ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ

সুমন্ত গুপ্ত ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালীদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ইলিশ খাদ্য হিসেবে ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, অসমেও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। ২০১৭-এ বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। দিনে দিনে ইলিশের চাহিদা ও উৎপাদন দুটোই বাড়ছে। মাত্র দেড় দশকের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ টনেরও বেশি। এই বছর পঁয়ষট্টি দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার কারণে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারেননি জেলেরা। গত ২৩ জুলাই থেকে অনুমতি মিললেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর থেকে ফিরে আসতে হয়েছে কয়েকবার। তবে আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। বড় সাইজের মাছে জেলেদের মুখে তাই হাসি। বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ইলিশের গতিপথ। মৌসুমজুড়ে এবার ইলিশের সরবরাহ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার সুফল পেতে শুরু করেছেন জেলেরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের নিষেধাজ্ঞার পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন ছিল। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার পুরো ৬৫ দিনই বেকার সময় পার করতে হয়েছে জেলেদের। জেলেদের দাবি ছিল ডিম দেয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ করে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আগের মতো ২২ দিন করার, যদিও শেষ পর্যন্ত তা মানা হয়নি। ইলিশ অর্থনৈতিকভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মম-লীয় মাছ। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওড় থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ কিন্তু এই মাছ বড় নদীতে ডিম দেয়। ইলিশ লবণাক্ত পানির মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশে নদীতে পারি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০ কিমি থেকে ১০০ কিমি। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা (ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ) এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভাল বলে ধরা হয়। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয় কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মতো সুস্বাদু হয় না। ইলিশ রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে উৎপাদন বাড়ছে। ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে রোলমডেল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ইলিশ। কারণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ আসে ঝকঝকে রুপালি ইলিশ থেকে। বাংলাদেশের পরই ইলিশ উৎপাদনে রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া বাকি ১০টি দেশেই ইলিশ উৎপাদন কমেছে। একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন প্রতি বছর ৯ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। সারা বিশ্বের মোট ইলিশ সম্পদের ৯৫ শতাংশই পাওয়া যায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের জলসীমায়। আর বিশ্বের মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ইলিশই মেলে বাংলাদেশে। দেশের ২১টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। পদ্মার শাখানদী মহানন্দা থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেদির হাওড়েও এ বছর ইলিশ পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশের আশার আলো হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
×