ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের জের

পানির চরম সঙ্কটে তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা এলাকার মানুষ

প্রকাশিত: ১০:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পানির চরম সঙ্কটে তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা এলাকার মানুষ

ফিরোজ মান্না ॥ রাজধানীর মিরপুরবাসীর জন্য প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ প্রকল্পের কারণে আশুলিয়ার তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা এলাকার মানুষ পানির চরম সঙ্কটে পড়েছে। ওই এলাকার মানুষ এখন ওয়াসার বিরুদ্ধে মিছিল ও মানববন্ধন করে যাচ্ছে। তারা বলছে, ‘তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ’ নামে প্রকল্পে মোট ৪৬টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে মিরপুর এলাকায় প্রতিদিনি ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করবে ওয়াসা। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন করে ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এতেই এলাকার পানির স্তর কয়েক ফুট নিচে নেমে গেছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। সেচ কাজেও পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ৪৬ গভীর নলকূপ স্থাপন হলে এলাকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এলাকার মানুষের সমস্যা দূর করার কথা দিলেও-গত ৬ মাসে কোন কাজ হয়নি। এ কারণে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। তারা সেপ্টেম্বরের যে কোন দিন ওয়াসার মূল ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে প্রকল্পটিতে দক্ষিণ কোরিয়া ৩৬২ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা সহযোগিতা দিয়েছে। বাকি ২শ’ ১৫ কোটি টাকা সরকার ও ওয়াসা বহন করবে। কিন্তু দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানোর কারণে ব্যয় বেড়ে ৫শ’ ৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। বাড়তি টাকাতেও প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ১ শ’ কোটি টাকা বেড়ে যাবে বলে মনে করছে ওয়াসা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। এতে ঢাকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পানি সমস্যা দূর হবে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় বেশি লাগায় প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এখন বাড়তি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে হাতে নেয়া প্রকল্পটি এ বছরের গোড়ার দিকে শেষ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে ধীরগতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। এই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের মে মাসে। চার দফা তারিখ পিছিয়ে প্রকল্পটির আংশিক বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি থেকে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ কারণে আশুলিয়ার ‘তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা’ এলাকার মানুষের চরম দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। সেখানে টিউবওয়েল ও শ্যালো মেশিনের পানির স্তর কয়েক ফুট নিচে নেমে গেছে। বিষয়টি জানিয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সমাধান করবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিল। সূত্র জানিয়েছে, মিরপুরবাসীর জন্য প্রতিদিন ১৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় ২০১২ সালে। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত প্রকল্পের মাত্র ৭৫ ভাগ শেষ হয়েছে। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের তারিখ ঘোষণা করা হয় গত বছরের মার্চে। মার্চেও কাজ শেষ করতে পারেনি ওয়াসা। সর্বশেষ প্রকল্পটির আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এ বছেরর শুরুর দিকে। অভিযোগ উঠেছে, চার দফা তারিখ বদল করে ওয়াসার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো। ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ প্রকল্প প্রায় শেষ। প্রথম ফেজে সেখান থেকে মিরপুর এলাকায় পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় ফেজের কাজ অল্পদিনের মধ্যেই শেষ হবে। তবে প্রকল্পটির কারণে ওই এলাকার মানুষের কিছু সমস্যা হচ্ছে এমন একটি অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা সমস্য দূর করার জন্য কারিগরি টিম গঠন করেছি। তারা বিষয়টি দেখছেন। অবশ্যই আমরা সেখানকার মানুষের অসুবিধা দেখব। এক এলাকায় অসুবিধা করে অন্য এলাকায় সুবিধা দেয়া হবে-এমন কাজ করা হবে না। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার মিরপুরে দীর্ঘকাল ধরে পানি সরবরাহ সমস্যা দূর করতে ঢাকা ওয়াসা ২০১২ সালের জুলাই মাসে ‘তেঁতুলঝোড়া-ভাকুর্তা ওয়েল ফিল্ড নির্মাণ’ নামে প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মে মাসে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় সীমা ছিল ২০১৭ সালের জুলাই মাসে। পরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা বলা হয় ২০১৮ সালের মার্চে। নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
×