ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তেঁতুলিয়া গ্রাস করছে বাড়ি-জমি ॥ পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

তেঁতুলিয়া গ্রাস করছে বাড়ি-জমি ॥ পাল্টে যাচ্ছে মানচিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ৩ সেপ্টেম্বর ॥ ‘বাপের বাড়ি খাইছে, এবার ধরছে স্বামীর বাড়ি। নদীডায় আমাগো পথের ভিখারি বানাইয়া ছাড়বে’ এভাবেই কথাগুলো বলেন, তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী বাউফলের ধুলিয়া গ্রামের হান্নান হাওলাদারের স্ত্রী মুকুল বেগম। প্রতিদিনই তেঁতুলিয়া গ্রাস করছে ভিটাবাড়িসহ ফসলি জমি। তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে হারিয়ে যাচ্ছে ধুলিয়া ইউপির মূলভূখ-। গত ৫-৬ মাসে তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ধুলিয়া গ্রামের আনছার আলী খা, বারু মিয়া, হালিম মিয়া, নুরু হাওলাদার, খালেক খা, মতি খলিফা, আব্দুল আলী মেম্বর, হুমায়ুন দেওয়ান, সুফিয়া বেগম, সবুজ হাওলাদার, রাজা মিয়াবাড়িসহ অর্ধশতাধিক বাড়ি, কয়েকশ’ পরিবারের কয়েক হাজার একর কৃষি জমি। ভাঙনের কবলে ভূমিহীন হয়ে ধুলিয়া এনকে সরকারি প্রাইমারী স্কুল মাঠে আশ্রয় নিয়েছে গনি হাওলাদার, মিন্টু দেওয়ান ও হারুন দেওয়ানের পরিবার। আরসিসি রাস্তার পাশে আশ্রয় হয়েছে মোশারফ গাজী, সিরাজ মিয়া, আলতাফ হাওলাদারসহ অনেক পরিবারের লোকজনের। ভিটা-বাড়ি আর সহায়-সম্বল হারিয়ে পাশের এলাকায় নানা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন সবুজ হাওলাদার। সবুজ হালাদারের মতো আত্মীয়-স্বজনের আশ্রয় কিংবা রাস্তার পাশেও বসতঘর নির্মাণের সামর্থ্য হারিয়ে অন্যের ঘরে ঘরে কামলা খেটে দিন পার করছেন মমতাজ বেগম, কালাম হাওলাদার, সুফিয়া বেগমের মতো কয়েকজন। অনেকেই করছেন মানবেতর জীবন-যাপন। কেউ কেউ আবার সাধ্য অনুযায়ী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছেন অন্য এলাকায়। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভুক্তভোগী গনি হাওলাদার বাড়ির রশিদ হাওলাদারের স্ত্রী জাহানার বেগমকে (৩৮) ভাঙ্গনের কবল থেকে বসতঘর সরিয়ে নেয়ার পরে অবশিষ্ট রান্নাঘরের মালামাল সরিয়ে সাময়িক আশ্রয় নেয়া বাড়ির শেষ সীমানায় স্তূপ করতে। তিনি বলেন, ‘ঘর পোড়লে তবু বাড়ি-ভিটা থাহে, নদীতে ভাঙলে কিচ্ছু থাহে না।’ নদীপাড় থেকে সরিয়ে নেয়া মসজিদের বারান্দার পাশে পরিত্যক্ত এক টিউবওয়েলের প্লাটফর্মে নদীমুখী বিষণœ হয়ে বসে থাকা স্থানীয় বালু ব্যাবসায়ী ইয়াকুব হাওলাদারের ছেলে হান্নান হাওলাদার জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে জানান, তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গনে এখন আর সময় অসময় লাগে না। বর্ষায় ভাঙ্গে। ভাঙ্গে শীতেও। নদীর ভাঙ্গনে ভিটা-বাড়ি, হাট-বাজার, স্কুল, মসজিদ, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। সত্তর দশক থেকে তেতুঁলিয়ার অবাধ ভাঙ্গনে ভূমিহীন হয়েছেন অনেকে। পূর্ব-পুরুষের পেশা পাল্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকায়। কেউ বা করছেন মানবেতর জীবনযাপন। তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন ও নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী, ধানদী, ডালিমা, কচুয়া ও তাঁতেরকাঠী এলাকা রক্ষায় টেকসই প্রকল্প গ্রহণের দাবিতে নদীপাড়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন স্থানীয়রা। ইতিমধ্যে নিমদী সরকারী প্রাইমারী স্কুল রক্ষায় মাত্র ২০০ মিটারে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও অরক্ষিত পড়ে আছে ভাঙ্গনকবলিত বিশাল এলাকা।
×