ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের উদ্যোগ

তিন বছরেও হস্তান্তর হয়নি মহিলা মার্কেটের দোকান

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

তিন বছরেও হস্তান্তর হয়নি মহিলা মার্কেটের দোকান

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ নারীর উন্নয়ন আর তাদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে খড়িবাড়ী হাটবাজারে নির্মাণ করা হয় মহিলা মার্কেট। গ্রামীণ মহিলারা স্বাবলম্বী হবেন নিজের চেষ্টায়। তারা ঘরে বসে না থেকে পুরুষদের পাশাপাশি দোকানে বিভিন্ন জিনিস বেচাকেনা করবে দৈনন্দিন। হবে নারী উদ্যোক্তা। পুরুষের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব তারাও নেবে সমানতালে। গ্রামীণ অর্থনীতি হবে আরও স্বাবলম্বী। এ লক্ষেই বর্তমান সরকার এলজিইডির মাধ্যমে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় খড়িবাড়ী বাজারে মহিলা মার্কেট নির্মাণ করে। এখন এই মহিলা মার্র্কেটটি ভেস্তে যেতে বসেছে। এটি নির্মাণের তিন বছর অতিবাহিত হলেও হস্তান্তর হয়নি। ফলে মার্কেটের আয়ের উৎস থেকে সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হয়ে আছে। মার্কেটটি পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। গ্রামের হতদরিদ্র নি¤œআয়ের নারীদের উন্নয়নের জন্য সরকার মহিলা মার্কেট তৈরি করেছে ফুলবাড়ী উপজেলায়। এলজিইডি বিভাগের অধীনে খড়িবাড়ী বাজারে গত ২০১৫/১৬ অর্থবছরে রংপুরের মেসার্স তাজ মঞ্জিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ শুরু করে। তারা কার্যাদেশ নিয়ে ৭০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬টি দোকান ঘর ও একটি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির ভবন নির্মাণ করে দেয়। এ ভবনের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পন্ন বিল উত্তোলন করেন। কিন্তু ভবনের রুমগুলো সুবিধাভোগীদের কাছে হস্তান্তর হয়নি তিন বছরও। সুবিধাভোগীরা ঘর বরাদ্দ পাওয়ার আশায় সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে ধর্না দিয়ে আসলেও পাচ্ছে না বরাদ্দের ঘর। কবে পাবেন তাও জানেনা কেউ। তবে এক শ্রেণীর অসাধু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা উঠে পড়ে লেগেছে গোপনে ঘর বরাদ্দ নেয়ার জন্য। এতে করে মার্কেট নির্মাণের আগে যাদের লিজ নেয়া ঘর ছিল তাদের বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা না হলে তিনবছর অতিবাহিত হলে কেন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছ না এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এর আগে একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ফুলবাড়ী উপজেলায় বালার হাট ও নেওয়াশি বাজারে মহিলা মার্র্কেট নির্মাণে পর। সেখানে শুধু মহিলারা দোকান চালু করে ব্যবসা করার কথা। সে অনুযায়ী মহিলারাও চুক্তি করেছেন স্ট্যাম্পে। কিন্তু দোকানগুলো অপেশাদারি একশ্রেণীর প্রভাবশালী তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে সাব লিজ দিয়েছে। ওইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে মহিলা মার্কেট কথাটি পর্যন্ত লেখা নেই। বাজারে একটি দোকানও মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে নামে মাত্র ভাড়ায় নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে করা সরকারের নেয়া উদ্যোগ এখন ভেস্তে যেতে বসেছে। ব্যবসায়ী আঃ মালেক জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে মানুষের দোকান ভাড়া নিয়ে মুদি দোকান করে সংসার চালিয়ে আসছি। সেই দোকান ঘর ভাঙ্গার পর ওই জায়গায় মহিলা মার্কেট করেছে সরকার। স্ত্রী আর প্রতিবন্ধী মেয়ের নামে আবেদন করেছি। সে ঘর বরাদ্দ পাওয়ার আশায় প্রশাসন ও চেয়ারম্যানের কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কাজ হয়নি। কর্তৃপক্ষ বার বার দোকান দেয়ার আশ^াস দিলেও লাভ হয়নি। এভাবেই তিনটি বছর অতিক্রম করলাম। বড়ভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খয়বর আলী জানান, অনেকেই আবেদন করেছেন। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কমিটির সদস্যদের নিয়ে মিটিং করে দোকান ঘর হস্তান্ত করা হবে । উপজেলা প্রকৌশলী আসিক ইকবাল জানান, ভবনের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। তারা পদক্ষেপ নিলে হস্তান্তর হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাছুমা আরেফিন জানান, আবেদনগুলো চেয়াম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দ্রুত যাতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পায় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×