড়া অসংখ্য প্রভাবশালী মহল চা বাগানের জায়গায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বসতি বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। পুকুরিয়া বেলগাঁও চা-বাগানের পাহাড়ী এলাকায় রোপিত অসংখ্য একাশি গাছসহ বিভিন্ন গাছ কেটে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তাছাড়া চা-বাগানের প্রায় ২শ’ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে ঝিনুক পোল্ট্রি ফার্মের বেশ কয়েকটি ইউনিট। জানা যায়, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চা-বাগানের প্রায় ২শ’ একর জায়গা দখল করে ওই পোল্ট্রি ফার্মটি গড়ে তোলেন। এ বিষয়ে চা-বাগান কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন মহলে বেশ কয়েকটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। যার প্রেক্ষিতে প্রতিদিন চা-বাগানের নতুন নতুন জায়গা দখল করে পোল্ট্রি ফার্মের বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন গড়ে তুলে দেদার পোল্ট্রি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন।
এদিকে চা বাগানের জায়গা দখল করে পোল্ট্রি ফার্ম নির্মাণ ও গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আসহাব উদ্দিন জানান, গাছগুলো কে কেটেছে তা আমি জানি না। তবে আমি শুনেছি ছিদ্দিক মেম্বার নামে একজন জনৈক ব্যক্তি এই গাছ কর্তন করেছে। এদিকে চা-বাগানের জায়গা দখল করে পোল্ট্রি ফার্ম গড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি জেলা প্রশাসক থেকে লিজ নিয়ে পোল্ট্রি ফার্ম করেছি। এখানে চা-বাগানের কোন মালিকানা নেই। তবে পোল্ট্রি ফার্মের বর্র্র্জ্য লোকালয়ে গিয়ে পরিবেশ বিনষ্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
