ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন আড়াই হাজার পদ অনুমোদন ॥ বদলে যাবে গোটা সিভিল এভিয়েশনের চিত্র

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 নতুন আড়াই হাজার পদ অনুমোদন ॥ বদলে যাবে গোটা সিভিল এভিয়েশনের চিত্র

আজাদ সুলায়মান ॥ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুমোদন হলো সিভিল এভিয়েশনের নতুন আড়াই হাজার পদ। দেশের বিমানবন্দরগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার অন্যতম শর্ত হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এসব নতুন পদ তৈরির পর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল দীর্ঘদিন। অবশেষে গত ২৫ আগস্ট প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় এসব পদের অনুমোদন দিয়ে সেই প্রতীক্ষার অবসান ঘটানো হয়। খুব শীঘ্রই এসব শূন্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেছেন, এটা ছিল বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। অবিলম্বে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। নতুন পদগুলো পূরণ করা হলে বদলে যাবে গোটা সিভিল এভিয়েশনের প্রশাসনিক ও দাফতরিক চিত্র। গতিশীল হবে সার্বিক কার্যক্রম যা সত্যিকার অর্থেই আন্তর্জাতিক মানের একটি রেগুলেটর হিসেবে মর্যাদা পাবে। প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেছেন, অনুমোদিত পদগুলো পূরণ করা হলে মানদ- বেড়ে যাবে গোটা সিভিল এভিয়েশনের। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক জানিয়েছে, নতুন এসব পদের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রক্রিয়াটি আদৌ সহজ কোন বিষয় ছিল না। ১৯৮৫ সালে একটি বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি গঠনের পর থেকে ন্যূনতম জনবল দিয়ে কোনক্রমে কাজ চালানো হতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানটির। আইকাও-এর মানদ-ে দুনিয়াব্যাপী আকাশ চলাচল খাত রেগুলেটর ও সার্ভিস প্রভাইডার হিসেবে আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও বাংলাদেশে এখনও দুটি দায়িত্বই পালন করছে সিভিল এভিয়েশন। তার ওপর লোকবলের ঘাটতিতে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী বেবিচককে হিমশিম খেতে হয়। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের চাপ ছিল আইকাও থেকেও। কিন্তু নানা কারণে সেটি হয়ে ওঠেনি। এমনকি ২০১১ সাল থেকে নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরির উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটা ছিল খুবই ধীর গতির। বার বার তাগিদ দেয়া হলেও এক্ষেত্রে কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় মহিবুল হক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন উদ্যোমে আবার কাজ শুরু করেন। অর্থ, আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর আজকের বিশ্ব বাস্তবতায় আইকাও-এর মানদন্ড অনুযায়ী সিভিল এভিয়েশনে অর্গানোগ্রাম আপডেট করার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে সক্ষম হন। এমনই এক দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় বহুল প্রতীক্ষিত নতুন আড়াই হাজার পদ সৃষ্টির প্রস্তাবের চূড়ান্ত অনুমোদন করানো হয়। এমন এক অবিশ্বাস্য কর্মসফলতার নজির গড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে মহিবুল হক বলেন, এর কোন বিকল্প ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি আধুনিক এভিয়েশন খাত গড়তে হলে ন্যূনতম সংখ্যার এসব পদ তৈরি করাটা ছিল অনিবার্য। এখন এসব লোক নিয়োগের পর বদলে যাবে গোটা সিভিল এভিয়েশনের চিত্র। জানা গেছে, বেবিচকের সুষ্ঠু পরিচালনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ২৫০০ নতুন পদ সৃষ্টি ও ৫২২ পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। নতুন অনুমোদিত আড়াই হাজারের মধ্যে ২৪৬ পদ সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আউটসোর্সিং ভিত্তিতে বাইরে থেকে নিয়োগ করা হবে। বাকি পদ রাজস্ব খাতের অধীন পূরণ করা হবে। তবে এর সঙ্গে আরও ৫৭ পদ রাজস্ব খাতে যোগ করার সম্পূরক প্রস্তাব প্রশাসনিক উন্নয়ন ও সমন্বয় অধিশাখা অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তা অনুমোদিত হয়ে গেলেই জিও জারি করা হবে যাবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব অনুপ কুমার তালুকদার। সেটা হয়ে গেলেই বেবিচক