ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাঁদাবাজি করেই ওরা গাড়ি বাড়ির মালিক

প্রকাশিত: ১০:০১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 চাঁদাবাজি করেই ওরা গাড়ি বাড়ির মালিক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এলাকায় ওরা ধনী পরিবার। বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে চলাফেরা। রাজধানীর অভিজাতপাড়ায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ওদের রয়েছে মাইক্রো, লেগুনার ব্যবসাও। অবশ্য এই সচ্ছলতার পেছনে চাঁদাবাজিই ছিল তাদের মূল পেশা। মোবাইলে যে সিম দিয়ে ওরা চাঁদাবাজি করত। সেই সিমগুলো অন্যের নামে তোলা। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নাম ব্যবহার করে মোবাইলে চাঁদাবাজি শেষে সিমগুলো ফেলে দেয়া হতো। তাদের ধরাও ছিল অনেকটাই কষ্টসাধ্য। অভিনব পন্থায় মোবাইল ফোনে চাঁদা আদায়কারী এ রকম একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ৯ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। এরা হচ্ছে- মিন্টু খান (৩৫), রাকিব খান ওরফে টিটুল (৩৪), জামাল শেখ (৪৩), রবিউল ইসলাম (৩৪), সোহেল হাওলাদার (২৬), শামিম খান (১৯), বিল্লাল খান (৩৫), মোমিন (২৮) ও রাব্বি (২৪)। শনিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ একাধিক দল রাজধানী ও মাদারীপুরের রাজৈর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। রবিবার দুপুরে কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওরা মোবাইলে চাঁদা দাবি ও চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করেছে। চক্রটির চাঁদাবাজির কৌশল সম্পর্কে র‌্যাব সিও জানান, ওরা চার স্তরে ভাগ হয়ে চাঁদাবাজি করে আসছিল। প্রথম স্তরে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজচক্রের মাঠকর্মীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারী-বেসরকারী কর্মচারী/কর্মকর্তা, চাকরে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তিদের ভিজিটিং কার্ড বিভিন্ন কৌশলে সংগ্রহ করত। পরে তা তাদের গ্রুপের তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে দিত। দ্বিতীয় স্তরে চক্রের তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রাপ্ত ভিজিটিং কার্ডে উল্লিখিত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর সংক্রান্ত কার্যক্রম ওই ব্যক্তির ঠিকানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে তার বিভিন্ন দুর্বল দিক চিহ্নিত করত। তৃতীয় স্তরে মোবাইল অপারেটিং গ্রুপ ভিজিটিং কার্ডের তথ্যাদি পর্যালোচনা শেষে ফোন করে চাঁদা দাবি করত ওরা বিভিন্ন মামলার দাগী আসামির নামে ফোন করে জেল থেকে মুক্তির জন্য ১০ লাখ, আবার কখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদাতের নাম উল্লেখ করে কখনও কাল্পনিক সন্ত্রাসী শাহীন শিকদারের নামেও চাঁদা দাবি করত ওরা পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কখনও সর্বহারা পার্টির নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতির দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করত। ভয়ভীতি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে টার্গেটকৃত ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মাকে অপহরণের ভীতিও দেখাত। আবার কখনও ওই ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওরা চাঁদা দাবি করত। এ কাজে ব্যবহৃত সিমগুলো ছিল বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন করা। চতুর্থ ধাপের কর্মীরা হত্যা ও অপহরণের ভয়ভীতি ও হুমকিতে কেউ চাঁদা দিতে সম্মত হলে বিকাশের মাধ্যমে চাঁদার টাকা তুলত, আবার কখনও সুযোগ বুঝে নগদ টাকা নিত। র‌্যাব-৪ সিও জানান, চাঁদা দাবির সময় তারা খুবই কমদামী মোবাইল ব্যবহার করত। চাঁদা আদায় শেষে ওই মোবাইল ও সিম ধ্বংস করে দিত। ফলে তাদের শনাক্ত করা ছিল কষ্টসাধ্য। প্রান্তিক পর্যায়ে ভিক্ষুক ও রিক্সা ড্রাইভারসহ সাধারণ মানুষের নামে সিম কিনে ওসব সিম দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিল চক্রটি। চক্রটি ২০০৬ থেকে এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে আসছিল। তারা অপহরণ, হত্যা ভয়ভীতি ছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা, বিভিন্ন কোম্পানি/নামীদামী প্রতিষ্ঠানের লটারি জয়ী হওয়া আবার কখনও জিনের বাদশা পরিচয়ে অর্থ আদায় করত। প্রতারকদের কেউই অন্য কোন পেশায় জড়িত ছিল না। তবু তাদের কারও কারও রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি। ওরা কেউ কেউ মাইক্রো, লেগুনার মালিক। জিজ্ঞাসাবাদে ওরা জানায়, মাদারীপুরের রাজৈর থানার লুন্দী, কৃষ্ণপুর, ইছুবপুরসহ কয়েকটি গ্রামের লোকজনের প্রধান পেশাই হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে চাঁদাবাজি। অনেকে এভাবেই অর্থ উপার্জন করে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×