নিজস্ব এখতিয়ারে এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু ও সম্পন্ন করতে পারবে। অর্থাৎ আগামী পনেরো দিনের মধ্যেই ইচ্ছা করলে নতুন অনুমোদিত পদগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে সিভিল এভিয়েশন। বেবিচক জানিয়েছে, বর্তমানে এখানে ৩৭৫৩ জনবলের কাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে ৫২২ পদ বিলুপ্ত করার পর নতুন পুরনো মিলিয়ে মোট জনবল হবে ৫৭৩১টি। বিদ্যমান পদের বাইরে অতিরিক্ত তিনজন সদস্য ও ১৭ পরিচালকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমানে বেবিচকে তিনটি সদস্য (প্রশাসন, অপস ও অর্থের) পদের সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও তিনটি সদস্য পদ। এগুলো হচ্ছে সদস্য এফ এস আর, সদস্য নিরাপত্তা ও সদস্য এটিএম। সদস্যদের সব পদই পূরণ করা হবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭ এর ৫(৩) ধারা অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। বাকি পদগুলো বেবিচক নিজস্ব ও একক এখতিয়ারের নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে সদস্য নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার শাহ মোঃ এমদাদুল হক ও এফএস আর সদস্য হিসেবে গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরি জিয়াউল কবির। বাকি রয়েছে শুধু এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম)। যার অধীনে থাকবে দেশের সব বিমানবন্দরের সার্বিক অপারেশনাল কার্যক্রম। গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদ মর্যাদার একজন দায়িত্ব পালন করবেন সদস্য এটিএম হিসেবে। তার অধীনেই থাকবেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন নির্বাহী পরিচালক, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য একজন করে পরিচালক। মূলত সদস্য এটিএম হবেন দেশের বিমানবন্দরগুলোর জন্য অপারেশনালের দিক থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষমতাধর। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বর্তমান পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খানই এটিএম-এর প্রথম সদস্য হওয়ার সৌভাগ্যবান কর্মকর্তা। আপাতত একাধারে তিনিই শাহজালালের নির্বাহী পরিচালক ও এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা গেছে, অনুমোদিত নতুন পদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচালক দেয়া হয়েছে এফএসআর শাখায়। এখানে পাঁচজন পরিচালক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন ১৫ জন উপপরিচালক। এ শাখায় নতুন করে ১২২ পদ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দুটি করে পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়েছে প্রশাসন, এভসেক ও সেমসু শাখায়। একজন করে পরিচালক থাকবেন ফায়ার ও অর্থ শাখায়। দুটি নির্বাহী পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়েছে যথাক্রমে শাহজালাল ও সেমসুতে। অনুমোদিত আদেশনামায় দেখা যায়, প্রকৌশল শাখায় দুজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল ও ইএম) দায়িত্ব পালন করবেন। তারা কাজ করবেন প্রধান প্রকৌশলীর অধীনে। এখানে মোট ৩৬৩ পদ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে লিফট অপারেটর, প্লাম্বার সহকারী ও হেলপার (ইএম) পদের ১২৪ পদ আউট সোর্সিং হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে। আউট সোর্সিংয়ের বাকি পদগুলো থাকবে মালি, ট্রলিম্যান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অফিস সহায়ক, বেলদার, টেলিফোন লাইনম্যান, বাবুর্চি, বেয়ারার, মেট ও সহকারী বাবুর্চির মতো চাকরিতে। এসব নতুন পদ তৈরি ও নিয়োগের পর দেশের বিমানবন্দরগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও সেবার মান বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী রবিবার জনকণ্ঠকে বলেন, বিমানবন্দরগুলো মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। আমরা আশা করছি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে নতুন পদগুলোর সরকারী আদেশ জারি করা হয়ে গেলেই শুরু হয়ে যাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। যত দ্রুত সম্ভব ধাপে ধাপে আড়াই হাজার পদের বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে বর্তমানের টানাপোড়েন অবস্থা আর থাকবে না। তখন বিমানবন্দরের সেবা বলতে যা বুঝায় জনগণ সেটাই ভোগ করবে।
×